টিকা পেতে ভোগান্তি বাড়ছে, চিনা ভাষার চুক্তিতে না বুঝেই সই করেছে বাংলাদেশ!

খায়রুল আলম, ঢাকা

অতিমারিতে করোনভাইরাসের টিকা পেতে ভোগান্তি বাড়ছে বাংলাদেশের। এদিকে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় টিকা পাওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ—প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এমনটিই বলেছিলেন ঢাকায় চিনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত বুধবার বাংলাদেশ চুক্তির জন্য যে নথিতে সই করেছে, তাতে আবার ইংরেজি ভাষার অংশের বদলে চিনা ভাষার অংশে সই করে ফেলেছে। সেই অংশে কী আছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চিনা ভাষায় দক্ষ একজন অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সব মিলিয়েই বাংলাদেশের টিকা পাওয়া নিয়ে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিদেশ মন্ত্রী তারমানে এই সংকট সৃষ্টি হওয়ার পিছনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের গাফিলতি দায়ী করছেন। তিনি বলেন, বিদেশমন্ত্রক অনেক আগেই এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
বিদেশ মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশ মন্ত্রণালয় শুধু যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজটি করছে। চুক্তি, টিকা কেনা ও আনার সব দায়িত্ব পালন করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। চিনের সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি ও প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যে সময়ক্ষেপণ করছে, তাতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। বিদেশ মন্ত্রী বলেছেন, একই ধরনের ঘটনা ঘটছে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে এ মাসের শুরুর দিকে মন্ত্রী মোমেন বলেছিলেন, বিশ্বে টিকার সংকট আছে। এটি সাপ্লাইয়ার্স মার্কেট (সরবরাহকারীর বাজার)। সিদ্ধান্ত নিতে বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।

জানা গেছে, টাকা দেওয়ার পরও চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ করতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তিগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশেষ করে টিকা পৌঁছানোর নিশ্চয়তার বিষয়টি চুক্তিতে রাখতে চাচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দর-কষাকষি করার অধিকার বাংলাদেশের অবশ্যই আছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে টিকা অনিশ্চিত বা টিকা পাওয়ার উদ্যোগটিই ঝুলে থাকতে পারে। কারণ এখন বিশ্বে টিকার চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকায় দর-কষাকষিতে উৎপাদন ও সরবরাহকারীদের ভূমিকা আগের চেয়ে বেড়েছে।

ড. মোমেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চিনের সঙ্গে চুক্তি মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চিন তিনটি ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে আমরা দুটি পাঠিয়েছি পূরণ করে। দুটির মধ্যে একটি, যেটি কালকে (গত বুধবার) গেছে সেটির কিছু অংশ ছিল ইংরেজিতে, বাকি অংশ ছিল চিনা ভাষায়। আমরা পূরণ করে পাঠানোর সময় চিনা জায়গায় সই করে দিয়েছি। কালকে আবার চিনা ভাষার একজন প্রফেসর নিয়োগ করে সেটি আবার…।’ মোমেন বলেন, ‘দিজ আর লাউজি (এগুলো খারাপ) কাজ হয়েছে। আমরা (বিদেশ মন্ত্রণালয়) এটি করিনি। আমরা শুধু কানেকশনটি করে দিই। এগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। কখন, কিভাবে আনবেন তাঁরা ঠিক করেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সেখানে একটু দেরি হচ্ছে।’

মন্ত্রী মোমেন আরো বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রদূত খুবই হতাশ। ডকুমেন্টগুলো না হলে প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা যাবে না। তিনি বেইজিংয়ে চূড়ান্ত করছেন। তিনি খুবই হতাশ। তিনি আমাকে ফোন করেছেন। টেক্সট দিয়েছেন। ফোন করার পর বলেছি, আমাকে টেক্সট দেন। তিনি টেক্সট পাঠালে আমি সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব সাহেবকে পাঠিয়েছি। এই অবস্থায় আছে।’

রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের ডকুমেন্টগুলোর কিছু হয়েছে, কিছু হয়নি। একসময় একটা পরিমাণ (টিকার পরিমাণ) বলা হয়েছে। পরে আবার পরিবর্তন করা হয়েছে।’

মোমেন বলেন, ‘রাশিয়ানরা এগুলো পছন্দ করে না। আপনি বললেন, আমি এত আনব। পরে বললেন যে আরও কমিয়ে আনব। এগুলো নিয়ে আমরা এখন ব্যস্ততায় আছি। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যেই সব কিছুই ঠিক হবে।’

ড. মোমেন বলেন, গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই ডকুমেন্ট পাঠিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রয়চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রাশিয়া চায়, আপত্তি থাকলে স্পষ্টভাবে জানাতে।

ভারত থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে তিনি ফোন করেছিলেন। ভারত কখনো বলেনি যে টিকা দেবে না; কিন্তু তারা দিতে পারছে না।

মোমেন এ দেশে ১৫ লাখ লোকের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তার বিষয়টি তুলে ধরে জয়শংকর কে বলেছেন, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকলে উপহার দেন। জবাবে জয় শংকর কে বলেছেন, বাংলাদেশের চাহিদার বিষয়টি তাঁরা জানেন। কিন্তু ভারতের অবস্থা খারাপ। প্রতিদিন চার হাজারের বেশি লোক মারা যাচ্ছে করোনায়। অনেক শনাক্ত হচ্ছে। মাসে ২০ কোটি ডোজ টিকা দরকার। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট ১০ কোটি ডোজও উৎপাদন করতে পারছে না।

আরও পড়ুন- অবশেষে যুদ্ধবিরতি! গাজা ভূখন্ডে চলা অশান্তির ইতি টানল ইজরায়েল

Advt

Previous articleঅবশেষে যুদ্ধবিরতি! গাজা ভূখণ্ডে চলা অশান্তির ইতি টানল ইজরায়েল
Next articleবাংলার কৃষকদের টাকা দেওয়া বন্ধ হোক, মোদিকে চিঠি দিলেন দিলীপ ঘোষ