‘ আমি একা’! এই মন্তব্য করে কি সহানুভূতির তাস খেলছেন বিপ্লব?

biplab kumar deb

তাঁর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ শুধু বিরোধীদেরই নয়। তাঁকে এখন মুখ্যমন্ত্রী পদে চাইছেন না নিজের দলেরই বহু বিধায়ক। এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বিভিন্ন সভায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা করছেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করল। “ত্রিপুরায় আমার চেয়ে একা কেউ নেই”, বিপ্লবের এই উক্তির পর তাঁকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধী ও শাসক শিবিরের নেতারা।

সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিপ্লবের অপসারণের দাবি জানিয়ে এসেছেন রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক ও নেতারা। ফিরে এসে তাঁরা দাবি করেছেন, সফর সফল হয়েছে। দলের এক বিধায়কের দাবি, বিজেপির ৩৬ জন বিধায়কের মধ্যে ২৯ জনই এখন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে বিপ্লব কখনও বলছেন, “ত্রিপুরার আমার চেয়ে একা কেউ নেই,” আবার কখনও বলছেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রী থাকি আর না-থাকি, যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন রাজ্যে এবং কেন্দ্রে জনকল্যাণমুখী বিজেপি সরকারই থাকবে। ত্রিপুরায় উন্নয়নের গতিও অব্যাহত থাকবে।” বিপ্লবের এইসব ‘উদাস’ কথাবার্তার পর প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বিপ্লব নিজেও মনে করছেন, তাঁর গদি টলমল! তিনি কি টের পেয়ে গিয়েছেন, দিল্লি যে কোনও অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে! সে জন্যই কি মুখরক্ষায় আগাম এই ধরনের ভাষণ দিচ্ছেন? বিরোধী দলগুলি তো বটেই, বিজেপির বিক্ষুব্ধরাও তাই মনে করছেন। যেমন, সিপিএম নেতা পবিত্র করের বক্তব্য, তিন মাস আগে বিপ্লব দেব দাবি করেছিলেন দল এবং তিনি আজীবন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। আর এখন বলছেন তিনি না থাকলেও দল ক্ষমতায় থাকবে। আমরা আগেই বিপ্লবের ভাষণের প্রতিবাদে বলেছিলাম, স্বৈরাচারী হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। এখন তো তাঁর দলের বিধায়করাই তাঁর স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে সরব। কংগ্রেস নেতা তাপস দে বলেন, মানুষ যখন যাওয়ার আগে সকলের কাছ থেকে বিদায় নেয়, তখন এভাবেই সহানুভুতি পাওয়ার চেষ্টা করে।

প্রসঙ্গত, বিজেপির কয়েকজন নেতা-বিধায়ক দিল্লিতে গিয়ে দলের সভাপতি জে পি নড্ডা, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহর সঙ্গে দেখা করেছেন। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রণজয়কুমার দেবের নেতৃত্বাধীন আর একটি দল দেখা করেন সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহের সঙ্গে। সেখানে বিপ্লবের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয়। এর পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অজয় জাম্বোয়াল ত্রিপুরাতে আসেন। তিনি এসে সব মন্ত্রী-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তাতেও বিপ্লবের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ প্রশমিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির এক বিধায়ক রবিবার বলেছেন, আমরা সবাই দিল্লি থেকে ফিরে বলেছিলাম দিল্লি সফর সফল হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সকলের কথাই মন দিয়ে শুনেছেন। দলের স্বার্থেই আমরা সাহস করে দিল্লিতে গিয়েছিলাম। আমাদের দাবি ছিল, দলকে শক্তিশালী করতে হলে স্বৈরাচারী এবং একনায়কতন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে সরাতে হবে। বিজেপির ৩৬ বিধায়কের মধ্যে ২৯ জনই তাঁর বিরুদ্ধে। এবার দিল্লি যে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, মুখ্যমন্ত্রী সেটা বুঝে গিয়েছেন। দিল্লি ফেরত আর এক বিধায়কের ব্যাখ্যা, মানুষের সহানুভূতি কুড়োতেই এখন মুখ্যমন্ত্রী একা হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। এসব গুরুত্বহীন।

আরও পড়ুন-সীমান্ত সংঘর্ষে উত্তাল অসম-মিজোরাম, তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকল কেন্দ্র

Previous articleসীমান্ত সংঘর্ষে উত্তাল অসম-মিজোরাম, তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকল কেন্দ্র
Next articleদৈনিক আক্রান্তে নতুন রেকর্ড গড়ল কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগণা