মোদির সোনার গুজরাতে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, দলে দলে ঘরমুখো পরিযায়ী শ্রমিকরা

মোদির সোনার গুজরাতে কার্যত ভেঙে
পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হাহাকার সর্বত্র ।
করোনা সঙ্কট এতটাই তীব্র যে মুখ থুবড়ে পড়ার জোগাড় ‘ডবল ইঞ্জিন’-এ গড়ে ওঠা ‘সোনার গুজরাত’।
নিন্দুকেরা বলছেন, ‘গুজরাত মডেল’ এর স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কঙ্কালসার চেহারা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে !
অক্সিজেনের অভাব, ‘কোভিড অ্যাম্বুলেন্স’ না পাওয়া, হাসপাতালে বেডের হাহাকার—মোদি-রাজ্যে সর্বত্র এখন আতঙ্কের ছবি। তাই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, কেন্দ্র-রাজ্যে একই দলের সরকার থেকেও তাহলে লাভ কী? পরিস্থিতি এমনই যে গুজরাত হাইকোর্ট পর্যন্ত চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাজ্যের এই করোনা সঙ্কটকে ‘হেল্থ ইমার্জেন্সি’ অ্যাখ্যা দিয়েছে উচ্চ আদালত। এর মধ্যেই বিনা চিকিৎসায় গান্ধীনগরে বাঙালি অধ্যাপিকা ডঃ ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় (৪৮) এর মৃত্যু ইন্ধন জুগিয়েছে মডেল-বিতর্কে।
। গান্ধীনগরে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব গুজরাতের ন্যানোসায়েন্সের ডিন ছিলেন তিনি। ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার, লন্ডনের ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিজিটিং প্রফেসর ন্যানোসায়েন্সের দুনিয়ায় এক পরিচিত নাম। সময়মতো বিআইপিএপি অক্সিজেন কনসেনট্রেশন না মেলায় ইন্দ্রাণীদেবীর চিকিৎসা করা যায়নি। গত সপ্তাহেই তাঁর কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তীব্র শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় তাঁকে প্রথমে আমেদাবাদ পুরসভার নির্ধারিত কোভিড সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোভিড প্রোটোকলযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সে আনা হয়নি এই কারণ দর্শিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। চরম বিপজ্জনক অবস্থায় ইন্দ্রাণীদেবীকে সেখান থেকে সরিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর সহকর্মীরা। তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। কিন্তু সেই বেসরকারি হাসপাতালে তখন প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ছিল না। কয়েকটি হাসপাতাল খুঁজেও ইন্দ্রাণীদেবীর সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা তা পাননি। পরে বহু কষ্টে যখন সেটি পাওয়া যায়, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। তীব্র শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয় ওই বাঙালি অধ্যাপিকার।
আসলে ইন্দ্রাণীদেবীর মৃত্যু উদাহরণ মাত্র। বস্তুত গোটা গুজরাতেই কোভিড সংক্রমণের চিকিৎসা সঙ্কট নিয়ে হাহাকার চলছে। সেখানে শুধু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়নি, চিকিৎসা ব্যবস্থা একপ্রকার ভেঙে পড়েছে বলেই অভিযোগ গুজরাতবাসী এবং বিরোধী দলগুলির। শুধু যে হাসপাতালে বেড নেই তাই নয়, কোভিডের পর্যাপ্ত ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। অবিলম্বে জিএমডিসি কমিউনিটি হলকে ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট ডিআরডিও কোভিড হাসপাতালে পরিণত করতে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে গুজরাত সরকার।

এদিকে, সোমবারই গুজরাত হাইকোর্ট বলেছে, এ রাজ্যে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মানুষের ধারণা যে তাদের বাঁচামরা আপাতত ঈশ্বরের হাতে।

আমেদাবাদ, সুরাত, ভদোদরা, রাজকোটজুড়ে করোনায় মৃত্যু বাড়ছে। এই চার শহরেই সবথেকে বেশি পরিযায়ী শ্রমিকের বাস। সেখানে করোনা বৃদ্ধি এবং চরম চিকিৎসা সঙ্কটের কারণে গত কয়েকদিন ধরেই দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকরা আবার ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের রাজ্যে।

Advt

Previous articleহাওয়া তুললেও তৃণমূলের মতুয়া ভোটে থাবা বসাতে পারেনি বিজেপি, বলছে পরিসংখ্যান
Next article‘নিজামুদ্দিন ও কুম্ভমেলার মধ্যে তুলনা করা উচিত নয়’, স্পষ্ট জানালেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী