সাংবাদিকদের সম্পর্কে মহুয়ার “দাম্ভিক” মন্তব্যকে সমর্থন করে না তৃণমূল

“দু পয়সার প্রেস”– কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ “উচ্চশিক্ষিতা” মহুয়া মৈত্রের এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন, কুরুচিকর, বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। বিজেপি-সহ বিরোধীরা তাঁর এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করছেন। বাংলার সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশকে বয়কটের ডাকও দিয়েছে। তবুও দমেননি তিনি। বরং, সোশ্যাল মিডিয়ায় “মিম” করে এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। কিন্তু চুপ থাকার পাত্র নয়, বাংলার তামাম মিডিয়া। আসলে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ-এর ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ দেখনি। সত্যি বলতে কী, এবার উচ্চশিক্ষিতা মহুয়া ফাঁদে পড়ে গিয়েছেন। যাইহোক, মহুয়ার এই কুরুচিকর মন্তব্যের জন্য তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস কোনও দায়িত্ব নিচ্ছেন না। সেটা তাঁরই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্যে কার্যত পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা রাজনীতিতে পোড় খাওয়া বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় সাফ জানালেন, “এটা ওর (মহুয়ার) একান্তই ব্যক্তিগত কথা। দলের কথা নয়। দলের সঙ্গে এই মন্তব্যের কোনও সম্পর্ক নেই। দল এই মন্তব্যকে কোনওভাবেই সমর্থন করে না।”

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কী সম্পর্ক, তার বিশদ বিবরণ দিয়েই সুব্রত মুখোপাধ্যায় পরোক্ষে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। সুব্রতবাবুর কথায়, “সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সাংবাদিকদের সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাসী। আমরাও তাই বিশ্বাস করি। তাই সাংবাদিকদের প্রতি এমন মন্তব্য শুনে খারাপ লাগছে। তবে একটা কথা বলতে পারি। এটা ওর ব্যক্তিগত কথা, দলের নয়। আমরা প্রেসের সঙ্গে হৃদ্যতা রেখে চলি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লিখলেও সুসম্পর্ক বজায় রাখি।”

তবে মহুয়া ইস্যুতে পরোক্ষে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। এদিন রানিগঞ্জের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রেস, মিডিয়ার একটা ইজ্জত আছে। প্রেস, মিডিয়া আমাকে অনেক সাহায্য করে থাকে। কার কোথায় কী প্রয়োজন তা তুলে ধরে সংবাদমাধ্যম।”

তৃণমূল নেতা তথা অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র মহুয়ার সাংবাদিকদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্যের বিষয়টি নিয়ে
এড়িয়ে গেলেও ব্যক্তিগতভাবে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের যা পরিস্থিতি, তাতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মালিকরা কর্পোরেট কালচার-এ বিশ্বাসী। পুঁজিবাদের পক্ষেই তাঁরা সওয়াল করেন। কিন্তু যাঁরা সংবাদকর্মী, অর্থাৎ মাঠে নেমে কাজ করা সাংবাদিক, তাঁদের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আমি কিংবা আমার দল তৃণমূল কংগ্রেস শ্রদ্ধাশীল। কারণ, সংবাদমাধ্যম একটা ভূমিকা পালন করে। তাদেরকে কোনওভাবেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। গদি সাংবাদিকতার বাইরে সব সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য বলেই আমি মনে করি।”

ফলে মহুয়া মৈত্রের সংবাদ মাধ্যম বা সাংবাদিক সম্পর্কে এমন মন্তব্যে বেশ অস্বস্তিতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, এমন বিতর্কিত মন্তব্য যিনি করেছেন এটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।

যদিও “দাম্ভিক” মহুয়া দলের এই অবস্থানকে কতখানি গুরুত্ব দেবেন এবং আদৌ তিনি সাংবাদিকদের প্রতি অন্তর থেকে ক্ষমা চাইবেন কি না, তা নিয়ে ঘোর সংশয়।

আরও পড়ুন- উত্তরকন্যা অভিযানে শটগানের ছররায় মৃত্যুর তদন্তে সিআইডি

Previous articleউত্তরকন্যা অভিযানে শটগানের ছররায় মৃত্যুর তদন্তে সিআইডি
Next articleগেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে চলছে পাঁজি-পুঁথি দেখা, মুকুলের সঙ্গে বৈঠকে শীলভদ্র