খোলস ছেড়ে বেরিয়ে একদা মায়ের সমান নেত্রীকে নিয়ে বিস্ফোরক শোভন

মান-অভিমান, ইগো-গোঁসা-অপমান, সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার দীর্ঘ ১৭মাস পর “হাতেখড়ি”! প্রথমবার বিজেপির (BJP) কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) ও তাঁর বিশেষ বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Baishakhi Banerjee)। দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্ক থেকে হুডখোলা জিপে মিছিল পৌছালো ঢাকুরিয়া সেলিমপুর পর্যন্ত। মিছিল শেষে শোভন-বৌশাখী জুটির মন রাখতে সম্বর্ধনা। তারপর বক্তব্য শোভনের। এবং শেষ বক্তা বৈশাখী।

২০১৮ সালে সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন না হওয়া যে শাসকদলের ভাবমূর্তি জনমানসে আরও নেতিবাচক করে তুলেছিল, শোভনের বক্তব্যে এদিন সেই কথা উঠে এসেছে। পুরভোট না হওয়া নিয়েও তিনি কটাক্ষ করেছেন রাজ্য সরকারকে। শোভন বলেন, “১২০ টি পুরসভার ভোট হচ্ছে না। এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে ভোটই হচ্ছে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে দেননি মমতা বন্দোপাধ্যায়। এটাই কি সোনার বাংলা তৈরি হয়েছে? আপনার কালীঘাটে শতরঞ্চির খোঁচা ধরে টেনেছে বিজেপি। ১৮ টি সিট নিয়ে গিয়েছে।”

নাম না করে বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে তাঁর তোপ, “রাজ্যের এমন মন্ত্রী এসেছেন যে যিনি মানুষের কাছে যেতে পারছেন না। কেন যে মিনি পাকিস্তান গড়তে গিয়েছিলেন। এখন পাকিস্তান বিরোধী বলতে হচ্ছে।”

তবে এদিন শোভনের সবচেয়ে “হট টক”, “আমায় মন্ত্রিত্বের কথা বলছে। আমি ওরকম মন্ত্রিত্ব হাওয়াই চটির মত ফেলে আসতে পারি।”

একদা মায়ের সমান নেত্রীকে আক্রমণ শানিয়ে শোভন বলেন, “যে পার্টির নামে কুৎসা করছেন, তাদের সঙ্গে নিয়েই ১৯৯৮ সালে সরকার গড়েছিলেন। আপনারা এতটাই প্রতি হিংসাপরায়ণ। তিনি কীভাবে ঢুকেছেন কোন কোন মন্ত্রিসভায়, তা আমি জানি। তদন্তে কেন সিবিআই-এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সঙ্গে শামিল হচ্ছে না আপনি? আয়ুষ্মান ভারত আপনরা করতে দিচ্ছেন না? খুব খারাপ লাগল, ঘাসফুলের পতাকা লাগিয়ে স্বাস্থ্য সাথী নিয়ে হাসপাতালগুলোকে লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। এটাই কি সোনার বাংলার অন্যতম উদাহরণ?”

এখানেই শেষ নয়। নাম না করে বিজেপির লাইন মেনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদ্রূপ করে শোভন “ভাইপো” বলে কটাক্ষ করেছেন। সেই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই আইনের দ্বারস্থ হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। তা সত্ত্বেও অভিষেককে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করতে ছাড়লেন না শোভন চট্টোপাধ্যায়। অভিষেককে নাম না করে “সোনার গোপাল” বলে কটাক্ষ করেন। তার জন্য চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফলাফল খারাপ হবে বলেই দাবি তাঁর।

উল্লেখ্য, মিল্লি আল আমিন কলেজে অধ্যাপনা করার সময় বারবার হেনস্তার অভিযোগ করেন বৈশাখী (Baisakhi Banerjee)। অভিযোগ, সরকারকে জানানো সত্ত্বেও তা মেটেনি। পরে তাঁকেই ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় সরকার। দু’জনেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে সমস্যা আরও বাড়ে। অধ্যক্ষের পদে ইস্তফা দেন বৈশাখী। যদিও তা গৃহীত হয়েছে বলে তাঁকে জানানো হয়নি। এরপর মিল্লি আল আমিন থেকে রামমোহন কলেজে বদলি করা হয় তাঁকে। তবে সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি বৈশাখী। ‘বাধ্য হয়ে’ শিক্ষকতা ছাড়েন বৈশাখী। এই ইস্যুতেও আরও একবার সুর চড়ালেন শোভন। বৈশাখীর হেনস্তাকারী অভিযোগে ফিরহাদ হাকিমকে আক্রমণ করেন। ঠিক কী কারণে একাধিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল বৈশাখীকে। তার সম্ভাব্য কারণও উল্লেখ করেন শোভন। তাঁর কথায়, “আমার যন্ত্রণা, দুঃখ হয়। আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বৈশাখীকে।”

আরও পড়ুন- বিশ্বস্তরে বিবেকানন্দের পূজারী মমতাই, বিজেপি করছে রাজনীতি: ব্রাত্য

 

Advt

Previous articleবিশ্বস্তরে বিবেকানন্দের পূজারী মমতাই, বিজেপি করছে রাজনীতি: ব্রাত্য
Next articleমন্ত্রী রাজীবের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে, কী বলবেন তিনি ১৬ তারিখ?