নতুন সরকারের কাছে বিজন সেতু নারকীয় হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবি আনন্দমার্গ সন্ন্যাসীদের

১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল। আজ থেকে ৩৯ বছর আগের এক অভিশপ্ত দিন। সাক্ষী কলকাতা-সহ গোটা বাংলা। ধর্মীয় প্রচারক সংস্থা আনন্দমার্গের ১৭ জন সন্ন্যাসীকে পিটিয়ে, তারপর জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। শতাব্দীর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তারা। বাংলায় সে সময় বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ৩৯ বছর পর নারকীয় সেই ঘটনার বালিগঞ্জ বিজন সেতুর উপর। সেই সময় জ্যোতি বসুর
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ উঠেছিল। গোটা ঘটনায় রাজ্য তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজনীতি থেকে সব মহল।

চাপের মুখে পড়ে জ্যোতি বসু সেই সময় দেব কমিশন গঠন করেন। কিন্তু আনন্দমার্গের সেই কমিশনের উপর ভরসা ছিল না। কারণ, এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল কান্তি গাঙ্গুলি-সহ সিপিএমের তাবড় নেতারা। পরবর্তী সময়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর আনন্দমর্গী ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অমিতাভ লালার তত্ত্বাবধানে কমিশন গঠন হয়। সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে বলেও শোনা যায়। কিন্তু দোষীরা এখনও শাস্তি পায়নি।

চার দশক পেরিয়ে ফের একটা ৩০ এপ্রিল। অমর দধীচিগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পথে নামলেন আনন্দমার্গের শতাধিক সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসিনী ও ভক্তকুল। করলেন মৌন মিছিল। সঙ্গে বিচার বিবাগীয় তদন্তের দাবি করলেন আনন্দমার্গীরা। এই দিনটিকে তারা ‘‌মানবতা বাঁচাও দিবস’‌ হিসেবে পালন করে থাকেন।

আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ সেই ঘটনার পর থেকেই সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতির নেতৃত্বে ওই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে আসছে। আনুষ্ঠানিক বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য বারংবার আবেদন জানানোর পর ২০১২ সালে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য একটি তদন্ত-কমিশন গঠন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিযুক্ত ‘‌অমিতাভ লালা তদন্ত কমিশন’‌ ইতিমধ্যেই তদন্তের শেষ করে প্রতিবেদন পেশ করেছে। আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের তরফে দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কারা আসল দায়ী বা দোষী কারা তা এখনও অধরাই থেকে গিয়েছে।
তাই আগামী ২ মে-এর পর যে দলই নতুন সরকার গঠন করুক, তাদের কাছে বিজন সেতু নারকীয় হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তির অগ্রিম দাবি আনন্দমার্গ সন্ন্যাসীদের।

এদিনের এই অনুষ্ঠানে না দধীচিগণের দগ্ধ, বিকৃত প্রতিচ্ছবিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের সাধারণ সম্পাদক আচার্য ভবেশানন্দ অবধূত, আচার্য সুতীর্থানন্দা অবধূত, আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত, আচার্য কল্যাণেশ্বরানন্দ অবধূত, আচার্য বীতমোহানন্দ অবধূত, রবীশানন্দ অবধূত, আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত, আচার্য প্রিয়কৃষ্ণানন্দ অবধূত, আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত, অবধূতিকা আনন্দ করুণা আচার্যা ও অবধূতিকা আনন্দ বিশোকা আচার্যা। আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত এই বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট ও সপ্তদশ দধীচিদের মহান আদর্শের জন্যে চরম আত্মত্যাগের বিষয়ে আলোচনা করেন। ১৯৮২ সালের ৩০ শে এপ্রিলের পৈশাচিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শ্রী বিভাংশু মাইতি সেই দিনের ঘটনার চাক্ষুষ বিবরণ ও আনন্দ মার্গের বিশ্বব্যাপী সেবামূলক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন।

Advt

Previous articleকরোনা আক্রান্ত অভিনেত্রী অনসূয়া মজুমদার, রয়েছেন হোম আইসোলেশনে
Next articleএবার করোনা যুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন শিখর ধাওয়ান