শুভেন্দুর জন্য দলের দরজা কি খোলা রাখলেন নেত্রী? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

নতুন এক ইতিহাস তৈরি হলো ইতিহাসের জেলা মেদিনীপুরে ৷

তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পর এই প্রথমবার ‘অধিকারী-পরিবার’কে বাইরে রেখেই মেদিনীপুরে সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সভাও পুরোপুরি সফল৷ নিঃসন্দেহে রাজ্য- রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা৷

উল্টোদিকে সপরিবারে গরহাজির থেকে অধিকারী-পরিবারও সম্মিলিতভাবে বার্তা দিলেন, তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও ঠিক আগের মতো আর নেই৷

পশ্চিম মেদিনীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সভা ঘিরে তুঙ্গে ছিলো রাজনৈতিক জল্পনা।সকলের আগ্রহ ছিলো এদিন নেত্রী শুভেন্দু তথা শুভেন্দু- ঘনিষ্ঠদের কী বার্তা দেন, সেই দিকেই৷

বিজেপির বিভাজন রাজনীতির কড়া সমালোচনা করতে গিয়ে একসময় তৃণমূল নেত্রী বলেন, “যদি কেউ মনে করেন, সবার সঙ্গে সবার বিরোধ লাগিয়ে দেবে, হিন্দুর সঙ্গে মুসলিমের, কুড়মির সঙ্গে মাহাতোর, ভুল করছে৷” এরপরই তিনি বলেন, “অধিকারী-ব্যানার্জি সকলকে নিয়েই তৃণমূলের সংসার”।

ভিন্ন প্রসঙ্গে বললেও মমতার এই বার্তাকে অনেকেই ব্যাখ্যা করছেন, নেত্রী শুভেন্দুকে তৃণমূলেই থেকে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন৷ তা না হলে তিনি কেন বিশেষভাবে ‘অধিকারী’ এবং ‘ব্যানার্জি’, এই দুই পদবীর কথাই বলবেন ? এবং এর পরেই এই বার্তা নিয়ে ফের রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে৷ জল্পনা চলছে, তাহলে কী নেত্রী শুভেন্দুর জন্য দলের পথ এখনও খোলা রেখে দিলেন।

তবে বক্তৃতার মাঝে একবার খুবই কঠিন সুরে, কারো নাম না করে দলের মধ্যে থেকেই যারা ভিন্নসুরে কথা বলছেন সম্ভবত তাঁদের উদ্দেশেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”যদি কেউ মনে করেন তৃণমূলকে ব্ল্যাকমেল করব, বার্গেন করব, ভোটের সময় দলকে বিপদে ফেলব, জেনে রাখুন কিছু করতে পারবেন না”৷ মমতা সতর্কতার সুরে বলেছেন, “বিজেপি বা বিজেপির কোন বন্ধু যদি মনে করে তৃণমূলকে দুর্বল করবে তাহলে বলব, আগুন নিয়ে খেলবেন না”।

বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার পর এই প্রথম মেদিনীপুরে সভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ফলে এদিনের সভা নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক দিক থেকে আলাদা মাত্রা পায়। কাঁথির অধিকারী- পরিবারের সদস্যদের এই মঞ্চে দেখা যাবে কি’না, তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই জল্পনা ছিলো৷ জল্পনার অবসান ঘটেছে৷ সাংসদ শিশির অধিকারী, বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে এদিনের সভায় দেখা যায়নি৷ এই ঘটনায় একটা বিষয় একেবারেই জলের মতো স্পষ্ট হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সঙ্গে আর নেই৷ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও না করলেও শুভেন্দু বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর কাছে তৃণমূল এখন অতীত৷ অন্যদিকে শিশির-দিব্যেন্দুর গরহাজিরাও বুঝিয়ে দিয়েছে, অধিকারী পরিবারের অভ্যন্তরের ভাবনা অন্যরকম৷ রাজনৈতিক মহলের ধারনা, এই দুই সাংসদ অনুপস্থিত থেকে বার্তা দিয়েছেন, তাঁরা শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকার মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না৷ শুভেন্দু অধিকারী যে থাকবেন না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিতই ছিলো৷ অধিকারী পরিবার সূত্রের খবর, কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর পায়ে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এই সভায় আসার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীকে দলের তরফে ফোন করা হলে তখনই তিনি না’কি শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন৷ তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এদিন না’কি দিল্লিতে রয়েছেন৷ মমতার সমাবেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি ফেরেননি৷ ফলে ইঙ্গিত স্পষ্ট৷
ফলে, এদিন অধিকারী পরিবারের কাউকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চে দেখা যায়নি৷ কিন্তু এটাও ঠিক, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের আবহে মেদিনীপুরের এই জনসভা অধিকারী-পরিবার ছাড়াই সফল, ভিড়ও ছিলো সন্তোষজনক৷

সন্দেহ নেই,শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনার আবহে মেদিনীপুরে এদিন মমতা কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই এই সভা করেছেন৷ ঝুঁকি ছিলো লোক সমাগম নিয়ে৷ সেদিক থেকে সভা সফল৷

ওদিকে, সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছনোর পরে দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে জেলার বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে।

আরও পড়ুন- কৃষকদের ভারত বনধের আগে সব রাজ্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘অ্যাডভাইজারি’, শুরু বিতর্ক

Previous articleমমতাকে ব্ল্যাকমেল করা যাবে না, নাম না করে দলের বিদ্রোহীদের বার্তা ফিরহাদের
Next articleডেউচা পাচামি কয়লা ব্লকের সামাজিক নিরীক্ষা শুরু, এলাকা পরিদর্শন জেলাশাসক-পুলিশ সুপারের