Saturday, November 8, 2025

কোর্টে সুদীপ্তর বিস্ফোরক লিখিত বয়ান, প্রতিলিপি তুলে সরব কুণাল

Date:

Share post:

সারদা মামলায় ( saradha) নয়া মোড়। জেল থেকে আদালতে বিস্তারিত লিখিত বয়ান দিয়েছেন সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন ( sudipta sen)। আদালত থেকে সেই বয়ানের সার্টিফায়েড কপি তুলে তদন্তের দাবিতে সরব কুণাল ঘোষ ( kunal ghosh)। শনিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সেই চিঠির কপি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। তবে চিঠিটি দেখালেও তার কপি কাউকে দেননি। একইসঙ্গে নিজের ফেস বুক পোস্টে কুণাল লিখেছেন-

সারদা নিয়ে সুদীপ্ত সেনের বিস্ফোরক চিঠি সরাসরি আদালতে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।

এই সপ্তাহেই সারদা মামলার দিন ছিল সিএমএম আদালতে। আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী দেখেন যে কেস রেকর্ডে একটি বিরাট চিঠি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

প্রেসিডেন্সি জেলে বসে নিজের হাতে 21 পাতার চিঠিটি লিখেছেন সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। জেল কোড অনুযায়ী জেল সুপার চিঠিটি পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালতে। মাননীয় সি এম এম কলকাতা সেটি গ্রহণ করে একটি নির্দেশনামা মারফৎ মামলার রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছেন চিঠিটিকে।

অয়ন আদালত থেকে একথা আমাকে জানানো মাত্রই আমরা ঠিক করি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের রেকর্ড থেকে এর সার্টিফায়েড কপি তুলব। সেইমতই কপি তোলা হয়েছে।

আদালতের নথি থেকে পাওয়া কপিতে দেখা যাচ্ছে: সুদীপ্ত সেন জেলের প্রিজনার্স পিটিশন ফর্মে 21 পাতার চিঠিটি পুরো নিজের হাতে লিখেছেন।
মেমো নম্বর: 10676/WO dated 19/12/2020.

চিঠির মূল বিষয়বস্তু যা পড়ে বোঝা গেল তিনি লিখেছেন-

এতদিন ধরে বন্দিদশায় তিনি বিপর্যস্ত। অথচ দেখতে পাচ্ছেন ষড়যন্ত্রীদের অনেকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই হয়নি। সেই ক্ষোভ থেকেই সারদা বিপর্যয়ের কারণ সবিস্তারে লিখেছেন তিনি।

সুদীপ্ত সেন চিঠিটি উদ্দেশ করছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, সিবিআই ডিরেক্টর, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং সিএমএম কলকাতাকে।
পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

আমার আইনজীবী অয়নের পর্যবেক্ষণ: যেহেতু জেল কোড অনুযায়ী বিচারাধীন আদালতের বিচারককে চিঠি লিখলে সেটি জেলকে সরাসরি সেখানে পাঠাতে হবে, তাই এটি এই CBI RC 06/14 মামলাটির আদালতে চলে এসেছে। সেই সূত্রে আমাদের নজরে এসেছে। বাকি চিঠিগুলির অবস্থান জানা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

এর আগে 2013 সালে রহস্যজনক অন্তর্ধানের সময় সুদীপ্ত সেনের একটি টাইপ করা চিঠি সামনে এসেছিল।
এবার সম্পূর্ণ হাতে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন কার এবং কাদের কথায় তিনি সেই চিঠি লিখে কলকাতা থেকে চলে গিয়েছিলেন। কে এবং কারা কী কী আশ্বাস দিয়ে তাঁকে দিনকয়েক দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কাদের কথায় পরিচালিত হয়ে এখন তিনি অনুতাপ করছেন। সুদীপ্ত সেন তদন্তের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, তিনি সব আসল কথা লিখছেন। কেন এসব উপেক্ষিত থাকছে? কেন দোষীরা সাধু সাজছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হোক।

