Soumitra Chattetjee : এক কিংবদন্তীর বিরহে ভারাক্রান্ত বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattetjee) নেই আজ এক বছর হল। ‘অপু’কে হারিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তা পূর্ণ হয়নি আজও । আর কখনোই তা পূরণ হবে না। কারণ সৌমিত্র বাবু একজনই ছিলেন, আর একজনই থাকবেন । যিনি উত্তম কুমারের সমসাময়িক হয়েও মহানায়কের সেই ম্যাজিকাল ক্যারিশমাকে তিলমাত্র ভয় না পেয়ে নিজেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

নিজের দক্ষতাকে- যোগ্যতাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে চলচিত্র জগৎ উত্তমকুমারকে শিরোধার্য করেও সৌমিত্রকে অবহেলা করতে পারেনি । শুধু তাই নয় সৌমিত্র না উত্তম : কে এগিয়ে, কার ফ্যান ফলোয়ার্স বেশি তা নিয়ে সেকালে তো বটেই একালেও বাঙালি রীতিমতো তর্কযুদ্ধ নামে । তাইতো বহু অভিনেতাকে নিয়ে ফেলুদা তৈরি হলেও সৌমিত্র অভিনীত ফেলুদা আজও যে চ্যানেলে দেখানো হয় তার টিআরপি হাই হয়ে যায়। জীবনের পরপারে গিয়ে তিনি এখনও সমভাবে প্রাসঙ্গিক।

সেদিন ছিল রবিবার । ১৫ নভেম্বর, ২০২০। দুপুরবেলা। একটি অশীতিপর শরীরকে নিয়ে চিকিৎসক এবং যমরাজের টানাটানি চলছিল কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে। চিকিৎসকরা বহু চেষ্টা করেছিলেন। লাখো লাখো ভক্ত- অনুরাগী প্রার্থনা করেছিলেন যাতে তাদের প্রিয় অভিনেতা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান । কিন্তু সবকিছুকে পিছনে ফেলে সৌমিত্র বাবু চলে গেলেন মহাসিন্ধুর ওপার। সবাই চলে যায় । যেতে তো সবাইকে হয়। তবু কিছু কিছু চলে যাওয়া ইতিহাসে বড় দাগ রেখে যায়। ঠিক তেমনই সৌমিত্র বাবুর চলে যাওয়া।

তিনি নিজেও হয়ত চেয়েছিলেন ফিরে আসতে। যেমন প্রতিবার অসুস্থতার পর সুস্থ হয়ে আবারো তিনি ক্যামেরার সামনে ফিরেছিলেন। তিনি নিজেও চেয়েছিলেন হয়ত জীবনের আরও কয়েকটি বসন্ত পার করতে। লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশন ছাড়া যার হৃদস্পন্দন ছিল অসম্পূর্ণ। মঞ্চের পর্দা ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন আপামর বাংলাও। সবাই ভেবেছিল তিনি নিশ্চয়ই ফিরবেন। বারবার তিনি ফিরে এসেছেন, এবারও তাই হবে, বিশ্বাস ছিল সকলের।

এদিন সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সকলেই সৌমিত্রকে স্মরণ করেছেন । পরিচালক- অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছেন,উনি যে এই একবছর আমাদের মধ্যে নেই, এটার একটা প্রভাব পড়েছে আমাদের মধ্যে। ওঁর সঙ্গে অনেক কাজ করার পরিকল্পনা ছিল। সেগুলো আর কিছুই করা হল না। ‘

স্মৃতি ভারাক্রান্ত সৌমিত্রকন্যা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব পৌলমী বসুও। পৌলমী বললেন, ‘গত এক বছরের মধ্যে শুধু বাবা নয়, মাও তো চলে গেলেন কয়েকমাস বাদেই! গভীর শূন্যতা এসেছে আমার জীবনে। কিন্তু তখনও বাবাই আমার অনুপ্রেরণা। বাবা বলতেন, কোনও বাধার কাছে মাথা নিচু করবে না। লড়াই করে এগিয়ে যাবে। জীবনে হারজিৎ থাকবেই। তাতে পিছিয়ে আসা নয়। কখনও, হারলেও এগিয়ে যাবার চেষ্টায় যেন কোনও খামতি না থেকে। বাবার সেই কথা মনে রেখেই সংসারের সব ঝক্কি সামলে আবার সামনে এগিয়ে চলেছি। ‘

Previous articleমমতা সরকারের অনুকরণ! মধ্যপ্রদেশে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের সূচনা নরেন্দ্র মোদির
Next articleTripura: সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে খবর করে ত্রিপুরা সরকারের রোষের মুখে দুই মহিলা সাংবাদিক