তৃণমূল আগেই ঘোষণা করেছে আগামী ৭ ডিসেম্বর শুভেন্দু অধিকারীর ‘গড়’ মেদিনীপুরে সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এই সমাবেশ নিয়ে তৈরি হচ্ছেন মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও৷

এদিকে, তৃণমূলের উপর ‘চাপ বাড়াতে’ মমতার প্রকাশ্য সমাবেশের ঠিক আগের দিন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জনসমক্ষে প্রথমবার মুখ খুলবেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনই দাবি শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ মহলের৷ অনুগামীরা নিশ্চিত, ৬ তারিখ বড় মাপের ‘বিস্ফোরণ’ ঘটাতে চলেছেন শুভেন্দু ৷ ৬ ডিসেম্বরই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে শুভেন্দু নতুন ইনিংস খেলতে নামছেন৷ তবে রাজনৈতিক মহলের ধারনা, আবেগে নয়, ঠাণ্ডামাথার রাজনীতিবিদ শুভেন্দু সবদিক খতিয়ে দেখেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। সেদিন ঠিক কী বার্তা দেবেন শুভেন্দু, তা নিয়ে এখনও জল্পনা চলছে ৷ তবে, বিষয়টি আর ঝুলিয়ে রাখতে চাইছেন না নন্দীগ্রামের বিধায়ক৷ তবে এখনও স্পষ্ট নয়, কলকাতা, না মেদিনীপুর, ঠিক কোথায় মুখ খুলবেন শুভেন্দু অধিকারী ৷
ওদিকে, তৃণমূল নেতারাও শুভেন্দুর ধারাবাহিক ‘অরাজনৈতিক’ সভা এবং ৬ ডিসেম্বরের ‘বড় সিদ্ধান্ত’-এর দিকে নজর রাখছেন। তার ভিত্তিতে মমতার সভার দিনক্ষণও বদল হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তৃণমূলের অভ্যন্তরে চর্চা চলছে৷ যদিও, তৃণমূলের শীর্ষমহলের বক্তব্য, ৭ তারিখের সমাবেশ ঘোষণা অনুযায়ীই হবে৷

বৃহস্পতিবারই তৃণমূলের তরফে শুভেন্দু অধিকারীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, “তাঁর সঙ্গে আর কোনও কথা নয়৷ তৃণমূলের তরফে আলোচনার দরজাও আর খোলা থাকছে না। এখন যা বলার শুভেন্দুকেই বলতে হবে৷ দলের তরফে আর কিছু বলার নেই।”

এভাবেই শুভেন্দু-ইস্যুতে ইতি টেনে হোয়াটসঅ্যাপে দলের তরফে বার্তা দিয়েছেন ‘মধ্যস্থতাকারী’ প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়৷ তৃণমূল মোটামুটি নিশ্চিত, শুভেন্দু আর দলে থাকছেন না৷ তাই শুভেন্দুকে নিয়ে প্রতিদিনই গড়ে ওঠা নানা জল্পনার অবসান চাইছে ঘাসফুল শিবির৷ শুভেন্দুর সঙ্গে ফের আলোচনার পরিসর আর নেই বলেই শুভেন্দুকে ঝেড়ে ফেলতে চলেছে রাজ্যের শাসক দল৷

ফলে শুভেন্দুর পক্ষে আর সময় নেওয়া সম্ভব নয়৷ যাই বলুন, বলতে হবে ২-৪ দিনের মধ্যেই৷ আপাতত জানা যাচ্ছে, ৬ তারিখই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটাতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷

প্রসঙ্গত,শুভেন্দু অধিকারী বুধবার এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় সৌগত রায়কে জানিয়েছিলেন, “আমার বক্তব্যের এখনও সমাধান হয়নি৷ সমাধান না করেই আমার ওপর সব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ৬ ডিসেম্বর আমার সাংবাদিক সম্মেলন করে সব জানানোর কথা ছিল৷ কিন্তু তার আগেই আপনারা প্রেসকে সব জানিয়ে দিলেন৷ ফলে একসাথে কাজ করা মুশকিল৷ আমাকে মাফ করবেন”৷ শুভেন্দুর এই বার্তা পাওয়ার পরই দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন সৌগত রায়। রাজনৈতিক মহলের ধারনা, মমতার নির্দেশেই শুভেন্দুকে এই স্পষ্ট কথা জানিয়েছেন সৌগতবাবু৷ এদিন শুভেন্দুকে পাল্টা হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে সৌগত রায় প্রশ্ন তুলেছেন, “তাঁর পক্ষে একসাথে কাজ করা যদি মুশকিলই হয়, তাহলে মঙ্গলবারের বৈঠকে একসঙ্গে কাজ করার আশ্বাস কেন দিয়েছিলেন শুভেন্দু ?”

এদিকে, শুভেন্দুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা বহাল৷ তবে বসে নেই সদ্য মন্ত্রিত্বত্যাগী শুভেন্দু ৷ বৃহস্পতিবারও তমলুক, গড়বেতা, হলদিয়ায় ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচি পালন করেছেন তিনি৷ এদিকে বুধবার রাতেই কলকাতার গোলপার্ক, গড়িয়াহাট, বাসন্তী দেবী কলেজ, রাসবিহারী মোড় এবং সাদার্ন অ্যাভিনিউর বেশ কিছু এলাকায়’ দাদার অনুগামী’দের পোস্টার নজরে এসেছে।

পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে ‘দাদা’ শুভেন্দু ৬ তারিখ ঠিক কী ঘোষণা করবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছেন ‘অনুগামীরা’। নজর রাখছে তৃণমূলও৷

আরও পড়ুন- করোনা টেস্টের খরচ আরও কমাল সরকার, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
