ভোটের (Assembly Election) মুখে বঙ্গ বিজেপিতে (BJP) জোর কোন্দল। প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই তো দূরের কথা, নিজের গৃহযুদ্ধ সামলাতে হিমশিম গেরুয়া শিবিরের রাজ্য থেকে দিল্লি নেতৃত্ব। তৃণমূলের (TMC) দলছুট তৎকাল বিজরপি নেতাদের টিকিট দেওয়া নিয়ে আদি বিজেপির মধ্যে তুমুল বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। আবার টিকিটের লোভে যাঁরা পদ্ম শিবিরে পা রেখেছিলেন, তাঁরা টিকিট না পাওয়ার হতাশায় পুরোনো ঘরে ফিরতে চাইছেন।

এই যেমন বাঁকুড়ার নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shyamaprasad Mukherjee), মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য হোটেলের বাইরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করলেন। অসময়ে দল থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। ভেবে ছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ক্ষমা করে দিয়ে কাছে টেনে নেবেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি! মমতা ফিরেও তাকালেন না। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে তৃণমূল নেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলে সুবিধাবাদীদের কোনও জায়গা নেই।
জেলা নেতাদের কাছেও দরবার করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদবাবু। লাভ হয়নি। জেলা নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দলবদলু শ্যামাপ্রসাদের কোনও জায়গা নেই তৃণমূলে। দলের তিনি কেউ নন। তবে শ্যামাপ্রসাদবাবু যদি মনে করেন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের জন্য তৃণমূলের পাশে দাঁড়াবেন, সমর্থন করবেন সেটা ব্যক্তিগত ভাবে তিনি করতেই পারেন।

একদা রাজ্যের বস্ত্র, নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী এবং বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে হেরে যান। বাঁকুড়া জেলা সভাপতিও ছিলেন। হঠাৎ দু’মাস আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে টিকিট পাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু বিজেপি তাঁকে টিকিট দেয়নি। তাই ক্ষুব্ধ শ্যামা আসেন মমতার সঙ্গে দেখা করতে। তিনিও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সুতরাং শ্যামার একূল–ওকূল দুকূল গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।

শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরেই তিনি বিজেপিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে শুভেন্দু লাভবান হলেও রাজনীতির বাণিজ্যে তিনি লোকসানের মুখই দেখলেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে গেরুয়ার প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে শ্যামাপ্রসাদবাবুর।

ক্ষোভ উগড়ে দিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। বলেন, “বিজেপিতে প্রার্থী হতে গেলে সাড়ে তিন কোটি টাকা দিতে হবে। তাই একবার দিদির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম ব্যক্তিগত প্রয়োজনে।” তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চান একথা মুখে না বললেও মনে মনে প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমো দ্বিচারিতা ও সুবিধাবাদীদের পছন্দ করেন না। তাই মুখ ফিরিয়েই রাখলেন। আর হতাশ হয়েই ফিরতে হলো শ্যামাপ্রসাদকে।
