রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারির পক্ষেই ঘুরিয়ে সওয়াল রাজ্যপালের

কিশোর সাহা

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল আছেন তাঁর মতোই। তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার সরব হওয়া ও বিজেপির হয়ে লাগাতার প্রচার চালানোর অভিযোগও দিন কে দিন জোরালো করছেন সমালোচকরা। কারণ, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ৩৫৬ ধারা জারি করার পক্ষেই যেন সওয়াল করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। একইসঙ্গে কিছুটা প্রছন্ন ভাবে হলেও উত্তরবঙ্গের জেলার পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদেরও কিছুটা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ্যপাল জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে যাঁরা চলছেন, তাঁরা আসাংবিধানিক কাজ করছেন। যা শোনার পরে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির সীর্ষ নেতা তথা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলে দেন, এই মহামান্য রাজ্যপালের ইস্তফা দিয়ে সরাসরি বিজেপির হয়ে আসরে নামা উচিত।

ঘটনা হল, শনিবার উত্তরবঙ্গ সফরে পৌঁছে রাজ্যপাল স্টেশনেই প্রেস কনফারেন্স করেছেন। তার পরে রবিবার সকালে শিলিগুড়িতে সার্কিট হাউস তথা স্টেট গেস্ট হাউসে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছিলেন। সূত্র অনুযায়ী, সেখানে অধিকাংশ শীর্ষকর্তাই যাননি। এর পরে দুপুরে সার্কিট হাউসে এক দীর্ঘ প্রেস কনফারেন্সে এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গে ফি হপ্তায় রাজনৈতিক সন্ত্রাস, পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের একাংশের রাজনীতিকদের কথায় ওঠবস করা সহ নানা ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিপন্ন। সে কথাই যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গত শনিবার দিল্লিতে রাজ্যপাল জানিয়ে এসেছেন সেটাও প্রায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল কী সেটা তথ্য সহযোগে দিল্লিতে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এমনকী, আগামী বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের আওতায় হওয়া উচিত কি না সেই প্রশ্নে কোনও না বাচক কোনও জবাব দেননি। বরং, যা পরিস্থিতি চলছে তা যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নয় সে কথা জানিয়ে প্রকারান্তরে ৩৫৬ ধারা জারির পক্ষেই যেন মত দিয়েছেন তিনি। এটাও রাজ্যপাল জানিয়ে দিতে ভোলেননি, তিনি একজন আইনজীবী হিসেবে প্রায় চার দশক কাজ করেছেন। সে দিক তেকে তিনি অহেতুক রাজ্য সরকারের সঙ্গে ঝগড়া করেন বলে অভিযোগ তুললে তা মেনে নেবেন না তিনি।

একজন রাজ্যপাল এক মাস ব্যাপী সফরের প্রথম দুদিনে প্রায় দু ঘ্টা প্রেস কনফারেন্স করায় তাঁকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের পর্যটনন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি জানান, দায়িত্বভার নেওয়ার পর থেকে যে হারে এই রাজ্যপাল প্রেস কনফারেন্স করেছেন, তাতে সেই নিরিখে তাঁর নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠা উচিত। গৌতমবাবু জানান, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সহ যাবতীয় বিষয়ে কোনও বক্তব্য থাকলে তা রাজ্যপালের এভাবে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে রাজ্য সরকারের কাছে জানিয়ে দেওয়া উচিত। অথচ, দুমদাম প্রেস কনফানেস্ করে রাজ্যের সমালোচনা করে কার্যত বিজেপির জয়ধ্বনি তোলাটা কখনও মেনে নিতে পারবেন না বাংলার মানুষ। গৌতমবাবুর বক্তব্য, রাজ্যপাল ইস্তফা দিয়ে সরাসরি বিজেপি কর্মী হিসেবে আসরে নামুন তা হলে মোকাবিলা করতে সকলেরই সুবিধে হবে।

বস্তুত, রাজ্যপাল নিজেও মানছেন তিনি প্রতি পদে রাজ্যের খুঁত ধরে চলেছেন। রাজ্যপাল এদিন জানান, রাজ্যে যা ঘটছে তা নিয়ে মতামত দেওয়াটা তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তিনি দাবি করেন, তাঁকে রবার স্ট্যাম্প অথবা পোস্ট অফিসের মতো ব্যবহার করার কোনও সুযোগ তিনি কাউকে দেবেন না। তৃণমূলের আইনজীবী সেলের প্রবীণ নেতা তথা কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের এক সিনিয়র আইনজীবী জানান, যে কোনও আইনজীবী আদালতে মূলত মক্কেলের হয়েই সওয়াল করেন। এ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল কার হয়ে সওয়াল করছেন তা পাহাড়-সমতলের সকলেই বুঝতে পারছেন বলে তিনি দাবি করেন।

বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের অনেক নেতাই রাজ্যপালের এ হেন ঘনঘন প্রেস কনফারেন্স দেখে স্তম্ভিত। কয়েকজন বাম নেতা জানান, অতীতে গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও বাম সরকারের সমালোচনা করলেও এবাবে রোজ ঘটা করে প্রেস কনফারেন্স ডেকে রাজ্যের শাসক দলকে তুলোধোনা করেননি। পর্য়টন মন্ত্রী গৌতম দেব তো বলেছেন, এমন রাজ্যপাল তিনি তাঁর দীর্ঘ ৫ দশকের রাজনৈতিক জীবনে দেখেননি।

আজ রাজ্যপাল শিলিগুড়ি থাকার কথা। এর পরে তিনি পাহাড়ে যাবেন। সেখানেও প্রেস কনফারেৈন্স করবেন বলে জানতে পেরেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম। ফলে, আগামী আরও ২৮ দিন ধরে রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গে থাকাকালীন মোট ২৮টি প্রেস কনফারেন্স হয় কি না সেটাই দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন:লোকাল ট্রেন চালাতে কাল নবান্নয় রেল-রাজ্য বৈঠক

Previous articleমহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনার তুরুপের তাস উর্মিলা মাতণ্ডকর
Next articleসীমান্তে স্থিতাবস্থা ফেরাতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রতি চিনকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে : এস জয়শঙ্কর