মোদি, মহিলা ও মুসলিম! বিহারে ৩ ‘ম’ অংকে বাজিমাত এনডিএর

অমিত কুমার দাস: সমস্ত এক্সিট পোল চূড়ান্ত ব্যর্থ। বিরোধীদের সমস্ত আশায় জল ঢেলে আরও একবার নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ রাজ বহাল থাকছে বিহারে। আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাজোট জোর টক্কর দিলেও ‘মোদি ম্যাজিকে’এ মাতোয়ারা বিহারবাসী। ইতিমধ্যেই সর্ববৃহৎ দল হিসেবে বিহারে সরকার করার দাবি জানিয়েছে এনডিএ। তবে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই এনডিএর এই জয়ের নায়ক বিজেপি। ২৪৩ শাসনের বিহার বিধানসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তাদের প্রাপ্ত আসন ৭৪। যা সর্ববৃহৎ দল আরজেডি থেকে মাত্র একটি আসন কম। তবে ইনডিএর এই অপ্রত্যাশিত জয়ের পিছনে উঠে আসছে ৩ ‘ম’ তত্ত্ব। যা নিশ্চিত হারের মুখ থেকে একেবারে জয়ের শিখরে তুলে দিয়েছে মোদি-নীতীশকে।

বিহার নির্বাচনের একেবারে গোড়া থেকে বিশ্লেষণ করলে এনডিএর জয়ের পিছনে যে ৩ কারণ উঠে আসে তা হল, ১. মোদি… ২. মুসলিম… ৩. মহিলা ভোটার…।
১. মোদি ক্যারিশ্মা
বিহারের রাজনৈতিক অংক হিসাব করলে দেখা যাবে সাম্প্রতিক একাধিক পরিস্থিতিতে বিহারবাসী রীতিমতো ক্ষুব্ধ ছিল নীতীশ কুমারের উপর। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, কাজের সুযোগ কমে যাওয়া, ঠিক ভোটের আগে লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের চরম দুর্ভোগে সহ নানান ইস্যু। তবে আপন ক্যারিশমায় নীতীশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন খোদ মোদি। নির্বাচনের ঠিক আগে বিহার জুড়ে একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধন করে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ভোট প্রচারেও কোনও খামতি রাখেননি তিনি। যার জেরেই ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। বিহার জুড়ে এক ডজনেরও বেশি সভা করে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। একাধিক জনসভায় নীতীশ কুমারের সঙ্গেও দেখা গিয়েছে তাকে। নীতীশ কুমারের ঢালাও প্রশংসা করার পাশাপাশি মানুষজনের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন নীতীশ সরকারেরই প্রয়োজন বিহারে। দেশ ভক্তি ইস্যুতে বিপক্ষের উপর হামলা বিহার বাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আরজেডির আমলে ‘জঙ্গলরাজ’এর কথা। লালু প্রসাদ যাদবের দুর্নীতি। আর এই সমস্ত বিষয়গুলি হার ও জিৎ এর মাঝে গড়ে দিয়েছে বিপুল ফারাক। ফল মিলেছে হাতেনাতে যেখানে জেডিইউ আসন সংখ্যা হুড়মুড়িয়ে কমেছে সেখানেই ব্যাপকভাবে বেড়েছে বিজেপির আসন। ফল বিহারে ফের এনডিএ সরকার।

২. মহিলাদের বিপুল সমর্থন এনডিএকে
বিহার নির্বাচনে এবার অন্যতম বড় ভূমিকা নিয়েছেন সে রাজ্যের মহিলা ভোটাররা। বিহারে মহিলা ভোটাররা বরাবরই নীতীশ কুমারকে ভরিয়ে দিয়েছেন আশীর্বাদে। মনে করা হয় নিরবে নীতীশকেই সমর্থন দিয়ে যান বিহারের মহিলারা। এবার অবশ্য নীতীশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনা, শৌচালয়, পাকা বাড়ি, বিনামূল্যে রেশন, মহিলাদের আর্থিক সাহায্যের মতো একাধিক প্রকল্পের কারণে মহিলাদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে এনডিএ জোট। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফে মদ বাতিলের যে পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাতে উপকৃত হন বিহারের মহিলারা। এর প্রভাবও পড়েছে ভোট বাক্সে। জানা যাচ্ছে নীতীশ কুমারের প্রাপ্ত ভোটের ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট মহিলাদের থেকে পাওয়া। এ কথা স্বীকার করে নিতে ভোলেননি খোদ প্রধানমন্ত্রীও। বিহারের ফল প্রকাশের পর মহিলাদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন ‘বিহারে আমার মা ও বোনেরা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন আত্মনির্ভর বিহারে ওনাদের ভূমিকা কতখানি বড়।’

আরও পড়ুন:ফের শোচনীয় ব্যর্থ কংগ্রেস, তেজস্বীকে ডুবিয়েছে সোনিয়া- রাহুলের দল

৩. মুসলিম ভোটের বিভাজন
অংকের হিসাব করলে বিহার রাজ্যে মুসলিম ভোটার সংখ্যা ১৭ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখে না এই সংখ্যাটা বিহারে সরকার গড়ার জন্য জয়-পরাজয়ের মাঝে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে অনেকটাই। কিন্তু এইবার এই মুসলিম ভোটার আলাদা আলাদা ভাবে ভাগ হয়ে যেতে দেখা গেছে। যার পরিপূর্ণ লাভ পেয়েছে এনডিএ। বিহার নির্বাচনের এবার মুসলিম ভোটারদের কাছে একাধিক পছন্দের জায়গা ছিল। একদিকে যেখানে আরজেডির সমর্থনে মহাজোট লড়াই করছে সেখানেই বিহারে এআইএমআইএম বড় জয় হাসিল করেছে। ৫ টি আসনে জয়লাভ করেছে তারা। মুসলিম ভোট ভাগ হয়েছে কংগ্রেস ও বিএসপিতেও। ফলে ১৭ শতাংশের এই অংক একাধিক জায়গায় ভাগ হওয়ার ফলে আখের বড় লাভ পেয়েছে এনডিএ জোট।

Previous articleমাদক মামলার আসামীর সাজা : বৃক্ষ রোপণ, বাবা-মায়ের সেবা
Next articleলোকাল ট্রেনের যাত্রা শুরু: কড়া চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় রেল-রাজ্য