বাংলাদেশ যাতায়াতে পাড়ি দেয় ২০ হাজার কিলোমিটার পথ

খায়রুল আলম, ঢাকা

রাশিয়ার চুকোটকা থেকে বাংলাদেশে আসতে এবং ফিরে যেতে ২০ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেয় ছোট্ট ও সুন্দর পাখি চামচঠুঁটো বাটান। মহাবিপন্ন প্রজাতির এ পাখির সংখ্যা সারা বিশ্বে ২৪০ থেকে ৪৫৬টি। চামচঠুঁটো বাটান যেন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে না যায় এবং রক্ষার জন্য ২০১০ সালে চামচঠুঁটো বাটান টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। চামচঠুঁটো বাটানের প্রজনন–পরবর্তী পরিযান তথ্য নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ওয়েডার স্টাডি নামের জার্নালে।

আসা-যাওয়ার পথে এরা উপকূলীয় কয়েকটি দেশে যাত্রাবিরতি দেয়। চামচঠুঁটো বাটান (Calidris pygmaea) মূলত রাশিয়ার সাইবেরিয়ার প্রত্যন্ত চুকোটকা অঞ্চলে প্রজনন করে। প্রজননের পরে তারা অপেক্ষাকৃত কম শীতপ্রধান অঞ্চলে পরিযান করে খাবার ও আশ্রয়ের জন্য।

জানা গেছে , রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাড়ি দেওয়ার সময় তারা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এবং অনেক জায়গায় যাত্রাবিরতি দেয়। প্রজনন–পরবর্তী সময়ে চামচঠুঁটো বাটান কোন কোন জায়গায় অবস্থান নেয়, তা নিয়ে তেমন তথ্য ছিল না এত দিন। সেই তথ্য জানার জন্য পাখি গবেষকেরা প্রাপ্তবয়স্ক ১৩টি চামচঠুঁটো বাটান পাখির গায়ে সৌরশক্তিচালিত স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে প্রজনন–পরবর্তী সময়ের গতিবিধি জানতে সক্ষম হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যভান্ডার চামচঠুঁটো বাটানের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেবে।

গবেষণা থেকে জানা গেছে, পরিযানের সময় এরা পূর্ব এশিয়ান-অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইওয়ে ব্যবহার করে। ট্যাগ করা প্রাপ্তবয়স্ক চামচঠুঁটো বাটানের তিনটি চীন, একটি ভিয়েতনাম, একটি মিয়ানমার, দুটি বাংলাদেশের জাহাজিয়া চর এবং একটি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় চলে যায়।

এ গবেষণায় ২৮টি জায়গা শনাক্ত করা হয়েছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বসতি হিসেবে যেসব স্থানে এরা পরিযানের সময় খাবারের জন্য এবং পালকের পরিবর্তনের জন্য সময় কাটায়। বিশেষ করে রাশিয়ার তিনটি জায়গা যেখানে এরা দূরবর্তী পথ অতিক্রম করার আগে সময় কাটায়।

জায়গা তিনটি হলো পেরেওলোচনি বে, মোরোশেচনায়ে নদী এবং টাইক বে। চামচঠুঁটো বাটান যতগুলো স্থানে যাত্রাবিরতি দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে মাত্র ১০টি বসতির জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শরৎকালের সময় এরা চিনের এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়েলো সাগরের উপকূলে সময় কাটায়। এ জন্য তাদের রাশিয়ার চুকোটকা থেকে ৪০০০ কিলোমিটার পথ উড়তে হয়। এখানে তারা ৩৭ থেকে ৫০ দিন থাকে। এখানে তাদের প্রজননকালীন ডানার পালক পরিবর্তন হয়ে যায়। ডানার নতুন পালক ধারণ করার পর তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভ্রমণ করে এবং কম শীতের আবাসে থাকে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

তারপর তারা আবার ফিরে যায় রাশিয়ার আবাসে প্রজননের জন্য। ১৩টি ট্যাগ করা চামচঠুঁটো বাটানের মধ্যে সর্বনিম্ন একটি ১৯ দিন এবং একটি ১৮৭ দিন ট্যাগ নিয়ে উড়েছে। অন্য ১১টিও নানা মেয়াদে ট্যাগ নিয়ে উড়েছে। ট্যাগগুলো ছিল ২ গ্রাম ওজনের।

আরও পড়ুন-  স্বস্তি দিয়ে রাজ্যে নিম্নমুখী কোভিড সংক্রমণের গ্রাফ, কমছে মৃত্যুও

 

Previous articleকোপা আমেরিকার দ্বিতীয় ম‍্যাচে সুয়ারেজদের বিরুদ্ধে জয় চাইছে মেসির দল
Next articleসুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫২৯১ কোটি টাকা