অনুপ্রেরণা মমতা, প্রাপ্তির আশায় স্যানিটাইজার স্প্রে গান হাতে দার্জিলিঙে ঘুরছেন বিমল গুরুং

কিশোর সাহা

কিশোর সাহার কলম: নিজে পাহাড়ের তিন আসনের একটিও না পেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) লাগাতার তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে “হ্যাটট্রিক” করায় পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের স্বপ্ন দেখছেন বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। দল সূত্রের খবর, সে কথা জানিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের এতটুকুও হতাশ না হয়ে তৃণমূল নেত্রী(TMC leader) তথা মমতা ব্যানার্জীকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর(chief minister) কথা অনুযায়ী, সব কিছু ভুলে পাহাড়ে কোভিড মোকাবিলার কাজে হাতে-কলমে নেমে পড়েছেন বিমল গুরুং নিজেও। ঘুম ভাঙলেই দার্জিলিং(Darjeeling) সদর ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা দেখছেন, এলাকায় স্যানিটাইজার স্প্রে গান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একদা পাহাড়ের মুকুটহীন সম্রাট বিমল। বিলি করছেন মাস্কও।

প্রায় চার দিন দেখা যাচ্ছে, বিমল গুরুংপন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জিএলপি সদস্যরা পিপিই কিটস পরে স্প্রে করছেন। কখনও দেখা যাচ্ছে বিমল নিজেই স্প্রে-গান ধরে ছড়িয়ে চলেছেন জীবাণুনাশক। শনিবারও সকাল থেকে ম্যাল চৌরাস্তা, ক্লাবসাইড রোড ও দার্জিলিং শহরের লাগোয়া এলাকায় প্রায় দুপুর অবধি স্যানিটাইজার স্প্রে নিয়ে জীবাণুনাশক ছড়িয়েছেন গুরুং ও তাঁর দলবল। যা দেখে পাহাড়বাসীদের অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, অতীতে যে ভাবে এলাকায় ঘুরে আমজনতার নানা সমস্যার সমাধান করে গুরুং জনপ্রিয় হয়েছিলেন, ফের সে পথেই হাঁটছেন তিনি।

পাহাড়ের তিন আসনের মধ্যে দুটি বিজেপি পেয়েছে। একটি জিতেছেন বিনয় তামাংরা। তার পরেই বিমল গুরুংয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে। সূত্রের খবর, গুরুং দলের নেতা-কর্মীদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, তিনি পাহাড়ে কিছু করতে না পারলেও সমতলের বেশ কয়েকটি আসনে যে তৃণমূলকে সাহায্য করতে পেরেছেন সেটা প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব মানছেন। শুধু তাই নয়, দলের নেতা-কর্মীদের কাছে নানা ভাবে বার্তা পাঠিয়ে গুরুং জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে মমতা বন্দ্যোপাধায়ের হাত ধরেই।

বিমল গুরুং তো বটেই, বিনয় তামাংরাও পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের আশা করছেন। উভয় তরফেই প্রচার করা হচ্ছে, পাহাড়ে বিজেপি দুটি আসন পেলেও আদতে জনপ্রতিনিধিরা কোনও উন্নয়নের কাজই করবেন না। দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে অতীতে চার দফায় বিজেপির সাংসদকে পাহাড় থেকে জেতানোর পরেও কেন দার্জিলিঙের সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানে কেন্দ্র উদ্যোগী হয়নি সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিমল গুরুং ও বিনয় তামাংদের ভোট ভাগাভাগি না হলে যে পাহাড়ের একটি আসনও বিজেপি জিতত না সেটাও উভয় তরফই মানছে।
মোর্চার অন্দরের খবর, কোভিড জনিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে পাহাড়ে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে অবধি বিমল গুরুং ও বিনয় তামাংদের করোনা মোকাবিলার কাজেই অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো কাজে নেমে পড়েছেন গুরুং নিজেই।

অবশ্য পাহাড়ের অনেকে এর পিছনে গুরুংয়ের আরেকটা লক্ষ্যও দেখছেন। তা হল, শীঘ্রই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা মনোনীত হওয়ার কথা। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর আগে জিটিএ-এর মনোনীত চেয়ারম্যান ছিলেন অনীত থাপা। তার আগে বিনয় তামাং। নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন বিমল গুরুং।

আরও পড়ুন:নির্বাচনে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ, বহিষ্কার করা হল তৃণমূলের দুই নেতাকে

এখন বিমল-বিনয় উভয় শিবিরই তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ। ফলে, নতুন বোর্ডে দুই শিবিরের প্রতিনিধিদেরই রাখা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। একদিকে বিনয়রা যেমন একটি আসন জিতে নিজেদের পাহাড়ে কর্তৃত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা যে মুখ্যমন্ত্রী পূরণ করতে চেষ্টা করবেন সেই ব্যাপারে তাঁরা অনেকটাই নিশ্চিত। তেমনই, প্রায় দুমাস ধরে ১৫০টি সভা করে লাগাতার বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া বিমল গুরুংয়ের হাত একেবারে খালি থাকবে সেটাও হতে পারে না বলে পাহাড়ের অনেকের মত।

Advt

Previous articleনির্বাচনে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ, বহিষ্কার করা হল তৃণমূলের দুই নেতাকে
Next article‘করোনা রোখার থেকে টুইট মুছতে বেশি ব্যস্ত মোদি, ক্ষমাযোগ্য নয়’, জানালো LANCET journal