মিহিরের ফেসবুক পোস্টে কি বিচ্ছিন্নতার সুর? আলাদা উত্তরবঙ্গের দাবিদাররা সক্রিয়

কিশোর সাহা

তৃণমূলের অন্দরে বিক্ষুব্ধ হিসেবে ইদানীং পরিচিতি পাওয়া কোচবিহার দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামীর মুখে কি বিচ্ছিন্নতার সুর? কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের নেতাদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে উত্তরবঙ্গের জন্য স্বাধিকারের দাবি করতে আসরে নেমে পড়েছেন তিনি। তাতেই উল্লসিত হয়ে কামতাপুর রাজ্যের দাবিদারদের একজন মিহিরকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করেছেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি ত্রিপুরা ছোট্ট আলাদা রাজ্য হতে পারলে কেন উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য হবে না সেই প্রশ্ন তুলে মিহিরবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এই নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে তো বটেই, পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যেও অস্বস্তি ও উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ, আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার দশক অতিক্রান্ত হতেই সেই দাবিতে সরব হয়েছিলেন একাধিক সংগঠন। তা নিয়ে ব্যাপক পুলিশ ধরপাকড় হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। কিন্তু, আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি, গ্রেটার কোচবিহারের দাবি, কামতাপুরের দাবি নিয়ে সংঘর্ষ, জঙ্গি আন্দোলন কম হয়নি। কেএলও-র ফেরার নেতা জীবন সিং কিংবা বর্তমানে তৃণমনূলের সমর্থনকারী।

বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে আলাদা রাজ্যের দাবিতে বনধ, অগ্নিকাণ্ড, গুলি-বোমার লড়াই কম হয়নি। এবার তৃণমূলের বিধায়ক মিহিরবাবুর ফেসবুক পোস্টের জেরে আলাদা উত্তরবঙ্গের দাবিতে বেশ কিছু লোকজনের হইহই করে সমর্থনের ফলেই পুলিশ-প্রশাসন ও শাসক দলের মধ্যে উদ্বেগ ও অস্বস্তি বেড়েছে বলে সূত্রের খবর।

শুক্রবার, ফেসবুক পোস্টে কী লিখেছেন গোস্বামী। তিনি লিখেছেন, “দিনহাটা থেকে দিনাজপুর, প্রান্তিক উত্তরবাংলার প্রতি কলকাতার বঞ্চনা-অবহেলার তালিকা যে সুদীর্ঘ ও সুপ্রাচীন তা নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু গত সত্তর বছরের প্রজাতান্ত্রিক বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও উত্তরবঙ্গকে যে আগাগোড়া অবহেলার চোখে দেখা হয়ে এসেছে সে কথা বোধহয় আজ জোর গলায় বলার সময় এসেছে। এই হেলাফেলা বঞ্চনার প্রতিবাদে এক আধবার সোচ্চার হয়ে উঠবার চেষ্টা করেছিলেন উত্তরের নেতারা। কিন্তু কলকাতা কেন্দ্রিক নেতৃত্ব সেইসব প্রতিবাদকে নানাভাবে চেপে দিয়েছে। …..উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও তাদেরকে কখনই সামনের সারিতে বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় আসতে দেওয়া হয় নি। মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত বিদর্ভও উত্তরবঙ্গের মত তুলনায় পিছিয়ে পড়া একটি অঞ্চল। সেই বিদর্ভ থেকে আমরা দেখেছি একবার নয় চারবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে। অথচ উত্তরবঙ্গ থেকে আমরা কি একজন উপমুখ্যমন্ত্রীও কল্পনা করতে পেরেছি কোনোদিন?… ছুটি কাটাতে এসে উত্তরের প্রতি ভালোবাসা উথলে ওঠে ঠিকই, কিন্তু দলীয় পর্যবেক্ষক হওয়ার ক্ষমতা কেবল কলকাতা তথা দক্ষিণের নেতাদেরই থাকে। উত্তরের নেতারা দক্ষিণে পর্যবেক্ষক হয়ে গিয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত কই? এই সব পর্যবেক্ষকদের ভূমিকাই ছিল উত্তরের নেতাদের মধ্যে ক্রমাগত বিভাজন ও দূরত্ব সৃষ্টি করে যাওয়া। তার কুফল এখনো ভোগ করছেন উত্তরে কং ও বাম সংগঠন, তেমনই বর্তমান শাসকদলকেও অদূর ভবিষ্যতে তার পরিণাম ভুগতে হবে বৈ কি… আমি কেবল একটাই কথা বলব, উত্তর বাংলার রাজনৈতিক ময়দানে যতদিন কলকাতার নিয়ন্ত্রণ বা অবহেলা জারি থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবে এই অভ্যন্তরীণ বিভেদ। ততদিন পিছিয়ে থাকা উত্তরের কোনো প্রকৃত উন্নয়ন আদৌ সম্ভব নয়। যা হয়েছে বা যা হচ্ছে তার বেশির ভাগটাই লোক দেখানো।”

বস্তুত, মিহিরবাবু গত এক মাস ধরেই তৃণমূলের মূল স্রোত থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। কদিন আগে তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমানে বিজেপির সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক দেখা করেন। তার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কিংবা প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন চেষ্টা করেও মিহিরবাবুর দেখা পাননি। মিহিরবাবু নিয়মিত ফেসবুকে দলের কোচবিহার জেলার নেতাদের একাংশের মানসিকতার কড়া সমালোচনা করেছেন। সরাসরি পিকের টিমের সমালোচনাও করেছেন তিনি।এবার মিহিরবাবুকে ঘিরে আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্যের স্বপ্নের দাবিদারদের একাংশ সক্রিয় হয়েছেন। ঘটনাচক্রে, বিজেপি ছোট রাজ্যের পক্ষপাতী। তাই মিহিরবাবু বিজেপির দিকে ঝুঁকে ধীরে ধীরে লক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করবেন কি না সেটা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন:রাজ্যে বিজেপি এলে তৎপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে সুরক্ষিত হবে, সীমান্ত : শাহ

Previous articleদুই থেকে তিন হচ্ছেন পর্দার ওম-তোড়া, মা হতে চলেছেন মধুবনী
Next articleকরোনা থেকে বাঁচতে ডেনমার্কে ১.৫ কোটি মিঙ্ক হত্যার সিদ্ধান্ত সরকারের