ভারতীয় ও তিব্বতীয় প্লেটের নড়াচড়াতেই বারবার ভূমিকম্প উত্তরে

কিশোর সাহা : ভূস্তরের নীচে যে প্লেট রয়েছে তার নড়াচড়ার জন্যই ভূমিকম্প হয়ে থাকে এ কথা সকলেই জানেন। কিন্তু, উত্তরবঙ্গ সহ গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে সাম্প্রতিক অতীতে বারবার ভূমিকম্প কেন হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ যেন বাড়ছে আমজনতার মধ্যে। যে উদ্বেগ যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদদেরই অনেকেই। তবে আবহাওয়াবিদরদের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় প্লেট ও তিব্বতের প্লেটের নড়াচড়ার জন্যই উত্তরবঙ্গ ও লাগোয়া হিমালয় সংলগ্ন এলাকায় অপেক্ষাকৃত বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া মন্ত্রকের সিকিমের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা জানাচ্ছেন, “ভারতীয় প্লেট ও তিব্বতীয় প্লেটের নড়াচড়ার জন্যই মাঝেমধ্যে এমন ভূমিকম্প হয়। বুধবার সকালেও তাই-ই হয়েছে।” অবশ্য ভূ বিজ্ঞানীরা অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের মধ্যে প্রবেশ করার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের নানা এলাকায় বারেবারেই ভূমিকম্প হচ্ছে।

আরও পড়ুন-পশ্চিমবঙ্গের সব হাসপাতালে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে মরিয়া নবান্ন

বুধবার অসমের তেজপুরে কম্পনের উৎসস্থল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৪। ভুপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিমি গভীরে কেঁপে ওঠে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসামের তেজপুরে বেশ কয়েকটি জায়গায় বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছ। অনেক এলাকায় লোকজন ভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দু-বার ভূমিকম্প হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য কম্পন স্থায়ী হয়। দ্বিতীয় কম্পনের মাত্রা আরও বেশি ছিল। সকাল ৭.৫৪ থেকে ৭.৫৮ টার মধ্যে ওই দুটি কম্পন অনুভূত হয়।

ভূ বিজ্ঞানীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর থেকেই বঙ্গোপসাগরের একটি অংশ ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। তাতেই বারবার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে। বুধবারের ভূমিকম্পের পরে আফটার শকের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি।
আরেকটি সূত্র অনুযায়ী, শিলং মালভূমির দক্ষিণে একটি চ্যুতিরেখার অতি সক্রিয় হওয়ার ফলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়েছে। ভূ-বিজ্ঞানীদের একটি দলের সমীক্ষা অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কারণ মাটির খুব গভীরে নয় বরং ওপরের দিকেই ঘটে থাকে। সেখানে প্লেট থাকে প্রায় তরল বা আংশিক তরল। ওই সমীক্ষার মত বলছে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ৪৬.৭ কিলোমিটার নীচ থেকে অরুণাচল প্রদেশের ৫৫ কিলোমিটার নীচ পর্যন্ত সংযুক্ত একটি অংশে ওই তরলাংশটি ইষৎ উঁচু হয়ে রয়েছে। তাঁরা দেখাচ্ছেন, ওই জোনে টেকটনিক প্লেট নীচের শিলাগুলি উপরের পাতে আঘাত করছে। তাঁরা একটি বিবৃতিতে দাবি করেছেন, ভারতে পূর্বতম অঞ্চলে দুটি ভিন্ন গভীরতায় ভূমিকম্প হচ্ছে, মধ্যবর্তী অঞ্চলটি উপরের দিকে চাপ দেওয়ায়।
এদিনের ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু, অসমের তেজপুর এলাকায় ক্ষতির বহর অনেক। রাস্তায় ফাটল ধরেছে। অনেক বাড়িতেও ফাটল দেখা গিয়েছে।

Advt

Previous articleদিল্লি দখলের আইন বলবৎ করল কেন্দ্র, বিজেপির নিন্দায় বিরোধীরা
Next articleফের মুখ পুড়ল পাকিস্তানের, চকলেট চুরি করলেন পাক দূতাবাসের দুই কূটনীতিক!