বিজেপির চক্রান্ত উড়িয়েই এগোবে তৃণমূল, অভিষেক কেন টার্গেট?

অপরাজিতা সেন

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) রাজনৈতিকভাবে পাল্লা দিতে না পেরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা, ব্যক্তিগত আক্রমণ কিছু কম হয়নি। দীর্ঘ সময় এর মূল উদ্যোক্তা ছিল সিপিএম। পরবর্তীকালে এসেছে বিজেপি। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যক্তিগত কুৎসার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Abhishek Banerjee)।

সিপিএম (CPIM) এবং বিজেপির যৌথ চরিত্রহননের প্রকৃষ্ট উদাহরণ রাজীব গান্ধী (Rajib Gandhi)। যে তরুণ প্রধানমন্ত্রী দেশকে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর গায়ে বোফর্স কেলেঙ্কারির মিথ্যা কালি লাগানো হল। দেশব্যাপী প্রচার হল। বিদেশিনী বধূর যোগাযোগে কমিশন খাওয়া হয়েছে। বাম, বিজেপি প্রচার করল, ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হল। রাজীব হেরে গেলেন। বেইমান, গদ্দার ভিপি সিংকে সমর্থন দিল বাম-বিজেপি। কিছুদিনের মধ্যেই সুবিধাবাদী মধুচন্দ্রিমা শেষ। কিন্তু পরাজিত রাজীবের নিরাপত্তা কমানো, জঙ্গিদের বিস্ফোরণে মৃত্যুর মতো চরম ক্ষতির পথ ততদিনে প্রশস্ত। আর এখন, এতদিনে স্পষ্ট, বোফর্স কেলেঙ্কারি শুধু রাজনৈতিক অভিযোগ ছিল। সত্য নয়। সত্য হল, কার্গিল কিংবা চিন সীমান্ত, আজও সবার আগে বোফর্স কামান বসিয়েই ব্যূহ সাজায় ভারতীয় সেনা।

যদি আরেকটু পিছিয়ে দেখি, এই কুৎসার রাজনীতির বলি ছিলেন গান্ধীবাদী নেতা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন। বামেরা রটায়, তিনি নাকি দুর্নীতিতে ডুবে, তিনি নাকি স্টিফেন হাউস কিনে নিয়েছেন। পরে দেখা গেল চূড়ান্ত আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে শেষজীবন কাটালেন তিনি। আসলে রাজনীতিতে পাল্লা দিতে না পারলেই গোয়েবেলসীয় কায়দায় কুৎসা।

আর সম্প্রতি এতে নতুন মাত্রা। শুধু কুৎসা নয়, অপপ্রচার নয়, অপব্যবহার করো কেন্দ্রীয় এজেন্সির।
যাতে আইনি পথেও প্রতিপক্ষকে কালি লাগানো যায়। ব্যস্ত রাখা যায়। চাপ দেওয়া যায়। ভয় দেখানো যায়।
এই চাপের ভয়ে অনেক মেরুদণ্ডহীন গরু-ছাগল দল বদলে আশ্রয় খুঁজতে চক্রান্তকারীদের কাছে ভিড়বে। আর যারা আসবে না, তাদের হেনস্থা করে চাপ তৈরি করো। এটাই এখন বিজেপির রণনীতি। ক্রমশ এটা কুৎসিততর হচ্ছে। আর এই পদ্ধতিতেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে যাচ্ছে বিজেপি। মাঝেমধ্যে পোঁ ধরছে সিপিএম।

আরও পড়ুন- উপনির্বাচন হচ্ছেই, শুক্রবারই বৈঠকে কমিশনের ফুল বেঞ্চ!

