একদিকে উত্তরবঙ্গের তৃণমূলের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ। আর ঘোলা জলে মাছ ধরতে “ত্রিপুরা স্টাইলে” উত্তরবঙ্গ-বিজয়ের লক্ষ্যে নেমে পছে বিজেপির আইটি সেল। সে জন্য শিলিগুড়িতে দুটি পার্টি অফিস ছাড়াও শহরেই আরও চারটি ভবন ভাড়া নেওয়া, ২০০ কম্পিউটার কেনা, ২৪ ঘণ্টা দলীয় কল সেন্টার চালানো হবে বিজেপির একাংশের মতে, সব মিলিয়ে ফি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হবে শুধু আইটি সেলের কাজেই।

বিজেপি সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহ ধরে লাগাতার মুখোমুখি ও ভিডিও বৈঠক করে উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার আইটি সেলকে ত্রিপুরা মডেলে অপারেশন আদতে কী সেটা বুঝিয়েছে দলের আইটি সেল। এরপরেই ২৩ নভেম্বর, সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গে কাজে নেমে পড়েছেন বিজেপির আইটি সেলের উত্তরবঙ্গের নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন : কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাঁওতা বুঝে গিয়েছে বাঁকুড়া: মমতা

বিজেপির উত্তরবঙ্গের এক শীর্ষ নেতা জানান, তাঁরা গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের ৭টি আসনে যে ভোট পেয়েছেন তা ধরে রাখার লক্ষ্যেই আইটি সেল কোমর বেঁধে নেমেছে। দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপির প্রদেশ ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরামর্শ মেনে শুধু শিলিগুড়িতেই ৪টি দোতলা অথবা তিনতলা বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ির পাঞ্জাবীপাড়ায় একটি বড় বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে রাজ্য ও নানা এলাকার নেতাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও তিনটি ভবন শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি পাড়ার মধ্যে নেওয়ার প্রক্রিয়াও পাকা।

সূত্র অনুযায়ী, ওই তিনটি বাড়ির মধ্যে একটি শুধুমাত্র মিটিং করার জন্য ব্যবহার হবে। বাকি দুটিতে বিজেপির দলীয় কল সেন্টার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। একেকটি কল সেন্টারে অন্তত ৪০টি কম্পিউটার নিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যায়ক্রমে ৩০০ জন প্রশিক্ষিত সদস্য-সদস্যাকে দিয়ে লাগাতার প্রচার চালাবে বিজেপির আইটি সেল।

এ ছাড়াও বিজেপির শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের পার্টি অফিসে ইতিমধ্যেই ওয়াইফাই জোন করা হয়েছে। দার্জিলিং মোড়ের কাছে দ্বিতীয় পার্টি অফিস তৈরির কাজ দ্রুত শেষের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বিজেপি। সেখানেও আইটি সেলের জন্য পৃথক বন্দোবস্ত হয়েছে। যেখানে বসে আইটি সেলের পক্ষ থেকে গোটা উত্তরবঙ্গের জেলা থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত কর্মীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা তাদের কল সেন্টারে পাঠানো হবে। কল সেন্টার থেকে আইটি সেল সেই সব তথ্য খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট এলাকার সম্ভাব্য ভোটারদের মোবাইলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে বলে বিজেপি সূত্রটি জানিয়েছে।

বিজেপির আইটি সেল যখন সেই সব আসনে পাওয়া ভোট ধরে রাখতে কোমর বেঁধে নেমেছে, চারটি ভবন ৬ মাসের জন্য ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ যা টাকা লাগে দেওয়া হবে বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করছে, সেই সময়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের নেতাদের একাংশ দলের কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। যেমন, কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী বা সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ারা পিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তেমনই, সোমবার জলপাইগুড়ির তৃণমূল এক যুগ্ম সম্পাদক পিকের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের এক নেতা জানান, শিলিগুড়িতে বৈঠকের পরে দলের নেতাদের একাংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছুদিন তৎপর থাকলেও এখন অনেকেই কিছুটা ঝিমিয়ে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন : দুয়ারে দুয়ারে সরকার: নয়া প্রকল্পের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

বিজেপির উত্তরবঙ্গের এক নেতা জানান, ত্রিপুরায় ভোটের ৬ মাস আগে দলের আইটি সেল মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সেখানকার ভোটারদের কাছে নানা ধরনের বার্তা পাঠিয়ে, মতামত আদানপ্রদানের কাজ করে সাফল্য পেয়েছিল। সেই পথে হাঁটলে উত্তরবঙ্গে গত লোকসভা ভোটে যে ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে তা ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে বিজেপির ওই নেতা আশাবাদী।
