পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থান হবে রাজ্যে, অন্তর্বর্তী বাজেটে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

বিধানসভা নির্বাচন শিয়রে৷ সেই আবহে শুক্রবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, আগামী ৫ বছরে প্রায় দেড় কোটি কর্মসংস্থান হবে পশ্চিমবঙ্গে। ভোটের মুখে এই ঘোষণাতেই বিরোধীদের মাৎ করে দিতে পারেন তৃণমূলনেত্রী, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

রাজ্যের অন্তর্বর্তী বাজেট-ভাষণের প্রায় শেষভাগে এসে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা জানান৷ একইসঙ্গে একথাও জানান, এই চাকরি বা কর্মসংস্থান পুরোটাই সরকারি স্তরে নয়৷ দেড় কোটি কর্মসংস্থান হবে সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি এবং চুক্তিভিত্তিক স্তর মিলিয়ে৷ এই ঘোষণা যে নেহাতই কথার কথা নয়, তা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্থানের স্তরভিত্তিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন৷ বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যের একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের দরুন বিশাল কর্মসংস্থান তৈরি হবে৷ সেইসব প্রকল্পেই কাজ পাবেন প্রায় দেড়কোটি মানুষ৷ মুখ্যমন্ত্রীর হিসাব এইরকম:

⚫ দেউচা–পাচামি কয়লাখনি:‌

বীরভূম জেলার দেউচা পাচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোল ব্লকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এখানে দ্রুত কাজ চালু হবে। কোনও বাসিন্দাকে জমি থেকে উচ্ছেদ না করেই প্রথম দু’‌বছর সরকারি জমিতে কাজ হবে। এই প্রকল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দক্ষ ও অদক্ষ কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ পাবেন৷ শুধু বীরভূম নয়, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, মুর্শিদাবাদ জেলাগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আসবে এই দেউচা পাচামিকে কেন্দ্র করে৷

দেউচা–পাচামি কয়লাখনি

⚫ জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী:‌

রাজ্যের প্রথম শিল্পনগরী তৈরি হতে চলেছে পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে, প্রায় ২৪৮৩ একর জমি নিয়ে৷ একদিকে ডানকুনি থেকে বর্ধমান, দুর্গাপুর হয়ে আসানসোল পর্যন্ত, অন্যদিকে বড়জোড়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুর পর্যন্ত বিশেষ শিল্প করিডর তৈরি হবে৷ এর জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এখানে হবে বিশাল কর্মসংস্থান ৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই শিল্পনগরীর নামকরণ করেছেন ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’।

⚫ বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি:

নিউ টাউন এলাকায় ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে ২০০ একরের বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি প্রকল্প৷ এই ভ্যালিতে ৮৯ একর জমি দেওয়া হয়েছে ২৪টি IT কোম্পানিকে৷ এখানে ১১,৩১৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে। টিসিএস কাজ শুরু করেছে। ইনফোসিস, উইপ্রো-সহ বেশকিছু সংস্থাকে রাজারহাটের ফিনান্সিয়াল হাব ও অন্যান্য জায়গায় জমি দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও হাসিমারায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রেই প্রচুর কর্মসংস্থান হতে চলেছে৷

বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি

⚫ তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর:‌

পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠছে৷ এই প্রকল্পের পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হবে ৭ হাজার কোটি টাকা৷ এখানেও কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর

⚫ অশোকনগরে তেলের খনি:‌

উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে ONGC–র তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের এক বৃহৎ প্রকল্প চালু হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীল বেশ কিছু ‘ডাউনস্ট্রিম’ শিল্প এখানে গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থান এখানেও হবে বিপুল৷

অশোকনগরে তেলের খনি

⚫ সরকারি শূন্যপদে নিয়োগ:‌

বাজেট-ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে তৃণমূল সরকার ৪ লক্ষের বেশি শূন্যপদে নিয়োগ করেছে। এখনও বিভিন্ন দফতরে ৫০ হাজার এবং পুলিশে ৭২৯১টি পদ শূন্য আছে। আগামী তিন বছরে এই সব শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে।

আরও পড়ুন- ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন মুখ্যমন্ত্রী

⚫ মাটির সৃষ্টি:‌

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের অনুর্বর জমিতে উদ্যানপালন, মৎস্যচাষ, প্রাণী বিকাশ উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা হচ্ছে৷ এই প্রকল্পের নাম, ‘‌মাটির সৃষ্টি’‌। ২০২০ সালে ১৯৪২টি জায়গায় এই প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে মোট ১৩,০০০ একর জমির ওপর৷ আগামী বছর আরও ১৪ হাজার একর জমিতে এই একই কাজ করা হবে। এখানেও প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

⚫ ১০০ দিনের কাজ:‌

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে ১০০ দিনের কাজে আমরা ৭.‌২৪ কোটি মানুষকে কাজ দিতে পেরেছি। এ বছর ১০০ দিনের কাজে আরও ১.‌১ কোটি মানুষকে কাজ দিয়ে সারা দেশের মধ্যে আমরা প্রথম স্থান অর্জন করেছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আরও বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে৷

অন্তর্বর্তী বাজেট ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী এরপরই দাবি করেছেন,”আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি এবং চুক্তিভিত্তিক স্তর মিলিয়ে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।”

আরও পড়ুন- ব্যারাকপুর-বারাসাত মেট্রো মাটির নীচ থেকেই, মোদির হস্তক্ষেপে কাটলো জমি জট

Advt

Previous article“খেলা হবে” স্লোগানে মাতল কোন্নগর, পুড়ল প্রবীর ঘোষালের কুশপুতুল
Next articleএবারের আইপিএলে সর্বোচ্চ বেস প্রাইসে সাকিব