‘Model code of conduct’ বলতে কী বোঝায় ?

কণাদ দাশগুপ্ত: একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি বড় হাতিয়ার করতে চাইছে ‘আদর্শ নির্বাচন বিধি’ বা ‘মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট’-কে (Model code of conduct)৷ ওই দলের একাধিক নেতা বার বার এ কথা বলছেনও৷ এর কারন একটাই, এই বিধি চালু হলে রাজ্যের শাসনব্যবস্থা বা প্রশাসন সম্পূর্ণভাবেই চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে৷ প্রশাসন হয় প্রকৃত নিরপেক্ষ৷এতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সুবিধা হয় অনেকটাই৷

নির্বাচন কমিশন (Election commission Of India) এই বিধি চালু করেছে অবাধ এবং নিরপেক্ষ ভোটদান সুনিশ্চিত করতেই৷ বিধি তৈরির সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয় এবং সম্মতিক্রমেই বিধি চালু হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেই অর্থে এই বিধির কোনও আইনি ভিত্তি নেই ৷ মানা বা না-মানা বস্তুত ঐচ্ছিক।

প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো-র তথ্য অনুযায়ী, এই বিধি প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৬০-এর কেরল বিধানসভা নির্বাচনের সময়। ১৯৬২-র সাধারণ নির্বাচনেও এই বিধি চালু ছিলো৷ ১৯৭৯ সালে ভারতের নির্বাচন কমিশন এই ‘মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট’-এ সংশোধন করে শাসকদল- সংক্রান্ত বেশ কিছু বিধিনিষেধ যুক্ত করে৷ এর কারন একটাই, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে যাতে বাড়তি সুবিধে না পায়।

‘আদর্শ নির্বাচন বিধি’ চালু হয়ে যায় নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশের মুহুর্ত থেকেই৷ বহাল থাকে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
অর্থাৎ, যে মুহুর্তে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়, ঠিক তখন থেকেই চালু হয়ে যায় এই বিধি। এটি মূলত ভোট চলাকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর আরোপিত হয় বেশকিছু বিধিনিষেধ। অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা এই ‘মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট’৷ এই বিধির ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং তাদের প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়।

◾ভোটপর্ব চলাকালীন কোনও নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করতে পারবে না রাজ্য বা কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকার।

◾এই বিধির আওতায় থাকে নির্বাচনী সভা এবং প্রচার সংক্রান্ত বিধিনিষেধ৷

◾বিভিন্ন দলের নির্বাচনী- ইস্তেহার, শাসক দলের আচরণ, প্রশাসনের কর্মপদ্ধতির কেমন হবে, তা বলা আছে এই ‘মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট’-এ।

◾মূলত ৮টি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই বিধিতে।

• প্রার্থীদের সাধারণ আচরণ ও ভূমিকা
• দলের আচরণ ও ভূমিকা
• সভা-সমাবেশ ও মিছিল
• নির্বাচনের দিন কী কী করা যাবে এবং যাবেনা
• ভোটগ্রহণ কেন্দ্র
• নির্বাচনী পর্যবেক্ষক এবং তাদের ক্ষমতা
• শাসক দলের আচরণ
• বিভিন্ন দলের নির্বাচনী ইস্তেহার।

আরও পড়ুন:জোট নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে সময়সীমা বেঁধে দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি

◾বিধি অনুযায়ী, রাজ্যে বা কেন্দ্রের শাসকদল নির্বাচনী প্রচারে সরকারি ক্ষমতা এবং প্রশাসনের কোনও অপব্যবহার করতে পারবে না।
◾বিধি বলবৎ হওয়ার পর থেকে কোনও নতুন সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা বা নীতি প্রণয়ন করা যাবে না ।
◾কোনও গণমাধ্যমে সরকারি খরচে কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না৷
◾রাজ্য বা কেন্দ্রের মন্ত্রীরা সরকারি কাজের সঙ্গে কোনওভাবেই নির্বাচনী প্রচারকে মেশাতে পারবেন না।
◾নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করতে পারবেন না সরকারি গাড়ি।
◾নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সমান সুবিধে দিতে হবে প্রশাসনকে।
◾নির্বাচনী সভার মাঠ বা হেলিপ্যাড ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে।
◾বিধি চালু হওয়ার পর থেকে সরকার অস্থায়ী ভিত্তিতে নতুন কোনও কর্মী নিয়োগ করতে পারবে না।
◾রাজনৈতিক দলগুলি একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রচারে জাতপাত নিয়ে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এমন কিছু বলতে পারবে না।
◾মন্দির-মসজিদ-চার্চ বা অন্য কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রচারের কাজে লাগানো যাবে না।
◾প্রচারপর্বে ভোটারদের ঘুষ দেওয়া বা ভীতিপ্রদর্শন নিষিদ্ধ।
◾ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘন্টা আগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে বন্ধ করে দিতে হবে যাবতীয় নির্বাচনী প্রচার। কমিশনের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ইলেকশন সাইলেন্স’।
◾কোনও ব্যক্তি, প্রার্থী বা কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে যদি কারও বিরুদ্ধে আদর্শ নির্বাচন বিধির লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা পড়লে অভিযুক্তের কাছে ব্যাখ্যা চায় কমিশন।
◾অভিযোগ খণ্ডন করে বা সত্যতা স্বীকার করে, নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হয় বিধি ভঙ্গকারীকে।
◾অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে তিরস্কার করতে পারে অভিযুক্তকে। তবে অনেকের মতে, এটি নেহাতই লঘুদণ্ড।
◾আদর্শ নির্বাচনবিধি ‘লঙ্ঘনের’ অজস্র নজিরও আছে দেশজুড়ে৷ বিধি লঙ্ঘন করেও কোনও ‘শাস্তি’ হয়নি, এমন নজিরও আছে৷
◾গোয়া বিধানসভার নির্বাচনের সময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নির্বাচন কমিশনের তোপের মুখে পড়েছিলেন। প্রচারে কেজরিওয়াল বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছিলেন, “ভোটাররা টাকা নিন কংগ্রেস বা বিজেপি-র থেকে, কিন্তু ভোটটা আম আদমি পার্টিকে দিন।” ভৎসর্না করেছিল কমিশন।

Advt

Previous articleশীতের ঝোড়ো ব্যাটিং আগামী সপ্তাহেও!
Next articleশারীরিক নির্যাতনের পর নাবালিকাকে গলা কেটে খুন! জোড়াবাগানে উত্তেজনা