কার বকুনিতে ডিপ্রেশনে গেলেন তিনি ? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

 

কণাদ দাশগুপ্ত

 

কণাদ দাশগুপ্ত

 

কার বকুনিতে এতখানি অভিমানাহত হলেন?

 

কোনও কারণে তিনি কি হতাশ ? ডিপ্রেশনে ভুগছেন ? নির্দেশমাফিক কাজ করেও ‘বস’-দের মন পাচ্ছেন না ?

 

নিশ্চিত অভিমান হয়েছে,

নাহলে দুম করে গীতা’র বাণী স্মরণ করে শনিবার ট্যুইট কেন করলেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ?

প্রশ্ন উঠেছে এখানেই৷ হাত ফাঁকা থাকলেই যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রশাসন বা পুলিশকে তোপ দেগে ট্যুইট করার কাজকে রুটিন বানিয়ে ফেলেছেন, এদিন তিনি সে সব ছেড়ে হঠাৎ ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’-য় ঢুকলেন কেন ? গীতা’র বাণী উল্লেখ করে এদিন ট্যুইট করেছেন ধনকড়৷ তাও আবার যে সে বাণী নয়৷ লিখেছেন সার কথাটি, ‘কর্মন্যবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন’৷ ফলের আশা করো না, কাজ করে যাও৷ আর এই কথা লিখে এদিনই তিনি ধরেছেন দিল্লির উড়ান৷

 

এর পরই জল্পনা শুরু হয়েছে৷ ধনকড়ের নিরাশার পাল্লাটা ভারী হতে হতে ইদানিং কি অনেকটাই হয়ে গিয়েছে ? তাতেই কি কাজের গতি শ্লথ করে দিয়েছেন? বেসরকরি ক্ষেত্রে চাকরি করেন, এমন অনেকেই আছেন যারা শত পরিশ্রম করেও বস-এর মন পাননা৷ সম্প্রতি তেমনই কিছু বোধহয় ঘটেছে ধনকড়ের জীবনে৷

 

একটা টার্গেট মনে মনে আগেই ঠিক করেছিলেন, রাইসিনা হিলসে থাকবেন৷ না হলে ভেঙ্কাইয়া নাইডুর চেয়ারে বসবেন৷ সেই লক্ষ্যে বারংবার সাংবিধানিক রেখা অতিক্রম করে রাজ্য সরকারকে বেগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ হল্লা করেছেন৷ তাঁর একটা চিৎকারও কাজে লাগেনি, এটা ঠিক, কিন্তু চেষ্টার তো একটা দাম আছে! উপরওয়ালা কি তাও দিচ্ছে না? তাই বোধহয় হতাশায় ডুবে গিয়েছেন তিনি৷ তিনি আঁচ করে ফেলেছেন, এ যাত্রায় টার্গেট আর ‘ফুলফিল’ হচ্ছে না৷ অনেক ওজনদার নাম সামনে আসছে৷ মন ভেঙ্গে গিয়েছে হয়তো ধনকড়ের৷

 

তাই বোধহয় শনিবার লিখেই ফেললেন, “কাজ করে যাও, ফলের আশা করো না”৷ ভগবত গীতার অমর, অক্ষয় সেই বাণী, ‘কর্মন্যবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন’, এটাই এদিন উঠে এসেছে ধনকড়ের ট্যুইটে৷ গীতার উল্লেখ করে লিখেছেন, “Fruits of your actions are not for your enjoyment”, মারাত্মক উপলব্ধি রাজ্যপালের৷ এবং লিখেছেন, Even while working, give up the pride of doership, ‘নিজের কাজ করার সময় আত্মগর্বিত হওয়ার বাসনা পরিত্যাগ করা প্রয়োজন’৷

 

গীতার এই সব বাণীর আস্তিনে ঠিক কোন বার্তা ধনকড় লুকিয়ে রেখেছেন, তা ঈশ্বর জানেন৷

 

নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও বোঝা যাচ্ছে রাজ্যপাল স্বাভাবিক নেই৷

কিন্তু এটাও তো ঠিক, সব সময় জীবনের পাওয়া- না-পাওয়ার হিসাব না কষে আনন্দের মুহূর্তগুলো ভাবার চেষ্টা করলে ভালো থাকা যায়৷ হতাশার সাগরে ডুবে না গিয়ে আশাবাদী হতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হতাশার বার্তা না ছড়িয়ে রাজ্যপাল বরং নিজেই চেষ্টা করে অথবা অন্য কারো সাহায্য নিয়ে হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেন৷ তা না করলে বিষণ্নতায় ভুগতেই হবে, ডুবতেই হবে হতাশার সাগরে।

 

তবে শনিবার তাঁর দিল্লি যাওয়া হয়তো ওষুধের কাজ করলেও করতে পারে৷ নতুন আশা নিয়ে ফিরে এসে হয়তো ফের গোলাবারুদ নিয়ে বসতে পারেন রাজভবনের ছাদে, ওখান থেকেই ফের হয়তো সময় এবং এনার্জি নষ্ট করতে পারেন নবান্নকে নিশানা করে৷

 

এবং কিছুদিন পর ফের হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় আসবেন এই ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’কেই সঙ্গী করে৷

 

আপাতত তিনি নীরব, কিন্তু ভবিষ্যতে ঠিক কী করবেন ধনকড়, তা নিয়ে জল্পনার পারদ কিন্তু চড়ছে।

Previous articleসীমান্ত সুরক্ষায় সেনার হাতে শীঘ্রই আসছে অ্যান্টিড্রোন প্রযুক্তি, জানালেন অমিত শাহ
Next articleচিরাচরিত প্রথা ভেঙে একটু অন্যভাবে বৌভাতের অনুষ্ঠান পালন করলেন নবদম্পতি