বিমল গুরুং পাশে নেই, উত্তরকন্যা অভিযানে বুঝল বিজেপি, কিশোর সাহার কলম

কিশোর সাহা

বিমল গুরুংরা বিরোধিতা করলে কী হতে পারে তা উত্তরকন্যা অভিযানের দিন যেন হাড়ে হাড়ে টের পেলেন বিজেপির নেতারা। কারণ, সোমবার ওই অভিযানে উত্তরবঙ্গের নানা জেলা থেকে দলের নেতা-কর্মীরা সামিল হলেও দার্জিলিং পাহাড়ের তিন মহকুমার অংশগ্রহণ প্রায় শূন্য। তরাই-ডুয়ার্সের নেপালি ভাষীদেরও দেখা যায়নি অভিযানে। ফলে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে, উত্তরবঙ্গের নেপালি ভাষী অধ্যুষিত এলাকায় ঠিক কতটা দাঁত ফুটিয়ে রেখেছে বিমল গুরুংরা, তা নিয়ে এখন চুলচেরা আলোচনা শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে।

গত লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী রাজু বিস্ত, যিনি আদতে দিল্লির বাসিন্দা, সেই তিনিই পাহাড়ের তিন মহকুমা থেকে বিশাল ব্যবধানে এগিয়েছিলেন। দার্জিলিং লোকসভা আসনে তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ ভোটে জিতেছিলেন। অথচ, বিমল গুরুংরা বিজেপির সঙ্গ ছাড়ার পরে সেই রাজু বিস্তই কিন্তু উত্তরকন্যা অভিযানে পাহাড়, তরাই থেকে নেপালি ভাষীদের সামিল করতে পারেননি। বরং, রবিবার শিলিগুড়িতে বিশাল সমাবেশে বিমল গুরুং হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটে জিতে প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারার জন্য রাজু বিস্তের পদত্যাগ করা উচিত। এমনকী, রাজু বিস্তের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফার দাবিতে গুরুংপন্থিরা যে শীঘ্রই লাগাতার প্রচারে নামবেন, সেই বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন- কৃষকদের ভারত বনধের আগে সব রাজ্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘অ্যাডভাইজারি’, শুরু বিতর্ক

এই অবস্থায়, উত্তরকন্যা অভিযানের দিন নেপালি ভাষীদের একাংশকে সামিল করানোটা যেন একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছিল রাজু বিস্তের কাছে। কিন্তু, পাহাড়ের জিটিএ-তে ক্ষমতাসীন মোর্চা মানে বিনয় তামাং, অনীত থাপারা আগে থেকেই বিজেপির বিরোধিতা করছেন। এদিন তাঁরা জিটিএ-এর তরফে পাহাড়ে বড় মাপের অনুষ্ঠান করেছেন। ফলে, সাধারণ পাহাড়বাসীরাও সেখানে অংশ নিতে ব্যস্ত ছিলেন। বিমল গুরুং শিলিগুড়িতে হোটেলে রয়েছেন। সূত্রের খবর, সেখানে বসে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স থেকে তাঁদের সমর্থকরা যাতে কেউ শিলিগুড়ির বিজেপির অভিযানে অংশ না নেন, সেই ব্যাপারে দিনভর তদারকি করেছেন বিমল গুরুং। দিনের শেষে বিমল গুরুং তৃপ্তির হাসি হেসেছেন।

পক্ষান্তরে, বিমল গুরুং, রোশন গিরিদের কট্টর বিরোধিতার মুখে পড়ে বিজেপির উত্তরবঙ্গের নেতাদের অনেকেরই উদ্বেগ ও অস্বস্তি বেড়েছে। সূত্রের খবর, কীভাবে নেপালি ভাষীদের বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছেন বিজেপির প্রথম সারির নেতারা। বিজেপি সূত্রের খবর, পাহাড়ের ১১টি সম্প্রদায়কে দীর্ঘদিন ধরে জনজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার যে দাবি রয়েছে তা বাস্তবায়িত করা যায় কি না সেটা নিয়ে বিজেপির নেতাদের একাংশই কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কিন্তু, এখনও অবধি বিমল গুরুং তো বটেই, বিনয় তামাংরাও যেভাবে বিজেপি বিরোধিতা করছেন তার প্রভাব যে আসন্ন বিধানসভা ভোটে পড়বেই তা আজকের উত্তরকন্যা অভিযানই স্পষ্ট করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন- ডেউচা পাচামি কয়লা ব্লকের সামাজিক নিরীক্ষা শুরু, এলাকা পরিদর্শন জেলাশাসক-পুলিশ সুপারের

Previous articleডেউচা পাচামি কয়লা ব্লকের সামাজিক নিরীক্ষা শুরু, এলাকা পরিদর্শন জেলাশাসক-পুলিশ সুপারের
Next articleদলীয় কর্মী মৃত্যুর প্রতিবাদে মঙ্গলবার ১২ ঘন্টা উত্তরবঙ্গ বনধ, রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ বিজেপির