কালিয়াচক হত্যাকাণ্ড :  ইন্টারনেট ঘেঁটে সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিল আসিফ

ইন্টারনেট ঘেঁটে সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে। কালিয়াচকের একই পরিবারের সদস্যদের খুন করে যেখানে রাখবে সেই সুড়ঙ্গ তৈরির করেছিল আসিফ। জেরায় ক্রমশ এইসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। আর ততই স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এত ঠাণ্ডা মাথার খুনি আসিফ হয়ে উঠল কীভাবে! তাকে কফিন-কিলার বলেও ডাকছেন অনেকে। কারণ, আসিফই বাড়ির চারজনকে মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে হাত-পা বেঁধে কফিনে পুরে মেরেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

পুলিশ ধৃতকে জেরায় জেনেছে, একা সুড়ঙ্গ তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম বুঝেই একজন রাজমিস্ত্রি এবং একজন সহকারীকে জোগাড় করেছিল সে। কিন্তু, তাঁরা কোথাকার সে বিষয়েও স্পষ্ট তথ্য নেই বলে আসিফের দাবি। আসিফকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, সুড়ঙ্গ তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ দিন। তবে দু’বার সে এই কাজে মিস্ত্রী এবং শ্রমিক বদলেছিল। কিন্তু পছন্দের মতো কাজ না হওয়ায় মাঝপথে মিস্ত্রি ও শ্রমিকদের তাড়িয়ে দিয়েছিল অভিযুক্ত ওই যুবক। প্রাথমিক তদন্তে এমনই তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের ।

২০ ফুট চওড়া এবং ৩০ ফুট উচ্চতার এই সুরঙ্গ দিয়ে মৃতদেহগুলো টেনে হিঁচড়ে গোডাউন ঘরে নিয়ে গিয়েছিল ওই পরিবারের ছোট ছেলে ধৃত আসিফ মহম্মদ। কিন্তু সেই সুড়ঙ্গ তৈরি করার সময় পরিবারের লোকেরা নাকি জীবিত ছিলেন। তা হলে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেননি কেন আসিফ এভাবে বাড়ির মধ্যে সুড়ঙ্গ তৈরি করছে। কেনই বা বাবা তাঁকে সুড়ঙ্গ বানাতে টাকা দিয়েছেন সেটাও স্পষ্ট নয়।

ধৃত আসিফ মহম্মদ পুলিশি জেরায় জানিয়েছে, সেই সময় পরিবারের জীবিত সদস্যদের জানিয়েছিল দরজা তৈরি করা হচ্ছে। সুড়ঙ্গ সম্পর্কে কারোর কোন চিন্তা মাথার মধ্যে আসে নি। শুধু এই পরিকল্পনা নিজের মাথাতেই রেখেছিল কালিয়াচকের কফিন-কিলার আসিফ মহম্মদ। সুড়ঙ্গের সামনে প্লাইবোর্ড দিয়ে আস্তরণ তৈরি করে দরজার মত করেও ঢাকা দিয়ে রাখা ছিল। পরিবারের চার সদস্যকে হঠাৎ করে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়নি ধৃত আসিফ। জানুয়ারি মাস থেকে তার পরিকল্পনা ছিল পরিবারের চার সদস্যকে খুন করার। এমনকি দাদা রাহুল শেখ ওরফে আরিফ কেও খুন করার ছক কষেছিল মূল অভিযুক্ত আসিফ। কিন্তু আরিফ সেই পরিস্থিতির কথা আগাম বুঝতে পেরেই পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে, পুলিশি জেরায় এরকমই তথ্য উঠে এসেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর থেকেই বাড়ি তৈরি করার সময় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মিস্ত্রিদের ঘরের জানালা তৈরি করতে দেয়নি আসিফ। সেই সময় কোনো প্রতিবাদ করেননি পরিবারের লোকেরা। দাদা আরিফের সঙ্গে এনিয়ে মত বিরোধ ছিলো আসিফের। ভাইকে ভয় করতো বলেই দাদা আরিফ প্রতিবাদ করার সাহস পাই নি। মনের মতো সুরঙ্গের কাজ না হওয়ায় মাঝপথে মিস্ত্রিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলো সে। কিন্তু এত কিছু ঘটনা ঘটলেও কেন বাড়ির ওই ছোটো ছেলেকে শাসন করেনি পরিবারের লোকেরা, তা নিয়েও নানান প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে।

পুলিশ জানিয়েছে, এইসব বিষয়ে পরিবারের লোকেদের অন্ধকারে রেখেছিল আসিফ মহম্মদ। কিন্তু তার দাদা ভাইয়ের কুকীর্তির আগাম আঁচ পেয়েছিল । এনিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ হয়। তখন নাকি আসিফ তার দাদাকে ছুরি নিয়ে মারতে আসে। তাই ভয়ে আরিফ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। পরে পরিকল্পনা করেই পরিবারের বাবা-মা, নাবালিকা বোন এবং বৃদ্ধা ঠাকুমাকে নৃশংসভাবে খুন করে ছোট ছেলে আসিফ মাহমুদ।

এদিকে কালিয়াচকের একই পরিবারের চারজনের দেহ উদ্ধারের পর প্রতিদিনই বাড়ির সামনে ভিড় জমাচ্ছেন বহু মানুষ । এমনকি কালিয়াচকের আশেপাশের এলাকা থেকেও রহস্য ঘেরা এই বাড়ি দেখতে ভিড় করছেন অনেকেই। সেই বাড়ির ছবি তুলে অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। পরিবারের সদস্যদের খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদকে যাতে ফাঁসির কাঠগড়ায় ঝোলানো হয়, এমনই দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন অনেকেই।

এদিকে বৃহস্পতিবার কালিয়াচক থানার ১৬ মাইল এলাকার গুরুটোলা ঘটনা গ্রামের একই পরিবারের চার সদস্যকে খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত আসিফের দাদা আরিফকে জবানবন্দি নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। পাশাপাশি আসিফের দুই বন্ধু সবির আলি , মাফুজ আলি যারা এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলো তাদের এদিন মালদা আদালতে তোলা হয়।

Previous articleপৃথক রাজ্যের দাবি : বিজেপি বিধায়ক শিখা    চট্টোপাধ্যায়ের নামে এফআইআর 
Next articleআলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে রাজ্যপালের কাছে জাতীয় গোর্খাল্যান্ড কমিটি