‘করোনাসুর’ বধ করতে দেশে হাজির রাশিয়ার ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি

বঙ্গে চলতি বছর দুর্গাপুজোয় একটি শব্দের ব্যাপক প্রচলন হয়েছিল, তা হল ‘করোনাসুর’। এবার ‘করোনাসুর’ বধ করেত দেশে চলে এসেছে পুতিনের দেশের ভ্যাকসিন। ভারতে পৌঁছল ‘স্পুটনিক ভি’। এই ভ্যাকসিন কোভিড প্রতিরোধে ৯২ শতাংশ কার্যকরী, এমনটাই দাবি করেছে রাশিয়া। গোটা পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও নিয়ন্ত্রনের বাইরে।

শীঘ্রই হায়দরাবাদে ভারতীয় সংস্থা ডঃ রেড্ডিস-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু হবে ‘স্পুটনিক ভি’-এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল। আগেই এই নিয়ে ডক্টর রেড্ডির সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। বিশ্বের প্রথম করোনা প্রতিষেধক হিসাবে ‘স্পুটনিক ভি’ বাজারে এনে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল রাশিয়া। খোদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেই ভ্যাকসিনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এমনকী রাশিয়াতেই প্রথম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

ভারতে ইতিমধ্যেই একাধিক মারণ ভাইরাসের টিকার ট্রায়াল শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাজারে আসেনি একটাও। সেরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষে দাবি করা হয়েছে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই ভারতের হাতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন চলে আসবে। জানা গিয়েছে, ভারতে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের থার্ড ওয়েভ।

অন্যদিকে কোভিড প্রতিরোধে কাজ করছে ‘কোভিশিল্ড’। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিন কার্যত সফল। অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। অন্তত দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলাকালীন রিপোর্টে এমনটাই জানা যাচ্ছে। ফলে কেন্দ্রও চাইছে, চলতি বছরের শেষে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এই টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হোক। সেই মতো ৪ কোটি ডোজও তৈরি করে ফেলেছে সেরাম।

তবে, সম্পূর্ণরূপে ‘কোভিশিল্ড’ বাজারে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। তার আগে হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনও সমস্যার কারণে অতি-বয়স্কদের মধ্যে যাঁদের শারীরিক জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনা প্রকট, তাঁদের ডিসেম্বর মাসেই টিকা প্রদানের কাজ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে আইসিএমআর। এখন শুধু ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) অনুমোদনের অপেক্ষা। এ ব্যাপারে তারা অন্তবর্তীকালীন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গিয়েছে।

সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা। ভারতে আইসিএমআরের তত্ত্বাবধানে ‘কোভিশিল্ড’-এর ফেজ টু এবং থ্রি’র হিউম্যান ট্রায়াল করেছে। এর জন্য ১৫টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে বেছে নেওয়া হয়। ট্রায়ালের অন্যতম পর্ব হিসেবে তাঁদের দেহে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজও সম্পূর্ণ। তার প্রাথমিক রিপোর্ট অত্যন্ত ইতিবাচক বলে সূত্রের খবর। এখন চলছে অন্তর্বর্তীকালীন বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা। অর্থাৎ ভ্যাকসিন দেওয়ার পর তাঁদের শরীরে কী কী প্রভাব পড়ল, তা দেখা হচ্ছে। পর্যালোচনায় যদি দেখা যায়, করোনা রোধে ‘কোভিশিল্ড’ ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কার্যকরী, তা হলেই ‘ইমার্জেন্সি ইউজ’ হিসেবে অতি-বয়স্কদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বছর শেষেই এই টিকা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইসিএমআরের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজেস বিভাগের প্রধান ডাঃ সমীরণ পান্ডা।

কোভিড মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে তিনটি প্রতিষেধক নিয়ে ঝাঁপিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। একটি, অক্সফোর্ডের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সেরামের ‘কোভিশিল্ড’। অন্যটি আইসিএমআরের গবেষণালব্ধ ‘কোভ্যাকসিন’। এটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রতিষেধক। তৈরি করছে ভারত বায়োটেক। এই দু’য়ের পাশাপাশি আশা জোগাচ্ছে ‘কোভোভ্যাকস’ নামে করোনার আরও একটি ভ্যাকসিনও। খুব শীঘ্রই ভারতে এই টিকার ফেজ থ্রি’র ট্রায়াল শুরু হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন আইসিএমআরের বিজ্ঞানী তথা মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ডাঃ লোকেশ শর্মা। আমেরিকার ‘নোভাভ্যাকস’ সংস্থা করোনার যে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, ভারত সেটিই ‘কোভোভ্যাকস’ নামে প্রস্তুত করবে সেরাম। তত্ত্বাবধানে আইসিএমআর। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রিটেনে ওই ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। এই ট্রায়াল শীঘ্রই আমেরিকাতেও তা শুরু হবে।

আরও পড়ুন-‘রাহুল গান্ধীর ভাবনাচিন্তা এখনও যেন পরিনত হয়নি’, স্মৃতিচারণায় বারাক ওবামা

Previous articleসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আসছে ‘আবোল-তাবোল’
Next articleরেট্রো লুকে টিম ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় কপিল আমলের জার্সি ফিরছে বিরাটদের জন্য