সংঘাতের আবহে বাজেট অধিবেশন, কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে দুর্গের চেহারায় বিধানসভা

ভোট পরবর্তী সময়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের আবহতেই আজ, শুক্রবার দুপুর ২টোয় নবনির্মিত রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশ (Assembly Budget Session) শুরু হবে। প্রথা মেনে সরকারের ছাপানো বয়ান দেখে রাজ্যপালের (Governor) ভাষণ দিয়েই এই অধিবেশন শুরু। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।

রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদিত নবান্নের (Nabanna) তৈরি করে দেওয়া খসড়া বয়ানে কোনওরকম বদল না ঘটিয়ে এদিন বিধানসভা ফ্লোরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের (Jaydeep Dhankar) ওই ভাষণই পড়া একপ্রকার নিশ্চিত। তবে তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সরকারবিরোধী কিছু কথা বলেন কি না, সেদিকে নজর থাকবে সকলের। তাহকেই কিন্তু নিমেষে বদলে যেতে পারে বিধানসভার পরিবেশ।

সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী (CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banarjee) হাজিরায় শাসকদলের বিধায়করা কী ভূমিকা নেন, তা নিয়ে যেমন কৌতূহল তৈরি হয়েছে, একইভাবে বিরোধী বিজেপি বিধায়করা কতটা হইহট্টগোল পাকান, সেটাও দেখার। কারণ, বিরোধী দলনেতা (Leader of Opposition) শুভেন্দু অধিকারী (Subhendu Adhikary) অধিবেশনের থিম আগের দিন দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের থেকে তালিম নিয়ে আসেন।

বিষয়টি মাথায় রেখে দলের সব বিধায়ককে আজ থেকে শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনের প্রতিটি দিন বিধানসভায় হাজির থাকার জন্য হুইপ জারি করেছে তৃণমূল। শাসক শিবির হোমওয়ার্ক সেরে রেখেছে। তারা মনে করছে, রাজ্যপালের ভাষণ শুরু করার পরই বিজেপি বিধায়করা ভোটপরবর্তী সন্ত্রাসের ইস্যুতে হইচই জুড়ে দিতে পারেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যপাল ধনকড় পুরো ভাষণ না পড়েই ফ্লোর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে নিজের “ওজন” বজায় রাখার চেষ্টা করতে পারেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বিধানসভার ভিতর-বাইরে।

এদিকে আগে থেকেই সতর্ক বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Speaker Biman Banerjee) অধিবেশন কক্ষে যাতে কোনওভাবে অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য ভবনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী (Security Force) রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।মার্শাল দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে প্রায় জনা পঞ্চাশ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবেন।

ভবনের বাইরেও বিধানসভা চত্বর এবং সংলগ্ন তল্লাট জুড়েও অসংখ্য সাদা পোশাকের পুলিশ-সহ কয়েকশো নিরাপত্তাকর্মী সকাল থেকেই নজরদারি চালাচ্ছেন। রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা থেকে শুরু করে একাধিক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক এদিন হাজির থাকবেন বিধানসভায়। তাঁদের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীর পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ প্রচুর বাহিনী মোতায়েন করেছে।

এদিকে, কোভিড পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এবারের অধিবেশনে বেশ কিছু কড়াকড়ি করা হচ্ছে। নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক বা ভিজিটরদের ভবন চত্বরে প্রবেশে কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অধিবেশন কক্ষে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি মিলছে না। অনুরূপ কড়াকড়ি থাকছে সংবাদপত্র সহ সব মাধ্যমের মিডিয়া কর্মীদের ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে দুর্গের চেহারা নিয়েছে বিধানসভা চত্ত্বর।

 

Previous articleদেশে মৃত্যু ৪ লক্ষের গণ্ডি ছাড়াল, নিম্নমুখী দৈনিক সংক্রমণ
Next articleসেনা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলির লড়াইয়ে শহিদ জওয়ান, খতম এক সন্ত্রাসবাদী