গুরুংদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতেই শিলিগুড়িতে বিনয়-অনীতের সঙ্গে বৈঠক অরূপের!, কিশোর সাহার কলম

কিশোর সাহা

বিমল গুরুং-রোশন গিরি বনাম বিনয় তামাং-অনীত থাপার বিরোধ মেটাতে কি আসরে নেমেছেন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ? গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দুটি শিবিরেই এখন সেই প্রশ্নে আলোচনা চলছে। কারণ, সোমবার শিলিগুড়িতে হাসমি চকের কাছে পূর্ত দফতরের বাংলোয় বিনয়-অনীতকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন অরূপ বিশ্বাস। মোর্চার একটি সূত্র অনুযায়ী, সেখানে পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পূর্তমন্ত্রী বিনয়-অনীতদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন।

আরও পড়ুন – বিমল গুরুং পাশে নেই, উত্তরকন্যা অভিযানে বুঝল বিজেপি, কিশোর সাহার কলম

যদিও গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান অনীত থাপা বলেছেন, “পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে সোমবার বিকেল চারটেয় আমাদের যে মিটিং হয়েছে সেখানে মূলত জিটিএ এলাকার রাস্তাঘাটের কাজকর্মের ব্যাপারেই কথা হয়েছে। অনেক টাকা পূর্ত দফতর বরাদ্দ করেছে, সেই কাজ কোথায় কতটা বাকি তা নিয়ে কথা বলেছি। আরও অনেক কাজ জরুরি ভিত্তিতে করা দরকার। সেটা নিয়েও কথা হয়েছে।” অনীত দাবি করেছেন, কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে নিযে আলোচনা হয়নি।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, কয়েক মাস আগে পর্যন্ত দলের তরফে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের পর্যবেক্ষক ছিলেন অরূপ বিশ্বাস। তিনি পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্সের দলের নেতাদের তো বটেই, মোর্চার নানা শিবিরের ছোট-বড়-মাঝারি নেতানেত্রীদেরও চেনেন। অনেক মোর্চা নেতানেত্রীই কলকাতায় চিকিৎসা-সহ নানা ব্যাপারে পূর্তমন্ত্রীর সহযোগিতা নেন। তাই অরূপবাবু এখন দলীয় পর্যবেক্ষক না থাকলেও অনেকেই তাঁর উপরে ভরসা করে থাকেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর। সে কারণেই তাঁকে সামনে রেখে বিমল-বিনয় শিবিরের দূরত্ব কমানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে দলের পাহাড় ও সমতলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন।

গত রবিবার বিমল গুরুং শিলিগুড়ি ফিরে বড় মাপের সমাবেশ করে বিজেপিকে আগামী বিধানসভা ভোটে শিক্ষা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, সে দিনই শিলিগুড়িতে পৌঁছেছেন অরূপ বিশ্বাস। তার পরে সোমবার বিনয় তামাংরা দার্জিলিঙের জামুনিতে যুব সমাবেশ করে ভালই ভিড় করিয়েছেন। বিকেলে অরূপের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিনয়-অনীত। সব ঠিক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই শিলিগুড়ির কাছে সুকনায় বিনয় তামাংদেরও সমাবেশ করার কথা। এমন সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশের মাধ্যমে এলাকা যাতে উত্তপ্ত না হয় এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে গোর্খা বনাম গোর্খা লড়াই করানোর অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা যাতে সরব হতে না পারে সেই ব্যাপারে অতি মাত্রায় সতর্ক তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই হয়তো অরূপ বিশ্বাসকে সামনে রেখে বিমল-বিনয় শিবিরের মধ্যে দূরত্ব কমাতে তৃণমূল নেতৃত্বও চেষ্টা করছেন বলে দলের একাংশের অনুমান।

ঘটনাচক্রে, বিমল-রোশন শিবিরের অনেক নেতাই জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তাঁদের বিনয়-অনীতদের সঙ্গে কোনও বিরোধের জায়গা নেই। একইবাবে বিনয়-অনীতরাও বারেবারেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধেই তাঁরা লড়াই আরও জোরদার করবেন। শুধু তাই নয়, উভয় শিবিরই পাহাড়ে শান্তি বজায় রেখে আগামী দিনে গোর্খাল্যান্ডের লক্ষ্যপূরণের দাবিও সামনে রেখে লড়াই চালাবে বলে ঘোষণা করেছে।

তাই বিরোধ থাকলেও যে সব বিষয়ে বিমল-বিনয় শিবির একমত, সেগুলি সামনে রেখেই বিমল-বিনয় শিবিরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিবৃতির লড়া থেকে নিরস্ত করতে চাইছে তৃণমূল। উপরন্তু, পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সলের নেপালি ভাষীদের মধ্যে বিজেপি যাতে দাঁত ফোটাতে না পারে সে জন্য বিমল-বিনয় দুই শিবিরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে তৃণমূল।

Previous articleরিপাবলিক টিভির সব কর্মীকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জি খারিজ শীর্ষ আদালতে
Next articleভারত বনধ: ভীম আর্মি প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদকে আটক করল যোগীর পুলিশ