বিজেপির সারা দেশের নেতারা বাংলার ভোটের আগে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গেলেন বয়সে তরুণ অভিষেককে। কী বলেননি? কী করেননি? বাড়িতে সিবিআই পাঠিয়েছেন। তাতেও বাংলার মানুষ বিজেপিকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা জানেন পিছনের রাজনীতিটা।

বাংলার বুকে পরাজয়ের ধাক্কাটা হয়েছে সর্বভারতীয়। সারা দেশে এর প্রভাব। এটা সহ্য করতে পারছে না বিজেপি। তাই অভিষেককে লক্ষ্য করে আক্রমণ বাড়াচ্ছে তারা। সিবিআই, ইডিকে নামানো হচ্ছে। অভিষেকের পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে চাপ বাড়ানো হচ্ছে।

কেন টার্গেট হচ্ছেন অভিষেক?

(১) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গতে দলের সাংগঠনিক হাল ধরেছেন। বাংলার বুকে সম্মানের লড়াইতে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বকে হারাতে দক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। একদিকে সময়োপযোগী কায়দায় সংগঠন সামলানো, প্রযুক্তির ব্যবহার, সিনিয়র-জুনিয়র ভারসাম্য, সরাসরি জনসংযোগ, দুরন্ত যুক্তিপূর্ণ ভাষণ, সবদিক থেকেই দ্রুত শীর্ষপর্যায়ে উঠে এসে জননেত্রীকে সাহায্য করেছেন অভিষেক। তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই, অভিজ্ঞতা, কাজের মডেলের সঙ্গে বিপুল পরিশ্রম ও সাধনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন অভিষেক।

আরও পড়ুন- ব্রাত্য বললেন বাম-কংগ্রেসের জন্য দরজা খোলা , আগামী ১৫দিন ত্রিপুরায় সব জেলায় সভা করবেন সুস্মিতা

(২) তৃণমূল কংগ্রেসকে অত্যন্ত কার্যকরীভাবে বাংলার বাইরেও প্রতিষ্ঠা করছেন। যেমন, অসম, ত্রিপুরা। ত্রিপুরায় এত দ্রুত পটপরিবর্তন চলছে যে বিজেপি উদ্বিগ্ন। তারা বুঝতে পারছে অভিষেক যেরকম জেদ নিয়ে যে ধরনের সিরিয়াস পরিকল্পনা কার্যকর করাচ্ছেন, তা বিজেপির পক্ষে চরম উদ্বেগের। জাতীয় রাজনীতিতেও বিকল্প মঞ্চের মূল আধার হয়ে উঠছে তৃণমূল।

(৩) তৃণমূলের সর্বাধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরেই মানুষের আবেগ। সম্প্রতি অভিষেক তার সঙ্গে যে সাংগঠনিক ম্যাজিক যোগ করে জননেত্রীর হাত আরও শক্ত করে দিচ্ছেন, তা বিজেপির কপালে ভাঁজ ফেলছে।

বিজেপি চায় না অভিষেক এভাবে এগিয়ে চলুন। বিশেষত বাংলার বাইরে বিজেপি শাসিত রাজ্যে পা রাখুন। ত্রিপুরার যা রিপোর্ট, তৃণমূল সরকার গড়ার দিকে এগোচ্ছে। ফলে অবিলম্বে অভিষেককে ঠেকানো বিজেপির বাঁচার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। তাতে প্ররোচনা দিচ্ছে সিবিআই, ইডি থেকে বাঁচতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির পা চাটতে যাওয়া এক কুলাঙ্গার বেইমান। এমন খবরও এসেছে, ভোটের আগে বিজেপির এক শীর্ষনেতার সামনে দলীয় বৈঠকে সে উত্তেজিতভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘‘আগে এখনই অভিষেককে গ্রেফতার করান। না হলে ভোটে জিততে পারব না।” তখন ওই বৈঠকেই এধরনের কুৎসিত চক্রান্তমূলক রাজনীতির বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূল থেকে যাওয়া আর এক নেতা। এই ধরনের বিজেপির ভেতরের খবর যত আসছে, ততই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে বিজেপি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করেছে। আসলে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা ভয় পাচ্ছেন অভিষেককে। ওঁর কাছে হেরে যাচ্ছেন। এই ভয় থেকেই এসব কাপুরুষোচিত চক্রান্ত।

