তুঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বাঙালির আবেগে ধাক্কা দিয়ে দুর্গাকে নিয়ে ছেলেখেলা দিলীপ-সুকান্ত-শুভেন্দুর

একুশের বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতায় একটি কনক্লেভে তৎকালীন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ দুর্গার বংশ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর এমন বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপির বর্তমান সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিকে। যেহেতু তিনি সেই সময় রাজ্যে বিজেপির মুখ ছিলেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিতে হবে বিজেপি “দুর্গা বিরোধী”! যে দুর্গাকে আপামর বাঙালি শুধু ধর্মীয় ভাবে নয়, দুর্গাকে ঘরের মেয়ে, নারী শক্তির রূপ হিসেবে দেখে বাঙালি।

আরও পড়ুন – কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা

তবে দুর্গা নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নতুন নয়। আগেও বহুবার এমন ছবি দেখা গিয়েছে। গতবছর যখন রাজ্যের ক্ষমকতা দখলের তাগিদ ছিল তখন কতই না নাটক করেছিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। সেই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল দুর্গাপুজোকে ঘিরেই। সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে প্রথমবারের মতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আয়োজিত হয়েছিল বঙ্গ বিজেপির দুর্গাপুজো। বলা ভালো, মা দুর্গাকে সামনে রেখে “ভোট পুজো”-তে ব্রতী হয়েছিল বঙ্গ বিজেপি।

সেই পুজো উদ্বোধন করতে আবার দিল্লি থেকে উড়ে এসেছিলেন অমিত শাহ। দিল্লি থেকে সেই পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতবারেও এই পুজো নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেছিলেন দিলীপ ঘোষ ও তাঁর শিবিরের নেতারা। দিলীপ ঘোষ তখন সাফ জানিয়ে ছিলেন, কোনও রাজনৈতিক দলের কাজ নয় পুজোর আয়োজন করা। তাই ইজেডসিসি-তে যে পুজো হচ্ছে তা বিজেপির কয়েকজন নেতা করছেন, তা দলের পুজো নয়। এবারও প্রবল আপত্তি তুলেছেন তিনি। গতবছরও বিরোধিতা করে এই পুজোয় তিনি ছিলেন না। এবারও থাকবেন না।

কিন্তু রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আবার পুজো করতে বদ্ধ পরিকর। এবং ইতিমধ্যেই তাঁর লবির নেতাদের নিয়ে সেই আয়োজনও করে ফেলেছেন সুকান্ত। নমো নমো করে হলেও পুজো তিনি করবেনই। শোনা যাচ্ছে, এবার বিজেপির পুজোয় কলকাতায় আমন্ত্রিত সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।

গেরুয়া শিবিরের একটি অংশ বলছে, এসব নাকি সুকান্তের বুদ্ধিতে নয়, দলের মধ্যে দিলীপ ঘোষকে আরও কোণঠাসা করতে শুভেন্দু অধিকারীর কূটনৈতিক চাল। কলকাঠি নাড়ার মূলে আসলে শুভেন্দু। পুজোকে ঘিরে বঙ্গ বিজেপি শিবিরের আড়াআড়ি বিভাজন এবার সামনে নিয়ে চলে দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার। আর দিলীপের বিরুদ্ধে সুকান্তকে লেলিয়ে দিয়ে নিজেদের দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব পাকানোর কারিগর শুভেন্দু।

কেউ আবার বলছেন,”সংকল্প” রয়েছে, তাই তিন বছর পুজো করতে হয়। সুতরাং, ভক্তি ভরে দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, ককিছুটা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ও লোকলজ্জা এড়াতে এবারও পুজোর আয়োজন করেছে বিজেপি।

সবমিলিয়ে দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তুঙ্গে “দুর্গা বিরোধী” বঙ্গ বিজেপির। হিন্দুত্বের জিগির তোলা হিন্দু ধর্মের রক্ষক ও ধ্বজাদারী হিসাবে নিজেদের দাবি করে আসা বিজেপি এখন দুর্গাপুজোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শুধু ব্যবহার করছেনই না, নিম্নরুচী ও অপসংস্কৃতির পরিচয় দিয়ে
মা দুর্গাকে নিয়ে কার্যত ছেলেখেলার শুরু করেছেন দিলীপ-সুকান্ত-শুভেন্দুরা।

মা দুর্গাকে কার্যত অপমান করে আসলে বাঙালির আবেগ, শ্রদ্ধা, কৃষ্টি, সংস্কৃতিতেই আঘাত হানছে বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপি।

advt 19

 

 

 

Previous articleরোটি অন হুইলস: দরিদ্র মানুষের পাশে তিলজলা ট্রাফিক গার্ড, সহযোগিতায় লায়ন্স ক্লাব
Next articleদুর্গাপুজোর আবহেই কালীপুজোর খুঁটিপুজো, গান গাইলেন জিৎ