সুদীপ্ত সেন সারদার বিভিন্ন পর্যায়ের কথা খানিকটা সবিস্তারে লিখেছেন। তাঁর কোম্পানির কে কে তাঁকে ডুবিয়েছেন, কার কার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীদের কার কী ভূমিকা ছিল, কে কত টাকা নিয়েছেন, কোন কোন ব্যক্তি হিসাববহির্ভূত নগদ নিয়েছেন, সেসব বিষয়ে নাম এবং প্রেক্ষিতসহ লিখেছেন তিনি। উদাহরণ দিয়ে কোনো কোনো ঘটনার কথাও লিখেছেন।

এখন সুদীপ্ত সেন নিজেই এই গোটা বিষয়ের যথাযথ তদন্ত চেয়ে এই চিঠি শেষ করেছেন। তিনি সবটাই সত্য বলছেন কি না আমি জানি না। কিন্তু অনেকটাই তো আগে শোনা। বারবার সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। এখনও বলছি, সুদীপ্ত সেন যা লিখেছেন, কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত দরকার।

সিএমএম কোর্ট থেকে আমার আইনজীবী অয়ন এই চিঠির সন্ধান পেয়ে নিয়মমাফিক আবেদন করে এর সার্টিফায়েড কপি তুলেছে।

আমি জ্ঞানত কোনো অন্যায় করিনি। প্রথম দিন থেকে তদন্তে সহযোগিতা করেছি। বারবার বলেছি এর মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। আমি চক্রান্তের শিকার।

আমার আইনজীবী অয়নের পর্যবেক্ষণ: সুদীপ্ত সেনের এই চিঠি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এই মামলার মূল চরিত্র। বন্দি অবস্থা হলেও তিনি যখন নিজে হাতে চিঠি লিখে সরকারি পদ্ধতিতে আদালতকে কোনো বয়ান দিচ্ছেন, তার গুরুত্ব যথেষ্ট। তদন্তের পরবর্তী পর্যায়ে এই চিঠিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

আরও বিশেষ তাৎপর্যের, ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশ বা তদন্তকারী এজেন্সির খাতায় এমন অনেককে সাক্ষী দেখানো হচ্ছে বা দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধেই মূল অভিযুক্ত সরাসরি অভিযোগ তুলছেন। ফলে এদের ভূমিকাও তদন্তসাপেক্ষ।

আমার কাছে এই মামলা জীবনমরণের লড়াই। মুখের হাসি অটুট রেখে বহু যন্ত্রণা চেপে আমি লড়াই করে যাচ্ছি।

সুদীপ্ত সেনের চিঠির সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর আমার অনুরোধ:

1) এই চিঠির প্রতিটি কথার যথাযথ তদন্ত ছাড়া যেন তদন্ত শেষ না হয়। সব ষড়যন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

2) কারা দপ্তরকে অনুরোধ, চিঠিটি আর যাকে যাকে সম্বোধন করে লেখা, যত শীঘ্র সম্ভব তাঁদের কাছে পাঠানো হোক। তাঁরাও যেন তদন্তের উপর গুরুত্ব দেন।

3) মাননীয় বিচারকদের কাছে অনুরোধ, তদন্তকারী এজেন্সিগুলি যেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়। সিবিআই, ইডি তো বটেই; বারাসাত বিশেষ কোর্টে রাজ্য পুলিশের যেসব মামলা 173 ধারা প্রয়োগে খোলা আছে, সেগুলিতেও তদন্ত হোক।

4) সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ, বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সামনে আনা হোক। এটি মঞ্চের বিবৃতির লড়াই নয়, এটি বহু মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

যেহেতু চিঠিটি সুদীপ্ত সেনের নিজের হাতের লেখা, জেল থেকে বৈধ পদ্ধতিতে কোর্টে পাঠানো এবং যেহেতু মাননীয় সিএমএম এটি নির্দেশনামাসহ কেস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তাই চিঠির বৈধতা ও সুদীপ্ত সেনের লেখাই কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললাম না।

যেহেতু এই চিঠির বেশ কিছু বিষয় এখন হঠাৎ করে উত্থাপিত নয়, 2013 সাল থেকে বারবার সামনে এসেছে অথচ কোনো ব্যবস্থা হয়নি; তাই হঠাৎ “এখন কেন বলা হচ্ছে” ধরণের কথা প্রযোজ্য নয়। বরং ব্যবস্থা দরকার। অন্যথায় এই তদন্ত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

