পেঁচা কেন লক্ষ্মীর বাহন? কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোয় এই তথ্য আপনাকে জানতেই হবে

“এসো মা লক্ষী বোসো ঘরে
আমার এ ঘর রাখো আলো করে।”

হিন্দু ধর্মে পৌরানিক কাহিনী অনুযায়ী লক্ষ্মীদেবীর বাহন পেঁচা। লক্ষ্মী মানে শ্রী বা সুরুচি। তিনি সম্পদ এবং সৌন্দর্যের দেবী। বৈদিক যুগেও মহাশক্তি হিসেবে তাঁর পুজো হতো। কিন্তু একটি প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে, যিনি সর্ব ঐশ্বর্য সৌন্দর্যের রশ্মি ছটায় আলোকিত দেবী তাঁর বাহন অতিক্ষুদ্র, কুৎসিত দেখতে এমন একটি জীব কেন?

পেঁচাকে কেন লক্ষ্মীর বাহন? এই সম্পর্কে মোটামুটি তিনটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে, দুর্বাসা মুনির অভিশাপে ইন্দ্র শ্রীহীন হয়। এর ফলে সমুদ্রে বসবাস করতে শুরু করেন দেবী লক্ষ্মী। পরে অন্যান্য দেবতাদের আরাধনায় সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হন তিনি এবং বিষ্ণুর বাহুলগ্না হন। কিন্তু চঞ্চলা দেবী কোনও বাহনকে স্থায়ীভাবে নিজের দখলে রাখতে পারেননি। কুমার গুপ্তর মুদ্রায় লক্ষ্মীর পাশে দেখা যায় ময়ূরকে। আবার শশাঙ্ক মুদ্রায় লোকের পাশে হয়। নেপালে লক্ষ্মীর বাহন কচ্ছপ। কিন্তু বাঙালির পৌরাণিক মতে হাঁস নিয়েছেন সরস্বতী ও ময়ূর বাহন কার্তিকের, তাই বলা হয় বাধ্য হয়ে পেঁচাকে বাহন করেছে লক্ষী।

পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, যেমন লক্ষ্মী দেবীর বাহন পেঁচা সেরকমই গ্রিক কাহিনী অনুযায়ী পেঁচা হল এথেনার প্রতীক। তিনি লক্ষ্মী দেবীর মতো ধন-সম্পদের দেবী নন। তিনি স্বরস্বতীর মতো জ্ঞানের দেবী। এথেনার বাহন হওয়ার পিছনে যুক্তি ছিল পেঁচা অন্ধকারেও দেখতে পায়। সেটা তার দিব্যচক্ষু। সেই অন্ধকারভেদী দৃষ্টিকেই শিক্ষার আলোকে সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা অন্ধকারে আলোর দিশা দেখায়। এছাড়াও প্রাচীন মিশরের লিপিতে পেঁচার ব্যবহার দেখা যায়। আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা পেঁচাকে জলের দানবের হাত থেকে বাঁচানোর রক্ষাকর্তা বলে মনে করতেন।

আবার পেঁচক বা পেঁচা মা লক্ষ্মীর বাহন হওয়ার অন্য একটি ব্যাখ্যাও আছে। ধান হল লক্ষ্মীর প্রতীক। চাল , অন্ন , খাদ্যশস্য হল লক্ষ্মীর প্রতীক। তাই যারা খাদ্য অপচয় করেন , তাদের ওপর দেবী লক্ষ্মী কখনোই তুষ্ট হন না। ধানক্ষেতের আশেপাশে ইঁদুর বা মূষিকের বাস এবং এরা ধানের ক্ষতি করে থাকে। পেঁচক বা পেঁচার আহার হল এই ইঁদুর। গোলাঘরকে লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয়। গোলাঘরের আশেপাশে ইঁদুরের বসবাস। পেঁচা এই ইঁদুরকে খেয়ে খাদ্যশস্য রক্ষা করে।

তবে লক্ষ্মীদেবীর বাহন হিসেবে পন্ডিতদের যে মতটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তা হলো যিনি লক্ষ্মীর গুণ অর্থাৎ সত্য, প্রেম, পবিত্রতা, তপস্যা, ক্ষমা, সেবাভাব, তিতিক্ষা পেতে চান, তাঁকে পেচক-ধর্ম পালন করতে হবে। অর্থাৎ জাগতিক বস্তু থেকে একটু দুরে থেকে নির্জনে এই যোগৈশ্বর্য ও সাধন-সম্পদ রক্ষা করতে হয়। না হলে অচিরে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁচা যদি দিনের বেলায় বের হয়, অমনি অন্যান্য পাখিরা তাকে তাড়া করে। অতি গোপনে পেঁচা বাস করে। এদের সহজে দেখা যায় না।

পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত জাগতিক বিষয়রূপ ব্যক্তি দৈবসম্পদ নষ্ট করে। অপর দিকে লক্ষ্মী অর্থাৎ জাগতিক ধন, ঐশ্বর্য, মান, যশ যে পায় তাকেও পেঁচার মতো দিন-কানা হয়ে থাকতে হয়। ‘দিন-কানা’ অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে সে কোনও উন্নতি করতে পারে না। এখানে পেঁচা অন্ধকারের প্রতীক স্বরূপ। এসব কারণে হয়তো বা শাস্ত্রকারেরা পেঁচাকে লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে রেখে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন-পোড়া মাটির ঘট থেকে সপ্ততরী, বিভিন্ন রূপে ধরা দেন কোজাগরী লক্ষ্মী

Previous articleবিজেপিকে দুষে বিমল গুরুংকে স্বাগত জানাতে সভা-সমাবেশ শুরু দার্জিলিঙে
Next articleযাত্রীসংখ্যা অপর্যাপ্ত, উঠছে না জ্বালানি খরচ: সংশয়ে কলকাতা-লন্ডন বিমান পরিষেবা