রক্তাক্ত চতুর্থ দফা! শীতলকুচিতে বাহিনীর গুলিতে মৃত ৪ তৃণমূল কর্মী, নিন্দা সবমহলে

চতুর্থদফার সকাল থেকেই রক্ত ঝরেছে কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভায় (Shitalkuci Assembly)। জোর পাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫/১২৬নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর(Central Force) গুলিতে মৃত্যু হয় চারজনের। আহত আরও চার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল(Tmc), সিপিআইএম-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। রাজ্যে প্রচারে এসে এই ঘটনার দায়ে তৃণমূলের দিকে ঠেলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাল্টা অমিত শাহর ইস্তাফা দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Benarjee)।

সকালই কোচবিহারের শীতলকুচি পাঠানপুলি, খলিসামারি এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকালে থেকেই ভোটগ্রহণ ঘিরে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিজেপি কর্মীরা কিছু সময়ের জন্য পথ অবরোধ করে বলেও অভিযোগ। সংঘর্ষের জেরে বোমাবাজি হয়, চলে গুলিও। এই ঘটনায় ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণের গুলি লাগে বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। তিনি প্রথমবার ভোট দিতে গিয়েছিলেন বলে খবর।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শীতলকুচি বিধানসভার জোর পাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫/১২৬নং বুথে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, সেই সময় নির্বিচারে গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। যার জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১ জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে মৃত্যু হয় ৩ জনের। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে আরও ৪ জন আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তাঁরা সবাই তৃণমূলের কর্মী-সমথর্ক বলে পরিচিত। ঘটনায় এলাকায় হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে। কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতদের বাড়ির সদস্যরা। ঘটনার জেরে ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে ওই বুথে। পাশাপাশি, মৃতরা তৃণমূলের সমর্থক বলে দাবি করে তৃণমূলের তরফে জানান হয়েছে, “কেন্দ্রীয় বাহিনী হয়ে দালালি করছে বিজেপির”।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের তরফে জানানো হয়েছে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শীতলকুচির ঘটনার পর কমিশনের তরফে রাজ্যের বিশেষ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়। কমিশনকে দেওয়া রিপোর্টে বিবেক দুবে জানান, ঘটনার সময় ৩০০ থেকে ৪০০ লোক সিআইএসএফকে ঘিরে ধরে। কেন্দ্রীয় বাহিনী আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে বলে কমিশনকে জানিয়েছেন তিনি। এলাকা পরিদর্শনের পরে একই কথা জানান পুলিশের জলপাইগুড়ি রেঞ্জের ডিআইজি ই আনাপ্পাও। আমতলী মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে ঘটনার পর যান কোচবিহারের বিশেষ পর্যবেক্ষকও।

শীতলকুচির ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সেখানে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি৷ বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানায় তৃণমূল কংগ্রেস (Tmc)। অভিযোগ পত্রে লেখা হয়েছে, কোচবিহারের শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরীহ মানুষদের উপর ঠাণ্ডা মাথায় গুলি চালানো হয়। রবিবার, তৃণমূলের পক্ষ থেকে ব্লকে ব্লকে কালো ব্যাজ পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit shah) ইস্তফার দাবিতে মিছিল করা হবে৷ শনিবার, দক্ষিণবঙ্গে প্রচার সেরেই শিলিগুড়ি (siliguri) যান মমতা। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলা দখলে হিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি। শীতলকুচির ঘটনার পিছনে কারা দায়ী? তদন্ত করবে সিআইডি। শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে শিলিগুড়িতে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

শীতলকুচিতে গুলিচালনা এবং পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন যাদবপুরের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty) ৷ নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি ৷ কমিশনের কাছে স্পষ্ট তথ্যের দাবি জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও (Adhirranjan Chowdhuri)। তিনি বলেন, ”কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর মানে এটা নয় যে, গুলি চালাতে হবে। কেন গুলি করে মারা হল? তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত।” একই সঙ্গে প্রশাসন যেন কোনও রাজনৈতিকদলের দ্বারা প্রভাবিত না হয়, সেই দাবিও জানান তিনি।

আরও পড়ুন- বাবুলের চেনা মেজাজ উধাও, টালিগঞ্জে টি-টোয়েন্টি খেললেন অরূপ

Advt

Previous articleধোনির সিএসকের বিরুদ্ধে জয় পেল পন্থের দিল্লি
Next articleযাদবপুরে বিজেপির সাহায্যে জিতছেন তৃণমূলের “গ্যারেজ” মলয়, বলছেন সুজনের অনুগামীরাই