আমি এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ চিঠির বিষয়টি সামনে আনলাম তদন্তের দাবি জোরদার করতে।
কিন্তু চিঠির পাতাগুলি সামনে আনছি না। যে সব নাম, টাকার পরিমাণ এবং ঘটনা আছে, সেগুলিও এখন উল্লেখ করছি না। কারণ চিঠিটি নিয়ে আইনি পরামর্শে আমারও একটু সময় প্রয়োজন। এটি খুঁটিয়ে পড়াটাও জরুরি।

এটুকু বলতে পারি, চিঠিটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সারদার বহু তথ্য সুদীপ্ত সেন এতে লিখেছেন। আমি তাঁর কথা ধ্রুবসত্য নিশ্চয়ই ধরব না; কিন্তু সবিস্তারে যা লিখেছেন, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দরকার।

যে পেশাগত চাকরি করল, নিয়োগপত্র নিয়ে কাজ করে চেকে পেমেন্ট নিল, আয়কর দিল, বিপদে কোম্পানিকেই মিডিয়া শাখা বাঁচাতে টাকা দিল, দশচক্রে ভগবান ভূত হয়ে তাকে কলঙ্কিত করা হবে, তার জীবন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হবে অথচ হিসেব বহির্ভূত নগদ টাকার লুটেরারা সৎ সেজে ঘুরবে, এ হতে পারে না। ঈশ্বর হতে দেবেন না।

যাঁদের উদ্দেশে এই চিঠি লিখেছেন সুদীপ্ত সেন, তাঁরা অবিলম্বে তদন্তের ব্যবস্থা করান।
চিঠিতে যাঁদের নামে মারাত্মক সব আছে, অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে “নিরপেক্ষ ও যথাযথ” তদন্ত হোক। দরকারে গ্রেপ্তার করা হোক। সব দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসব আড়াল করা থেকে দূরে থাকুন।

উল্লেখ্য, সুদীপ্ত সেনের 2013 সালের টাইপ করা চিঠিটি “ফাঁস” হয়েছিল 18/4/2013, তাঁর অন্তর্ধানের সময়। তার কপি সাংবাদিকদের একে ওকে ডেকে দেখিয়েছিলেন তথাকথিত চাণক্য, মেড ইন চায়না। সেই কপি তাঁর কাছে কী করে এলো, তার সদুত্তর মেলেনি।

আমি আজ সুদীপ্ত সেনের হাতে লেখা চিঠির কপি তুললাম আদালত থেকে, বিধিসম্মতভাবে। সেটির কথাই তুলে ধরছি।

এর শেষ দেখে ছাড়ব।
ঈশ্বরে আস্থা রাখি, রাখছি, রাখব।

আরও পড়ুন:শুভেন্দুর পাল্টা শান্তনু? জল্পনা তুঙ্গে

spot_img

Related articles

মতুয়া-ফায়দা লোটার চেষ্টা: অনশন মঞ্চে হঠাৎ হাজির বাম-কংগ্রেস!

বাংলার শাসকদল তৃণমূলের বিরোধিতা করাই বাংলার বাম নেতৃত্ব ও কংগ্রেসের নেতা কর্মীদের স্বভাবসিদ্ধ। বিরোধিতার পর্যায়টা এক এক সময়ে...

জন্মদিনে চরম অসৌজন্য! অভিষেককে নিয়ে বিজেপির পোস্টে সরব নেটদুনিয়া

বাংলায় বরাবর সৌজন্যের রাজনীতি দেখিয়ে এসেছে সব রাজনৈতিক দল। বাম আমলে সিপিআইএম নেতা থেকে তৃণমূল বা কংগ্রেস নেতাদের...

আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা, অনুশীলনই বন্ধ রাখল মোহনবাগান

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে মোহনবাগানের(Mohun Bagan) সিনিয়র দলের অনুশীলন। খবর অনুযায়ী, আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা। টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়...

জন্মদিনে মানুষের ভালবাসা মনে করিয়ে দেয় কর্তব্য: ভিড়ে মিশে গেলেন অভিষেক

সকাল হওয়ার অপেক্ষা নয়। রাত ১২টা বাজার অপেক্ষায় ছিল বাংলার বিপুল জনতা। জননেতা, তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক...