সাঁইবাড়ি-পোস্ট ‘ব্যক্তিগত’, এ নিয়ে আর কোনও বিতর্ক চান না বিমান-অধীর

সাঁইবাড়ি-কাণ্ড নিয়ে এখন আর কোনও বিতর্ক নয়৷

সিপিএম এবং কংগ্রেস দু’পক্ষেরই শীর্ষ স্তর এ কথা জানিয়ে বলেছে, যে যা বলেছে, সবই নিজস্ব মতামত৷ ওই মন্তব্য দলের অবস্থান নয়৷

গত রবিবার সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য রবিবার সকালে তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। বর্ধমানের ‘‌সাঁইবাড়ি’‌-র ঘটনা নিয়ে লেখা ওই পোস্টে তিনি একাধিক জায়গায় ‘‌কংগ্রেস গুন্ডা’‌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু বিকাশবাবুই নয়, এই মুহুর্তে আলিমুদ্দিনের ‘পোস্টার গার্ল’ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও একই বিষয় নিয়ে তাঁর নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন রবিবারই৷ দেখা গিয়েছে সেখানেও মীনাক্ষী সাঁই পরিবারের বড় ছেলে কংগ্রেস নেতা প্রয়াত নব সাঁইকে ‘‌ঘাতক’‌ ও ‘‌গুন্ডা’‌ বলেছেন৷

এই প্রসঙ্গে দু’পক্ষে নেট-যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখনই অবশেষে মুখ খুলেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি৷ অধীরবাবু বলেছেন, “বিকাশবাবু দক্ষ আইনজীবী, সজ্জন ব্যক্তি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মাঝেমাঝে কিছু বাহাদুরি দেখিয়ে ফেলেন! সামাজিক মাধ্যমে তিনি যা বলেছেন, তা সিপিএমের দলীয় বক্তব্য বলে মনে করি না। তা ছাড়া, একটা প্রাগৈতিহাসিক একটা সমস্যা নিয়ে এখন বিতর্কে কোনও বাহাদুরি আছে বলেও মনে করি না।’’ পাশাপাশি বলেছেন, “এই বিতর্কের সঙ্গে বর্তমান রাজনীতিতে জোটের কোনও সম্পর্ক নেই”৷

ওদিকে বিমান বসুর স্পষ্ট কথা, ” মীনাক্ষীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ও নিজে কিছু করেনি, ওর নামে কেউ পোস্ট করেছে। বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হয়নি, তবে ওঁর বক্তব্য শুনেছি। এটা বলতে পারি, এখন দলের অবস্থান এটা নয়। এগুলো দলের বক্তব্য নয়।’’ প্রসঙ্গত, মীনাক্ষী বা বিকাশবাবু যা বলেছেন, সেই বিতর্কে দল জড়াতে চায় না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আর এ দিন বিমানবাবু দলের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

এদিকে এ প্রসঙ্গে নিজের সাফাই দিয়েছেন বিকাশবাবুও৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সাঁইবাড়ির আমলের কংগ্রেসের সঙ্গে এখনকার কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। অতীতের ঘটনা জেনেও কংগ্রসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের ব্যাপারে আমি নিজে তৎপর হয়েছিলাম। রাজনীতি এবং জোট পিছনের দিকে তাকিয়ে হয় না, সামনের দিকে তাকাতে হয়!’’

গত রবিবার এই দু’টি পোস্টের বিষয় প্রকাশ্যে অসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে কংগ্রেস ৷ প্রয়াত সোমেন মিত্রের পুত্র রোহন মিত্র টুইট করেন৷ বিকাশ ভট্টাচার্যের সাংসদ পদ প্রসঙ্গে রোহনের কটাক্ষ, “আপনার সাংসদ পদটিও শোষকের প্রতি শোষিতের ইতিবাচক ভূমিকা। সাঁইবাড়ি আমরাও ভুলিনি”। বিকাশ ভট্টাচার্যকে কটাক্ষ করে অনেকেই লিখেছেন, ‘কংগ্রেসের উপর এতই ক্ষোভ যখন, তাহলে কংগ্রেসের সমর্থনে নেওয়া সাংসদ পদ ছেড়ে দিন।’ বিকাশের এই পোস্টের কথা জেনে সূর্যকান্ত মিশ্রকে ফোন করেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদীপ বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি না ৫০ বছর আগেকার ঘটনা এই মুহূর্তে আলোচনা করার কোনও অবকাশ রয়েছে। গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আর যদি এটাই মাথায় থাকে তাহলে আমরা জোট করতে গেলাম কেন?”
এখানেই শেষ নয়, কংগ্রেসের আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে আলিমুদ্দিনে৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে লেখা চিঠিতে বিকাশ ভট্টাচার্যের বক্তব্য নিয়ে সিপিএমের কী অবস্থান, তা স্পষ্ট করার কথা বলা হয়েছে৷

এত কথার পরেও অস্বস্তি অবশ্য কাটছে না৷ প্রদেশ কংগ্রেসের আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন কমিটির চেয়ারম্যান সৌম্য আইচ রায় ও আহ্বায়ক নিলয় প্রামাণিকের এ বিষয়ে সূর্যবাবুকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী৷ ওই চিঠিতে বিকাশবাবুদের ‘অবমাননাকর’ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সূর্যবাবুর ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে৷ এ প্রসঙ্গে সুজনের বক্তব্য বলেছেন, ‘‘আমাদের রাজ্য সম্পাদককে এমন চিঠি দিলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বা সমমর্যাদার কেউ দিতে পারেন। অন্য কেউ এমন করলে তাঁদের মান-মর্যাদা এবং ভারসাম্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না!’’
তবে এর জবাবে অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘‘ওটা প্রদেশ কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক চিঠি নয়। আবেগতাড়িত কেউ ওঁদের দৃষ্টি আকষর্ণের জন্য এটা করেছে।’’

এখন দেখার এই ইস্যুতে প্রদেশ কংগ্রেসের ‘সরব’ নেতারা বিষয়টিতে ইতি টানেন, না’কি ‘মর্যাদা’ রক্ষায় ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যান৷

Previous articleসপ্তাহের শুরুতেই আদানিদের শেয়ারের ধস, জল্পনা অন্তর্ঘাতের
Next articleহানের শরীরে মাইক্রো চিপ লুকোনো থাকতে পারে, সিটি স্ক্যানের চিন্তাভাবনা