C/o ডানলপ ফুটপাথের ইরা আসলে কে?

ঝরঝরে বাংলা ও ইংরেজিতে কথা। আচরণে স্পষ্ট শিক্ষার ছাপ। কিন্তু তার সঙ্গে বড্ড বেমানান তাঁর চেহারা; জীবনযাপন। ডানলপ মোড়ের আশপাশে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে দেখেন অনেকেই। পরনে বিবর্ণ-মলিন নাইটি, উস্কোখুস্কো চুল, কাঁধে ঝোলা। বৃদ্ধা কখনও চায়ের দোকান, কখনও রাস্তার খাবারের দোকানের সামনে বসে পড়েন। দোকানদাররা বিরক্ত হন। পথচলতি মানুষ এড়িয়ে চলেন তাঁকে। অথচ পরিচয় তিনি যেকোনো ভিআইপিকে (VIP) চমকে দিতে পারেন। তার নাম ইরা বসু (Ira Basu)। তাঁর দাবি, তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya) শ্যালিকা। মীরা (Mira Bhattacharya) ভট্টাচার্যের বোন।

আরও পড়ুন:সংক্রমণ রুখতে পুজোতে ভিড় ঠেকানোই প্রশাসনের কাছে এবার বড় চ্যালেঞ্জ

একসময় খড়দহের প্রিয়নাথ গার্লস হাইস্কুলের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন উচ্চশিক্ষিতা ইরা। তাঁর সহকর্মীরা জানতেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সঙ্গে আত্মীয়তার কথা। তবে, ইরা সে বিষয়ে যে খুব জাহির করতেন তেমনটা নয়। প্রাক্তন এক সহকর্মীর কথায় একবার তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত (Ashim Dashgupta) স্কুলের এক অনুষ্ঠানে এসে ইরা বসুর খোঁজ করেছিলেন। ২০০৯-এর 31 জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন ইরা। সেই সময় থাকতেন প্রধান-শিক্ষিকার লিচুবাগানের বাড়িতে। অবসর নেওয়ার পর তাঁর পেনশন যাতে ঠিকঠাক হয় তার জন্য চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা। কিন্তু তাঁর অভিযোগ পেনশন সংক্রান্ত নথি জমা দেননি ইরা। ফলে সে বিষয়ে আর কাজ এগোয়নি। তবে পিএফ- এর টাকা উনি পেয়েছিলেন।

আর কে আছে বাড়িতে? কেন এভাবে C/o ফুটপাথ হল তাঁর ঠিকানা। এ বিষয়ে তার একসময়ের সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, অনেকবারই পড়ুয়ারা, শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা মিলে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইরা ফেরেননি। অথচ নিজের পরিচয় কিন্তু ভুলে যাননি জীবন বিজ্ঞানের ‘দিদিমণি’। তিনি স্পষ্ট জানান, “আমি নিজের খাবারের খরচ নিজেই চালাই। রাস্তার ভিখারি নই”। আর তাঁর সঙ্গে এটাও জুড়ে দেন, “জামাইবাবু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেও তাঁর থেকে কোনো সুবিধে নিইনি”। তবে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রশংসা আজও ইরার মুখে। বিধাতার সঙ্গে সাপ-লুডু খেলা ইচ্ছা নিয়েই বোধহয় পথকে আশ্রয় করেছেন জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা।

advt 19

Previous articleআইওএম নির্বাচনে বাংলাদেশকে সমর্থন করবে ভারত
Next articleফের ঊর্ধ্বমুখী দেশের দৈনিক সংক্রমণ,বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা