কৃষক বিক্ষোভকে হাতিয়ার করে জাতীয় স্তরে ফের বিরোধী ঐক্যের চেষ্টা

বিজেপি যাতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলতে না পারে সেজন্য বিজেপি বিরোধী দলগুলি প্রত্যক্ষভাবে দলীয় ব্যানারে কৃষক বিক্ষোভে অংশ নেয়নি। কিন্তু মোদি সরকারের বিরুদ্ধে চলতি কৃষক বিক্ষোভ এবং আজকের ভারত বনধকে সমর্থন করেছে প্রায় সব বিরোধী দলই। কৃষিপ্রধান দেশ ভারতে কৃষকদের কেন্দ্রবিরোধী ক্ষোভকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর যে সুযোগ সামনে এসেছে তা হাতছাড়া করতে চায় না কোনও দলই। ফলে কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও জাতীয় স্তরে ফের আরেকবার বিজেপি বিরোধী ঐক্য দানা বাঁধার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী বছর কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে কৃষকদের এই ক্ষোভ ও কৃষি আইনের বিরোধিতাকে হাতিয়ার করে বিজেপি বিরোধী জনমত গড়ে তোলার সুযোগ এসেছে বিরোধীদের সামনে। তাই কৃষি আইনের বিরোধিতায় প্রথমদিকে সক্রিয় ভূমিকা না নিলেও এখন প্রায় সবকটি বিরোধী দলকেই দেখা যাচ্ছে কৃষক বিদ্রোহে নৈতিক সমর্থন দিতে।

কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা আজকের ভারত বনধকে সমর্থন করছে ২৪ টি রাজনৈতিক দল। শুধু বিজেপি বিরোধী দলই নয়, এনডিএর ভিতরে বিজেপির শরিক দলগুলির মধ্যেই আইন নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। হরিয়ানায় বিজেপির শরিক দুষ্মন্ত চৌতালার দল বা রাজস্থানে বিজেপির জোট শরিক রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করে আইন বদলের দাবি জানিয়েছে। কৃষি আইনের বিরোধিতা করে এনডিএ ছেড়েছে বিজেপির সবচেয়ে পুরনো জোট শরিক আকালি দল। আরেক প্রাক্তন জোটসঙ্গী শিবসেনাও কৃষকদের আন্দোলনের পাশে। আগামিকাল এই ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করবেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার। তাঁর সঙ্গে থাকবেন আরও কয়েকটি বিরোধী দলের নেতা। ইদানিং বিজেপির সুরে সুর মেলানো বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন। নৈতিক সমর্থন জানিয়ে কৃষি আইনের বিরোধিতায় আলাদা রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি। গতকালই কৃষকদের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। দিল্লির সিঙ্ঘু সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন আপ নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেরালায় ভারত বনধ সফল করার ঘোষণা করেছেন সিপিএম নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সক্রিয়ভাবে রাস্তায় না নেমেও লাগাতার টুইট করে এই ইস্যুতে মোদি সরকারকে বিঁধছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও এখন কৃষি বিক্ষোভকে সামনে রেখে কেন্দ্রবিরোধী সুর চড়াচ্ছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী ও টিআরএস নেতা চন্দ্রশেখর রাও। সবমিলিয়ে, কৃষক আন্দোলনের রাজনৈতিক সুফল নিজেদের দিকে টানতে ব্যস্ত প্রায় সব বিরোধী দলই। নতুন এই পরিস্থিতি জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের পথ কতটা প্রশস্ত করবে তা এখনই বলার সময় আসেনি। তবে এই সময়ের কৃষক আন্দোলন যে ফের একবার বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার ক্ষেত্রে অদৃশ্য অনুঘটকের কাজ করছে তা বলাই যায়।

আরও পড়ুন-কৃষি আন্দোলনকে সমর্থন একাধিক মার্কিন সাংসদের, ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি

Previous articleউলেনের ময়নাতদন্ত নিয়ে পুলিশ-বিজেপি চাপানউতোর
Next articleভারত বনধ: রাজ্যে রাজ্যে একনজরে