শ্রদ্ধা জানানোর নামে সৌমিত্রর বাড়িতে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য অধীরের, নীরবতায় প্রশ্রয় পৌলমীর

দীর্ঘ রোগ ভোগের পর গত ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া। শুধু চলচ্চিত্র জগৎ কেন, এমন এক রত্নকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা বাংলা। সৌমিত্রবাবু চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর কৃষ্টি-সংস্কৃতি-শিল্প। যা সোনালী ইতিহাস হয়ে থাকবে বাঙালি জীবনে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়েরও রাজনৈতিক কিছু মতাদর্শ ছিল। তিনি আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। খুব স্বাভাবিকভাবে তাঁর এবং তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্তদের জীবন চর্চায় রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, অনেকেই সেই রাজনৈতিক চর্চার অপব্যাখ্যা করেন। এবং সেটা ক্ষেত্র বিশেষে। কিছু ক্ষেত্রে পছন্দ। কিছু ক্ষেত্রে নয়। কিছু ক্ষেত্রে বিপ্লব, কিছু ক্ষেত্রে নীরব দর্শক। এঁদের মধ্যে কেউ যদি আবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কেউ হন, সেটি তো আরও দুর্ভাগ্যজনক!

এই প্রসঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা পৌলমী বোসের কথা। দীর্ঘ ৪০দিন হাসপাতালে যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অভিনেতা, তখন সৌমিত্রবাবুকে সবচেয়ে কাছ থেকে যদি কেউ শক্তি জুগিয়ে থাকেন, তিনি অব্যশই পৌলমী বোস। সদ্য প্রয়াত বাবার তিনি শোকাহত। শোকের ছায়া থেকে এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। কারণ, পৌলমীদেবী শুধু কন্যা ছিলেন না, তিনি ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, সহকর্মী।

খুব স্বভাবিকভাবে এই কঠিন সময়ে পিতার প্রয়াণে শোকপালন করছেন তিনি। সেইসময় অন্যদিকে, পৌলমী বোসকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা। বিশেষ করে শাসক দলের টিকিটে যাদবপুর কেন্দ্রে সৌমিত্রকন্যার ভোটে দাঁড়ানোর জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। কিছু অযাচিত-অপ্রয়োজনীয় শব্দ প্রয়োগে যার তীব্র বিরোধিতা বা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে পৌলমী। এবং সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায়। পিতার মৃত্যুর সপ্তাহ ঘোরার আগেই এমন রাজনৈতিক চর্চা তাঁর একেবারেই পছন্দ নয়। এখন শোক পালনের সময়।

কিন্তু এমন চর্চার বিরোধিতা কি শুধু ক্ষেত্র বিশেষে? প্রশ্ন উঠছে পৌলমীদেবী! কারণ, প্রশ্নটা আপনি-ই উস্কে দিয়েছেন। এর পিছনে অন্য কোনও রাজনীতি নেই তো? অনেকের মনে কিন্তু আপনাকে নিয়ে এমন ভাবনাও শুরু হয়েছে।

কেন? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের আজ চারদিন। এদিন প্রয়াত অভিনেতার গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবার ও তাঁর কন্যা পৌলমীর সঙ্গে দেখা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অভিনেতার বাড়িতে শোকবার্তা জানাতে অধীরের এটা কোনও আকস্মিক যাত্রা নয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে, সৌমিত্রবাবুর পরিবারের লোককে জানিয়ে এদিন সকালে তাঁর গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।

এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে অধীর চৌধুরী কী বললেন? যা বললেন তার পুরোটাই রাজনৈতিক বক্তব্য। অধীর সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন, “২০১১ সালের পর থেকে যথাযথ সম্মান দেননি রাজ্য সরকার। বেঁচে থাকতে মর্যাদা পেলেন না, মরদেহ নিয়ে রাজনীতি হল। ছোটখাট শিল্পীদের সম্মান দেওয়া হলেও ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো একজন বড় মাপের শিল্পীকে কখনও এই সরকার কোনও সম্মান দেওয়া হয়নি। সৌমিত্রকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”

অধীর চৌধুরীর বক্তব্য ঠিক হোক কিংবা ভুল। সমর্থনযোগ্য হোক কিংবা অসমর্থনযোগ্য। প্রয়াত অভিনেতা বাড়িতে এসে প্রদেশ সভাপতির এই মন্তব্য যে পুরোটাই রাজনৈতিক এবং বিতর্কিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মাত্র চারদিন হয়েছে। পরলোক গমন করেছেন কিংবদন্তি অভিনেতা। এখন শোক পালনের সময়। কিন্তু অভিনেতার সদ্য প্রয়াণের তাঁরই বাড়িতে দাঁড়িয়েই তাঁরই মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এমন বক্তব্য কি সমর্থন যোগ্য?

অধীরের মন্তব্য নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলে পৌলমী বোস বলেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত রকমভাবে আমাদের সাহায্যও করেছেন, পাশে থাকার অশ্বাস দিয়েছেন। এসব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতেই চাই না।”

শুধু এটুকুই বলবেন পৌলমী বোস? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। অধীর চৌধুরী আপনার বাড়ির অতিথি বলেই কি আপনার প্রিয় বাবার মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে কি রাজনীতি করা যায়? রাজনৈতিক বক্তব্য রাখা যায়? অধীরবাবুর পুরো বক্তব্য তো আপনি জানেন, এভাবে নীরবে প্রশ্রয় দিলেন? প্রতিবাদ করলেন না তো? নাকি আপনার প্রতিবাদ ক্ষেত্রবিশেষে??????

সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র…! পৌলোমীদেবী, আপনার প্রতিবাদের দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু নীরবে এমনটাই বলছে!!!

আরও পড়ুন-পৌলমী, আপনাকে সম্মান করি, অকারণ রাগছেন কেন? অভিজিৎ ঘোষের কলম

Previous articleবঙ্গবাসী আর শীতের মাঝে বাধা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা
Next articleকাশ্মীর ইস্যুতে তৎপর, ভারতকে কোণঠাসা করতে বাইডেনকে পাশে চান ইমরান