শুভেন্দুকে নিয়ে কর্মসূচিতে মমতার প্রিয় ত্রিদিব

একসময়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ( buddhadeb bhattacharya) কট্টর অনুগামী।
তারপর মুখ্যমন্ত্রী বদল হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ( mamata banerjee) কাছাকাছি।
এখন হঠাৎ দেখা গেল অধুনাকালের “অনুগামীশিবিরের” ভরকেন্দ্র শুভেন্দু অধিকারীর (shuvendu adhikari) পাশে।

তিনি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।
গিল্ডের (guild) অন্যতম স্তম্ভ।
মুখ্যমন্ত্রীর ধারণায় তিনিই বাঙালির বইপ্রেমের অন্যতম প্রাণভোমরা।

বইমেলায় জুটি বলতে ত্রিদিব- সুধাংশু। গিল্ড মানেই তাঁরা। নিন্দুকেরা বলেন জুটি দারুণ। দেজের সুধাংশু দে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই ছেপে এই শিবির ঠিক রাখেন। আর পত্রভারতীর ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় পরিযায়ী পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়।

মমতা আগে গিল্ড রাজনীতিতে ঢুকতেন না। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই সুধাংশু, ত্রিদিবের জুটিকে দিয়েই বইমেলাকে দেখতেন। অন্য শিবির হালে পানি পায়নি। ত্রিদিব সিপিএম ক্ষমতায় থাকাকালীন লালঘেঁষা। এমনকি মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও কোনো কোনো ইস্যুতে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। পরে ক্রমশ মমতা ভেবেছেন তাঁর গুণমুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন ত্রিদিব। মানে, মমতা ভেবেছেন। যেমন তিনি আরও কিছু ক্ষেত্রে ভাবতেন বা ভাবেন। তারা যে পিছনে কী করছে, কী বলছে, মমতা জানেন না। সে যাক গে, ত্রিদিববাবু এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর বাইরে কিছুই করেননি।

এখন আবার অন্য জল্পনা।
রবিবার মেদিনীপুরে মহিষাদলে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে ত্রিদিবকে, যেখানে উপস্থিত শুভেন্দু অধিকারী। এতকাল মমতা কারুর উপর একটুও রেগে থাকলে তাকে অনেকটা এড়িয়ে চলতেন তিনি। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়র মতো। এবার উলটপুরাণ। শুভেন্দুর পাশে সহাস্যে সস্ত্রীক ত্রিদিব। যে শুভেন্দু বিদ্রোহী, দলত্যাগ সময়ের অপেক্ষা, সেখানে আলো করে পাশে ত্রিদিব। তাঁর শিবির বলছে, ত্রিদিব আমন্ত্রিত। তাই এসেছেন। অন্য শিবির বলছে, সাহিত্যধর্মী অনুষ্ঠানটি ত্রিদিবের কথামতই সাজানো হয়েছে। তাছাড়া শুভেন্দু যাচ্ছেন জেনেও তিনি গেলেন কেন, যেখানে এই কবছর মমতাদির সঙ্গে নিজের পরিচয় প্রমাণ করে গিয়েছেন? এটা তো ত্রিদিবসুলভ নয়। অথবা পুরোপুরিই ত্রিদিবসুলভ। দক্ষ, বুদ্ধিমান ত্রিদিব কি সময়ের লেখা পড়ার চেষ্টা করছেন? জল্পনা চরমে।

শুভেন্দুশিবির অবশ্য ত্রিদিবের ভূমিকায় ভারি খুশি। এঁদের সূত্র বলছে এই সন্ধিক্ষণে কিছু লেখক, বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে শুভেন্দুর যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন ত্রিদিব। যেটা শুভেন্দুর বিশেষ প্রয়োজনও বটে।

কী আশ্চর্য, এই অনুষ্ঠানে জুটির অন্যতম সুধাংশু বা তাঁর পুত্রকে দেখা যায়নি। অর্থাৎ নিপুণভাবে কিছুটা দিদি, কিছুটা অনুগামীতে ভাগ হয়ে সব দিক রাখার বাস্তবমুখী চিত্রনাট্য।

