নারদা মামলা: কেন জামিনে স্থগিতাদেশ? প্রশ্ন স্বনামধন্য আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংয়ের

নারদা কাণ্ডে (Narada Scam) রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর জামিনের উপর কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) জামিনের স্থগিতাদেশ (Stay Order of Bail) নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) স্বনামধন্য ও বর্ষীয়ান আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং (Indira Joy Singh)। তাঁর স্পষ্ট কথা, আবেদন নয়। এফিডেভিট নয়। শুধুমাত্র একটি ই-মেলের ভিত্তিতে কীভাবে নিম্ন আদালতের জামিনের আদেশ নাকচ হয়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টে? নিম্ন আদালতে পাওয়া জামিনের পর ঠিক কখন ওই চিঠি লেখা হল? প্রক্রিয়াগত আইনকে এভাবে উপেক্ষা করা হলে তাকে কী বলা হয়? আইনের শাসনের মৃত্যু?

দেশের অন্যতম সেরা আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং “দ্য লিফলেট” পত্রিকায় একটি দীর্ঘ নিবন্ধে নারদা মামলায় চার নেতা-মন্ত্রীর জামিনের স্থগিতাদেশ নিয়ে সিবিআই এবং আদালত ইস্যু নিয়ে একাধিক যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আইনের পরিভাষা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, “আমি অত্যন্ত বিস্মিত যে, সিবিআই ই-মেলে কলকাতা হাইকোর্টে একটি চিঠি পাঠিয়েছে এবং সেখানে বলা হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী নাকি ২ থেকে ৩ হাজার সমর্থক নিয়ে কলকাতায় সিবিআই দফতরের মধ্যে প্রবেশ করে তাদের কাজে বাধা দিয়েছে! এই চিঠির প্রেক্ষিতে অন্য আদালতের জামিনের নির্দেশ কীভাবে নাকচ হতে পারে? ওই চিঠির সঙ্গে হলফনামা দেওয়াই আইনগত পদ্ধতি।”

একইসঙ্গে ইন্দিরা জয়সিংয়ের বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিজাম প্যালেসে গিয়েছেন, ডিআইজির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর মন্ত্রীদের গ্রেফতারির প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছেন। সিবিআই দফতরের মধ্যে তাঁর সঙ্গে ২ হাজার ৩ হাজার সমর্থক ছিল না। আর তারপর তিনি বেরিয়েও গিয়েছেন।”

ইন্দিরাদেবীর আরও প্রশ্ন, “সিবিআই জামিনের নির্দেশের বিরোধিতা করে বলেছে, এই চারজন অভিযুক্ত নাকি তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ লোপাট করতে পারেন। কারণ তাঁরা প্রভাবশালী! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁরা ২০১৭ সালেও প্রভাবশালী ছিলেন। এতদিন ধরে তাঁরা কোনও নথিপত্র উধাও করলেন না। এতদিন তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে তদন্তে বাধা দিলেন না। আর এঁরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ। তাঁরা অবশ্যই বিচারব্যবস্থা থেকে পালাতেন না? সবথেকে বড় প্রশ্ন, সিবিআই কোর্ট এবং হাইকোর্টে শুনানি একইসঙ্গে চলছিল। তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই সিবিআই এই চারজনের হেফাজত পর্যন্ত চায়নি। তারা চেয়েছে জেল হেফাজত। কেন? সুপ্রিম কোর্ট যেখানে বলেছে, কোভিড-কালে জেলবন্দির সংখ্যা যথাসম্ভব কমাতে, সেখানে এই মামলায় তাঁদের জেলে আটকে রাখার এত তৎপরতা কেন?”

ইন্দিরা জয়সিং এর পরই কেস হিস্টোরি ও আইনি দিক তুলে ধরে লিখেছেন, “সংবিধানের ২১ নং ধারা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠিত আইন ছাড়া আর কোনওভাবেই ব্যক্তির জীবন ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যায় না। কলকাতা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত আইনের প্রক্রিয়া নয়। সিবিআই সম্ভবত ভুলে গিয়েছে যে, ১৯৯৬ সালের বিনীত নারায়ণ বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সেই বিখ্যাত রায়, কেউ যতই উচ্চস্থানে আরোহন করুক না কেন, আইন থাকবে তার থেকেও উঁচুতে।”

Advt

 

Previous articleবুধবার ভোরে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল নেপাল, ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি
Next article২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য কমল