বেতন বকেয়া থাকলেও পড়ুয়াদের বহিষ্কার বা ক্লাস বন্ধ করা যাবেনা: হাইকোর্ট

অতিমারি আবহে বেসরকারি স্কুলগুলির পড়ুয়াদের মাসিক ফি’জ বকেয়া থাকলেও, ওই পড়ুয়াদের স্কুল থেকে বহিষ্কার করা যাবেনা৷ এই ধরনের পড়ুয়াদের নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতেও অনুমতি দিতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে৷ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছেন৷ কোভিড-সংক্রমণ এবং কার্যত লকডাউনের জেরে হঠাৎ আর্থিক সংকটে ডুবে যাওয়া পরিবারের পড়ুয়াদের পড়াশুনো যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, সেই বৃহত্তর লক্ষ্যেই হাইকোর্টের এই নির্দেশ বলে মনে করছে আইনজীবী মহল৷ পূর্ব মেদিনীপুরের দিশারি পাবলিক স্কুলের অভিভাবকদের করা মামলায় শুধুমাত্র ওই স্কুলের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ জারি করলেও রাজ্যের সব বেসরকারি স্কুলের একই সংকটে পড়া পড়ুয়ারা আদালতে আবেদন করলে এই নির্দেশের আওতায় আসতে পারে বলেও নির্দেশে বলা হয়েছে৷

পূর্ব মেদিনীপুরের দিশারি পাবলিক স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশ হাইকোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা করে অভিযোগ করে, এই অতিমারি আবহে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন৷ তাঁদের সন্তানরা ওই স্কুলের পড়ুয়া৷ এর মাঝেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতেও স্কুল ফি’জ বৃদ্ধি করেছে৷ অসংখ্য অভিভাবক বর্তমান শোচনীয় আর্থিক পরিস্থিতিতে স্কুলের বেতন দিতে পারেনি৷ ওদিকে ওই স্কুল বেতন বকেয়া থাকা পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ১৪৫ জন পড়ুয়াকে স্কুল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ এই মামলাটি প্রথমে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে ছিলো৷ সিঙ্গল বেঞ্চ স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই কাজ করতে নিষেধ করে বর্ধিত বেতন হ্রাস করেনা দিশারি পাবলিক স্কুল৷ আবেদনকারীরা ফের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন৷ শুক্রবার এই আবেদনের নিষ্পত্তি করে দুই বিচারপতি জানিয়েছেন, দিশারি পাবলিক স্কুল বেতন বকেয়া থাকা কোনও পড়ুয়াকে বহিষ্কার করতে পারবেনা৷ এমন সমস্যায় থাকা কোনও পড়ুয়াকে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা এবং ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে পড়ুয়াদের বেতনের ২০ শতাংশ মকুব করতে হবে৷ অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ বেতন দিলেই হবে৷

এদিনের নির্দেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি করে হাইকোর্ট মামলাকারীকে জানিয়েছে, কোর্টের এই নির্দেশটি ১০ জুনের মধ্যে রাজ্যের তিনটি প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন হিসাবে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করতে হবে ৷ বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দি দৈনিকে প্রকাশ করতে হবে৷ এই একই ধরনের সংকটে গোটা রাজ্যের যে কোনও স্কুলের যে কোনও পড়ুয়া পড়লে, তাঁরা বা তাঁদের অভিভাবকরা এই মামলায় যুক্ত হতে পারবে এবং এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন৷ তাঁদের কাছে আদালতের এই নির্দেশ পৌঁছে দিতেই বিজ্ঞাপন প্রকাশের প্রয়োজন বলে আদালত জানিয়েছে৷ হাইকোর্টের এই নির্দেশে করোনা-কালে হঠাৎ আর্থিক সংকটে পড়া রাজ্যের অসংখ্য পরিবারের পড়ুয়াদের উৎকন্ঠা অনেকটাই হ্রাস পাবে বলে আইনি মহল মনে করছে৷

এই নির্দেশের পাশাপাশি হাইকোর্ট এ ধরনের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের জানিয়েছেন, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে স্কুলের বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে৷ প্রয়োজনে বকেয়া বেতন কিস্তিতেও জমা করতে পারবেন অভিভাবকরা৷ প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বেতনের কিস্তি জমা দিতে হবে৷ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই ধরনের সংকটে থাকা কোনও অভিভাবক যদি বকেয়া বেতনের একাংশও জমা করতে না পারেন, দিশারি পাবলিক স্কুল ওই পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাসের সুবিধা বন্ধ করতে পারলেও, হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া কোনও পড়ুয়াকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা যাবে না ৷

আরও পড়ুন- মুকুল রায় না অশোক লাহিড়ি, PAC-র চেয়ারম্যান কে হবেন? জোর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে

Advt

Previous articleটানা বৃদ্ধির পর অবশেষে ধাক্কা খেল শেয়ারবাজার, ১৩২ পয়েন্ট নামল সেনসেক্স
Next articleকরোনা যুদ্ধে এবার ভারতের পাশে দাঁড়াল চেলসি ফুটবল ক্লাব