রাজীবের আত্মসমালোচনার পোস্ট, পালটা জোড়া ট্যুইটে সৌমিত্র হাটখোলা করে দিলেন দলের গোষ্ঠী লড়াই

বিজেপির অন্দরে প্রবল লড়াই, আদি বনাম নব্য। ভোটের আগে ছিল ধামাচাপা, ভোটের পর প্রকাশ্যে। ভোটের পর অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর ট্যুইট করে দলের আত্মসমালোচনায় মগ্ন হলেন। আর তার জবাবে জোড়া ট্যুইটে রাজীবকে সবক শেখালেন আর এক ‘নড়বড়ে’ বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজীব সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। লেখেন, ‘সমালোচনা তো অনেক হলো, মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবেন না। আমাদের সকলের উচিত, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কোভিড ও ইয়াস, এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা।’ বেসুরো রাজীবের পোস্ট সামনে আসতেই আওয়াজ ওঠে আর এক বিলম্বিত বোধোদয়। ঘরোয়াপসির প্রাথমিক চেষ্টা।

বিকেল গড়াতেই রাতে বিজেপির আর এক আনপ্রেডিক্টেবল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ জোড়া ট্যুইট করেন। দুদিন আগে তিনি দলের দুটি হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে আলোচনায় ছিলেন। জনান্তিকে শোনা যাচ্ছিল, সৌমিত্র তাঁর স্ত্রীর দলে বোধহয় ফিরতে মরিয়া। হঠাৎ তাঁর দলের প্রতি অশেষ আনুগত্য ঝরে পড়ায় অনেকে তাঁকে তরমুজও বলতে শুরু করেছেন।

প্রথম ট্যুইটে সৌমিত্র লিখলেন, ‘৪২ হাজার ভোটে হারার পর মনে পড়ল? বিজেপির ৪২জনের বেশি কর্মী মারা গিয়েছেন। তখন চুপ থাকা মানে শাসক দলকে সমর্থন করা।’ সরাসরি আক্রমণ। বিশাল ভোটে পরাজিত হওয়ার পর রাজীবের দল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টাকে সরাসরি কটাক্ষ। এখানেই না থেমে সৌমিত্র লিখলেন, ‘ মোদি সরকার করোনার জন্য ফ্রিতে প্রতিষেধক, অক্সিজেন সবরকম সাহায্য করছে। ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের পর মোদিজি নিজে এসেছেন। ৪০০ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে।’

সৌমিত্রর দ্বিতীয় ট্যুইট আরও বেশি কটাক্ষে ভরা। লিখলেন, ‘আমরা বিরোধী দল। আমরা সরকারকে গঠনমূলক সাহায্য করব। ভুল হলে পথে নামব। আপনি নীরব না থেকে বিজেপি কর্মীদের পাশে দাঁড়ালে ভাল হয়। না হলে গাড়ির পিছনে যে ছবিটাব আছে, সেটা আবার সামনের সিটে নিয়ে আসুন।’ কটাক্ষে পরিষ্কার, যে ছবির কথা সৌমিত্র বলছেন, সেটি মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। যে ছবি বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে বিধানসভা থেকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন রাজীব। যদিও রাজীবকে ট্যাগ করা ট্যুইটের শেষে সৌমিত্র লিখতে ভোলেননি এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত, দলের নয়।

রাজীবের মৌনব্রত দেখে অনেকে বলছেন, ফের দলে ফিরতে মরিয়া রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর ট্যুইট যেন সে কথাই বলছে। আর সৌমিত্র সেই সম্ভাবনাকেই কটাক্ষ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের মধ্যে প্রবল লড়াই এখন দলবদলুদের মধ্যে। আদি-নব্য লড়াই প্রকাশ্যে। যে কোনও সময়ে তাসের ঘরের মতো ভাঙবে বিজেপি। রাজনৈতিকমহল বলছে, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পারবেন তো এই শতধাবিভক্ত দলকে অটুট রাখতে?

আরও পড়ুন:‘বেসুরো’ সামলাতে এবার কমিটি গড়লেন দিলীপ ঘোষ

Advt

Previous article‘বেসুরো’ সামলাতে এবার কমিটি গড়লেন দিলীপ ঘোষ
Next articleআজ মোদি-শুভেন্দু কথা, দিল্লি গেলেন তিন সাংসদ