সাড়ে চার বছর সরকারি সুবিধাভোগী মিহির এখন বিপ্লবী সাজছেন! কটাক্ষ কোচবিহারবাসীর

প্রায় ৫ বছর তৃণমূল বিধায়ক হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধে নিয়েছেন। এবার বিধানসভা ভোটের মুখে ঝোপ বুছে কোপ। দল ছাড়ার হুমকি দিলেন কোচবিহার দক্ষিণের এমএলএ মিহির গোস্বামী।

সোমবার কোচবিহারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি প্রকারান্তরে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেন। তবে এখানেও ঘোর সুবিধাবাদী তিনি। এখনই বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না। বিধায়কের কাজ করে যেতে চান। এই ঘোষণা শোনার পর কোচবিহার রাজনৈতিক মহলের কয়েকজন নেতার কটাক্ষের বক্তব্য, সাড়ে ৪ বছর ক্ষীর খাওয়ার পরে ভোটের মুখে বিপ্লবী সাজার চেষ্টা, জল মাপার চেষ্টা।

মিহিরবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি বরাবরই কলকাতার নেতাদের একাংশের রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করেছেন। সে জন্যই নাকি তৃণমূলের কলকাতার নেতাদের একাংশ তাঁকে দেখতে পারেন না। কলকাতায় আরাম কেদারায় বসে তাঁরা নাকি রটিয়ে দিয়েছেন, মিহির গোস্বামী ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভোটে জেতেন। এ সব অভিযোগ করে মিহিরবাবু জানান, তিনি এখনই কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন না। তবে বিজেপির দিকে যে পা বাড়িয়ে রয়েছেন, সেটা তাঁর অমিত শাহ প্রেমেই বোঝা গিয়েছে।

বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? উত্তরে মিহিরবাবু জানিয়ে দেন, দিল্লি থেকে অমিত শাহের ডাক পেলে নিশ্চয়ই যাওয়ার কথা ভাববেন। তা হলে কী কলকাতার নেতা হওয়ার চেয়ে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতা হতে চাইছেন মিহিরবাবু? সেই প্রশ্ন এখন কোচবিহারে ভাসছে।

কিছুদিন আগে মিহিরবাবুকে বিধায়ক পদ ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৃণমূলের কোচবিহারের নেতা আবদুল জলিল আহমেদ। সেই প্রসঙ্গে মিহিরবাবু জানান, অপ্রাসঙ্গিক কারও সম্পর্কে আমি কিছু বলতে না। তবে তাঁর কটাক্ষ, কোচবিহারের কোন নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলে লোভনীয় পদ হাসিল করেছিলেন তা সকলেই জানেন। এদিন মিহিরবাবু বিজেপির কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের প্রশংসা করেন। তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের উন্নতিও প্রার্থনা করেন। বিজেপি সূত্র অনুযায়ী, নিশীথবাবু সাংসদ হওয়ার পরেও কোচবিহার জেলা কমিটিতে আদি বিজেপিদের কাছে তেমন গুরুত্ব পাননি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা দূরের কথা, বড় কোনও কমিটি কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার পরিচালন কমিটিরও দায়িত্বও পাননি। সবেতেই আদি ও নব্য বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব বলে অভিযোগ দলের একাংশের। শুধু তাই নয়, তৃণমূল সহ নানা দল থেকে বিজেপিতে সামিল হওয়া একাংশকে আদি বিজেপি তথা আরএসএসের ঘনিষ্ঠরা কেমন কোণঠাসা করে রাখছে সে খবরও মিহিরবাবুর কাছে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন:কাল কি ঝাড়খণ্ডের পথেই হাঁটবে বিহার?

এই অবস্থায়, বিজেপিতে গিয়ে আদি বিজেপিদের কাছে কোণঠাসা হয়ে বাকি রাজনৈতিক জীবন কাটানোর ঝুঁকি যে মিহিরবাবু নিতে চান না তা তাঁর কাছের কয়েকজন কর্মী স্পষ্ট করেছেন। তাই বিধায়ক পদ না ছেড়ে নিজের ওজন বুঝে নিতে (মিহিরবাবুর ভাষায় প্রাসঙ্গিকতা বোঝাতে) ও রাজনৈতিক দর কষাকষির রাস্তা মসৃণ রাখতেই মিহিরবাবু জল মাপছেন। উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক মহল তাই বলছে, সরাসরি তৃণমূল ছাড়লাম এই কারণেই বলেননি মিহিরবাবু। তিনি বিজেপিতে যাচ্ছি, সেটাও বলেননি। শীর্ষ নেতৃত্ব একবার ডেকে তাঁর সঙ্গে কথা বললেই তিনি তৃণমূলেও থেকে যেতে পারেন। কিংবা বিজেপিতের গেরুয়া বসন গায়ে মাখতে পারেন।

Previous articleবাড়ি তল্লাশির পর অভিনেতা অর্জুন রামপাল ও তাঁর বান্ধবীকে তলব নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর
Next articleকোভিড পজিটিভ গরু পাচার চক্রের এনামুল, ১৪ দিন পর হাজিরার নির্দেশ সিবিআইয়ের