হেস্টিংসে হেস্তনেস্ত! ওয়ার হাউসে কর্মী অভ্যুত্থানের পর প্রার্থী বদলের পথে বিজেপি?


এখন আর লড়াই তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে নয়, গেরুয়া শিবিরের গৃহযুদ্ধই এখন মাথাব্যাথার কারণ হয়েছে অমিত শাহ (Amit Sha) জেপি নাড্ডাদের (JP Nadda) কাছে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় প্রার্থী তালিকা (BJP Candidate List) ঘোষণা করার পরই দলের অন্দরের বিদ্রোহ রাস্তায় নেমে এসেছে। হেস্তনেস্ত চাইছে স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে আদি বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। বিদ্রোহের আঁচ সোজা গিয়ে পড়েছে রাজ্য বিজেপির অট্টালিকাসম নির্বাচনী দফতর হেস্টিংসের (Hestings) ওয়ার হাউসে। কার্যত “কর্মী অভ্যুত্থান”-এ দিশেহারা নেতৃত্ব ও লোকাল ম্যানেজাররা। টাকার বিনিময়ে টিকিট দেওয়ার অভিযোগে জতুগৃহ হেস্টিংস। এ যেন যুদ্ধের আগেই যুদ্ধ শেষের ইঙ্গিত। পরাজয়ের ভ্রুকুটি।

কোথায় স্থানীয় নেতাকে অগ্রাহ্য করে প্রার্থী করা হয়েছে সাংসদকে। কোথাও আবার টিকিট পেয়েছেন কোনও তারকা। বা তৃণূলত্যাগী। এই নিয়েই বিজেপি কর্মীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। বিক্ষুব্ধরা হেস্টিংসে বিজেপি–র নির্বাচনী কার্যালয়েও বিক্ষোভে সামিল। সেই আঁচ পোহাতে হল শিবপ্রকাশ, মুকুল রায়, অর্জুন সিংহ, সব্যসাচী দত্ত সহ বিজেপি–র একাধিক নেতাকে। পুলিশের ব্যারিকেডও ভেঙে দেওয়া হল।

দফায় দফায় বিক্ষোভ হেস্টিংসের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে এবার রায়দিঘির প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বিজেপি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি ও ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট পেয়েছেন তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে নাম লেখানো দুই নেতা। যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এলাকায় এলাকায়।

রায়দিঘির শান্তনু বাপুলির প্রার্থীপদ বদলের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে হেস্টিংসের বিজেপি কার্যালয়। অবশেষে কর্মী সমর্থকদের ক্ষোভ প্রশমনে উদ্যোগী হল বিজেপি নেতৃত্ব। আশ্বাস দেওয়া হয়, রায়দিঘির জন্য নতুন প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। রায়দিঘি মন্ডল সভাপতি জানান, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁদের। প্রার্থী বদলের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তাঁদের। বলেন, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে সদর্থক বার্তা পাবেন কর্মী-সমর্থকেরা। এই আশ্বাস পাওয়ার পর বিক্ষোভ তুলে নেন রায়দিঘির বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বন ও ভূমির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন শান্তনু বাপুলি। রায়দিঘি বিধানসভায় তৃণমূল থেকে তাঁর টিকিট পাওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু টিকিট না পেয়ে তিনি যোগাযোগ রেখেছিলেন বিজেপির সঙ্গে। তারপর রবিবাসরীয় দুপুরে জানা যায়, বিজেপি রায়দিঘি বিধানসভা আসনে প্রার্থী করেছে শান্তনুকে। আর তার পরেই শুরু হয় বিজেপির পুরোনো নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। যার প্রেক্ষিতে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করতে চলেছে বিজেপি।

এদিকে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পরই দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছিলেন দীপক হালদারের লোকজন। কিন্তু দীপককে প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারেননি আদি বিজেপির ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি দেবাংশু পান্ডার অনুগামীরা। বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এদিকে হাওড়ার পাঁচলা এবং উদয়নারায়ণপুরের প্রার্থী বদল নিয়ে এখনও কোনও আশ্বাস হেস্টিংসের অফিসের সামনে লাগাতার বিক্ষোভে অনড় সেখানকার সমর্থকেরা। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য জানালেন, ” দলের নিয়ম বিরোধী কাজ করছে কর্মীরা। অনভিপ্রেত। আমাদের দলে এটা হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। দল যদি মনে করে, এক দিন আগে যিনি যোগ দিয়েছেন, তাঁকেও টিকিট দিতে পারে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফর চলাকালীনই প্রার্থী বাছাই ঘিরে কার্যত ‘গৃহযুদ্ধ’ একেবারেই ভালো ইঙ্গিত নয়! সোমবার কলকাতায় দলীয় কর্মীদের তুমুল বিক্ষোভের সাক্ষী থাকল হেস্টিংসের নির্বাচনী কার্যালয়। হুগলির চুঁচুড়ায় ভাঙচুর করা হল জেলা সাংগঠনিক অফিস। এক মণ্ডল সভাপতিকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। ভোটযুদ্ধ শুরুর আগেই এভাবে ঘরের ঝামেলা পথে নেমে আসায় বেশ বেকায়দায় বঙ্গ বিজেপি। সবে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম চারটি দফা মিলিয়ে ১২৩ জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়েছে। বাকি এখনও ১৭১টি আসন। এখনই যদি এই অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে বাকি আসনগুলিতে প্রার্থী ঘোষণার পর ঠিক কী পরিস্থিতি তৈরি হবে? তা সামলানোই বা যাবে কীভাবে? আপাতত এই প্রশ্নে চরম উদ্বেগে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রার্থী বাছতে মাথায় হাত পনেছে তাঁদের। দলীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বঙ্গ নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে।

Advt

এদিকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহনেতা অমিত মালব্য অবশ্য বলেছেন, “নির্বাচন পর্বে রাজনৈতিক কর্মীরা টিকিট চাইবেন, এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে যে রাজ্যে দলের জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে এই ঘটনা ঘটবে।” যদিও বিজেপির অন্দরের ব্যাখ্যা, দলে দলে লোক যোগদান করালেই যে জেতার মতো যোগ্য প্রার্থী তৈরি হয় না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই কারণেই টিকিট দিতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, তারকা এবং দলবদলুদের। সব মিলিয়ে চরম অস্বস্তিতে বিজেপি। প্রধান প্রতিপক্ষ যখন সব কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই প্রার্থী পদ নিয়ে দলীয় বিদ্রোহে ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির। এখনও কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলিতে প্রার্থী পদ ঘোষণা করতে পারেনি বিজেপি। ফলে আগামীদিনে বিদ্রোহের আগুন যে আরও বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Previous article‘বিজেপি বনাম বিজেপি’র কলহে ‘মিশন বাংলা’র দফারফা, বৈঠকে রাজ্য নেতাদের ধমক শাহ-নাড্ডার
Next articleপরিবারতন্ত্রের লাইনে হেঁটে ভাঙড়ে নিজের ভাইকে ISF প্রার্থী করছে আব্বাস