আরও পড়ুন- বেআইনি ভাবে গাছকাটা রুখলেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার

কিন্তু অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এসব হয়রানি, হেনস্থা, কুৎসা করে তাঁকে বা তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকাতে পারবে না বিজেপি। মানুষ সব দেখছেন, বুঝছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে একদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই এবং অন্যদিকে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার কাজ তৃণমূল চালিয়ে যাবে। অসম, ত্রিপুরা তো বটেই, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির বিরুদ্ধে আসল বিকল্প শক্তির ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠার গুরুদায়িত্ব পালন করবে।

এমতাবস্থায়, অভিষেককে টার্গেট করে সবরকম নখদাঁত বার করে আক্রমণ করছে কেন্দ্রের বিজেপি। তৃণমূলের অন্য নেতাদেরও হেনস্থা করা হচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানারকম চক্রান্ত চলছে। রাজ্যের উন্নয়ন আটকানোর জন্য অসহযোগিতা করা হচ্ছে। আসলে বিজেপি ভয় দেখাতে চাইছে। তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হলেই নোটিশ, জেরা, চার্জশিট। ত্রিপুরায় সক্রিয় হচ্ছেন মলয় ঘটক। অতএব, তিনিও বাদ নন। কিন্তু এইভাবে সামলাতে পারবে না বিজেপি। ভয় দেখিয়ে এজেন্সির রাজনীতি করে মানুষকে সঙ্গে
পাওয়া যায় না।

এইসব চক্রান্তের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। বিজেপি তাদের এজেন্সিগুলিকে অপব্যবহার করে যে বিভ্রান্তিকর ধারণা ছড়াতে চাইবে, তার বিরুদ্ধে যুক্তি ও তথ্য-সহ প্রচার করতে হবে আমাদের সহকর্মীদের। কোভিড বিধি মেনেই সর্বাত্মক প্রতিবাদ ও প্রচার চলবে। কেউ কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। মানুষের কাছে বাস্তব বিষয়টা আমরা জানাব। বাকি শীর্ষনেতৃত্ব যে কর্মসূচি দেবেন, তা পালন চলবে। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস, ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে। প্রতিবাদ হবে। ব্যাঙ্কের সুদ কমছে। প্রতিবাদ হবে। দেশের সম্পদ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবাদ হবে। কেন্দ্রের কোভিড নীতি ব্যর্থ। প্রতিবাদ হবে। জাতিধর্মের নামে ভেদাভেদ। প্রতিবাদ হবে। বিজেপির দমনপীড়ন চক্রান্ত। প্রতিবাদ হবে। আর সমর্থনের প্রচার হবে বাংলার সরকারের উন্নয়নের মডেলের।

বাংলা থাকবে মানুষের আশীর্বাদে তৃণমূলের পাশে। আর বিজেপির রাজ্যে পা রেখে আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জয়, সাফল্য ছিনিয়ে আনব। দিল্লিতে সময়ের ডাকে সাড়া দেব। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা প্রস্তুত। মানুষ প্রস্তুত। বিজেপি পারলে ঠেকাক। চ্যালেঞ্জ রইল। ওইসব এজেন্সির ভয়ে দু’একজন কাপুরুষ মেরুদণ্ডহীন কুলাঙ্গার ভয় পেতে পারে। তৃণমূল ভয় পায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে বিজেপির সব ষড়যন্ত্র উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এগোতেই থাকবে।

আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমূল বদলাচ্ছে শিলিগুড়ি, বাড়তি আকর্ষণ অত্যাধুনিক অতিথিশালা ও পার্ক

 

advt 19

 

Previous articleবাংলাদেশে পৌঁছেছে ভারতের পাঠানো দুটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট
Next articleআফগানিস্তানের কুর্সিতে বসতে পারেন হিবাতুল্লা আখুনজাদা, ঘোষণা শীঘ্রই