এতদিন স্রেফ মমতার প্রশ্রয়ের জন্য গিল্ডের এই জুটিকে কিছু বলতে পারেননি বিক্ষুব্ধ প্রকাশকরা। রবিবার সন্ধের পর শুভেন্দুর সঙ্গে সস্ত্রীক সহাস্য পুলকিত ত্রিদিবকে দেখে তাঁদের একাংশ কড়া চিঠি প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। কলেজ স্ট্রিট পাড়ার কিছু অকথিত কাহিনি এবং রং বদলে কারুর কারুর সরকারি মদতে সাম্রাজ্য দখলদারির ঘটনাক্রম এতে থাকছে। এসব যাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

এক সূত্রের কথায়, শুভেন্দুবাবুকে নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাঁর রাজনীতি তিনি করবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে দেখিয়ে কারা কী কী করতেন এবং এখন তাঁরা কী করছেন, বইপাড়ার অকথিত কাহিনি এবার সর্বসমক্ষে, বিশেষত দলের শীর্ষনেতৃত্বের সামনে আসুক। জানা গিয়েছে রবিবার দুপুরেই তৃণমূলের মেদিনীপুরের এক নেতা কলকাতাকে জানিয়েছিলেন কী অনুষ্ঠান হতে চলেছে। সন্ধেয় মেদিনীপুর থেকে আবার সবিস্তার খবর আসে। দলের এক বর্ষীয়ান নেতা ত্রিদিবের কীর্তিকলাপে গভীর অসন্তোষপ্রকাশ করে শীর্ষনেতৃত্বকে ফোনে সব জানান। সরকার এবং দল কলেজ স্ট্রিট পাড়ার কয়েকজন সম্পর্কে ধারণা বদলাচ্ছে। ত্রিদিবের শিবির অবশ্য বলছে এতে রাজনীতি নেই। শিশুর সারল্যে ত্রিদিব আয়োজকদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ওখানে গিয়েছেনমাত্র। তার বেশি কিছু নয়। অন্যশিবির বলছে, সুধাংশুকে মমতার কাছে রেখে ত্রিদিব এখন অনুগামীর আচরণে। যাতে জুটির নিয়ন্ত্রণেই সবকিছু থাকে। সুধাংশুবাবু নিপাট ভদ্রলোক। তাঁর শিবির বলছে, শুভেন্দু যাচ্ছেন শুনে তিনি বিতর্কে জড়াননি। ত্রিদিব গিয়েছেন নিজের সিদ্ধান্তে। তাও আবার সানন্দে, সস্ত্রীক। বিষয়টি নিয়ে বইপাড়া জমজমাট। আলোচনা চলছে, ত্রিদিবের সৌজন্যে শুভেন্দু যদি বইপাড়া আর গিল্ড রাজনীতিতে পা রাখেন, তাহলে এর ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। যদিও শুভেন্দু এদিন অনুষ্ঠানে ছিলেন একদম আনুষ্ঠানিক উপস্থিতিতে। কিন্তু বাঁদিকে ত্রিদিবের উপস্থিতিই বইপাড়া জমিয়ে দিয়েছে। এখন হয়ত ত্রিদিব ছুটবেন এটা বোঝাতে যে তিনি সরকারের পক্ষেই আছেন, কিন্তু শীর্ষবৃত্তে যা ধারণা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। যতই বলা হোক বই আর রাজনীতি আলাদা, এখন সবাই বোঝেন কীসের সঙ্গে কী জড়িত। এরকমও কথা উঠছে, আয়োজকরা যদি রুটিনমাফিক আমন্ত্রণও করে থাকেন, ত্রিদিব গেলেন কেন জেনেশুনে? আর সবাই জানে বইসংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর ত্রিদিবের প্রভাব কতটা বেশি। তাঁর অমতে কেউ অনুষ্ঠান করছে আর ত্রিদিব না জেনে যাচ্ছেন, কেউ বিশ্বাস করবেন না। আয়োজকরা অবশ্য এর মধ্যে নিখাদ অ-রাজনীতি এবং সাহিত্যের অনুষ্ঠানই দেখছেন।

আরও পড়ুন- কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে চাকরি ছাড়লেন পাঞ্জাব পুলিশের ডিআইজি

Previous articleতৃণমূলকে দুর্নীতির সরকার বলে কটাক্ষ দিলীপের!
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