ঢাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভবন ধুলিসাৎ, নিহত ৭;আহত শতাধিক

খায়রুল আলম, ঢাকা

বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা (Dhaka Blast)। আজ রবিবার সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মগবাজার ওয়ারলেস গেট এলাকায় তীব্র বিস্ফোরণ হয়। সূত্রের খবর এই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা অন্তত ৪২। এদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রশাসনের তৎপরতায় আহতদের আপাতত ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। ঠিক কী ভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটল, বিস্ফোরণের পিছনে কেউ জড়িত কিনা তা এখনও জানা যায়নি। তবে একটি এয়ারকন্ডিশনে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান দমকল বাহিনীর।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে , মগবাজার ফ্লাইওভারের কাছাকাছি একটি ট্রান্সফর্মার সশব্দে বেজে ওঠে। বিকট শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। সেই সময়ে ওই এলাকায় যাতায়াত করা বহু পথচারী আহত হন। দমকল বাহিনীর প্রাথমিক অনুমান নিকটবর্তী কোনও একটি ভবনের এয়ার কন্ডিশনার বিস্ফোরণ হয়েছে, সেই আগুন ছড়িয়েছে ট্রান্সফর্মারে।
এর ফলে তিনতলা একটি ভবন ধসে পড়ে; তার আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাঁচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ঢাকার মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই পর্যন্ত তথ্য পেয়েছি যে এই ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন।”

এদিকে এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এই ঘটনায় তিনজন মারা গেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

আহত অনেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া  বলেন, ১২ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। দুজনই পুরুষ।

ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আহতদের মধ্যে চারজনের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। দুজনকে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জান্নাত (২৫) নামে একজন মারা যান বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া‌।

ঢামেক হাসপাতাল জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “আমাদের এখানে এ পর্যন্ত ৩৯ জন রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে রাত সোয়া ১০টার সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাত নামে এক মহিলা মারা গেছেন।

ঢাকা মেডিকেলে যারা চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন মো. মামুন (৩০), শাহ নেওয়াজ পাটয়ারী (৩৫), হৃদয়(২৩), আরিফুল ইসলাম (৩৯), মেহেদী হাসান নয়ন (২২), মাহাবুব আলম (৩৯), মো. মুসা শাহজাহান (৪৫), স্বপন (৩৫), মো. শহিদ (৬৫), সৈকত (৮), আবুল ফজল (২৮), সালেহা বেগম (৬০), লাকী আক্তার (৩২),সাজ্জাদ (১৮), আইয়ুব খাঁন (২৫), সুভাষ চন্দ্র সাহা (৬৫), আরমান (২৫), রতন (৩০),মোকতার (৩৫), আসাদ (৫৮)।

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন আবুল কালাম আজাদ (৫৬), মোতালেব হোসেন (৪০), জামাল (৪০), নয়ন (৪০), আবুল কালাম (২৭) ও কালু (২৭)।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়েছে। ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

সড়কের পাশের ওই ভবনের বিপরীত দিকে আড়ং রয়েছে। বিস্ফোরণে আড়ংসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে রাস্তায় পড়েছে।

সড়কের উপর লাব্বাইক ও আল মক্কা পরিবহনের দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এগুলোর ভেতরে রক্তের দাগও দেখা যায়। বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন  বলেন, তিনতলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। অনেক ফ্রিজ থাকে সেখানে, তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

Previous articleসিউড়িতে ১০০ দিনের কাজ ঘিরে তুমুল উত্তেজনা, মাথা ফাটল পঞ্চায়েত প্রধানের
Next articleকাল বিজেপির ব্যর্থতার কাঁটাছেড়ার বৈঠক, কৈলাশের বিরুদ্ধে বইছে গরম হাওয়া, বেঁধে দেওয়া হবে শুভেন্দুর কাজের গণ্ডিও