দু’জনেই প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ফুয়াদ হালিম ও কুণাল সড়কার। প্রথমজন চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি বাম নেতা। ভোটেও দাঁড়ান। হেরে গিয়েও ফের ভোটে দাঁড়ান এবং আবার হারেন। দ্বিতীয় জন বাইপাস সংলগ্ন নামি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার কুনাল সরকার, করোনা আবহে যিনি সংবাদ মাধ্যমেও খুব পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। আর সম্প্রতি শহরের এই দুই চিকিৎসককে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়। মূলত সিপিএমপন্থীরাই সামাজিক মাধ্যমে দুই চিকিৎসককে নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন।
ফুয়াদ হালিম এবং কুনাল সরকারকে নিয়ে সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঘোরাফেরা করছে। যা নেটিজেনরা শেয়ার করেছেন। লাইকের বন্যা বইছে। হাজার হাজার কমেন্ট ভেসে আসছে। এবং বেশিরভাগ জনই চিকিৎসক হিসেবে ফুয়াদ হালিমকে উঁচু করার চেষ্টা করেছেন। এবং ছোট করার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে কুনাল সরকারকে।
আরও পড়ুন:গোয়ায় তৃণমূলের দলীয় দফতরে পুলিশের তাণ্ডব, কমিশনে অভিযোগ জানাল ঘাসফুল শিবির
এই ভিডিওকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বা বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে, সেখানে ভিডিও ক্রিয়েটারেরা চেষ্টা করেছেন ফুয়াদ হালিমের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার। তাঁদের যুক্তি, ফুয়াদ হালিম চিকিৎসার নামে ব্যবসা করেন না। একজন প্রকৃত বামপন্থীর মতই চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করাটাই তাঁর মূল মন্ত্র। তাই এই দুর্মূল্যের বাজারেও ফুয়াদ হালিম তাঁর নিজস্ব হাসপাতালে মাত্র ৫০ টাকায় সাধারণ মানুষের ডায়ালিসিস করার ব্যবস্থা করেছেন। যেখানে বহু গবিব অসহায় মানুষ উপকৃত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ফুয়াদ হালিমের শুভানুধ্যায়ীদের বক্তব্য (যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বামপন্থী বলেই পরিচিত), কুনাল সরকার যে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, তারা আসলে চিকিৎসার নামে মোটা অংকের প্রফিট আর্নিং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। গরিব নিম্নমধ্যবিত্ত তো দূরের কথা, কুনাল সরকার যে হাসপাতালে সঙ্গে যুক্ত সেখানে নাকি বড়লোকেরাও চিকিৎসা করাতে যেতে পাঁচবার ভাবেন। কারণ অবশ্যই হাসপাতালের আকাশ ছোঁয়া বিল। অথচ এই হাসপাতালের চিকিৎসক কুনাল সরকার সংবাদমাধ্যমে এসে মানুষের সেবা করার বিষয়ে চিকিৎসকদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বড় বড় জ্ঞান দেন। হাসপাতালের চেম্বার ছেড়ে সংবাদ মাধ্যম বা টেলিভিশন স্টুডিওতেই বেশি দেখা যায় কুনাল সরকারকে। তিনি নাকি প্রচারের আলোয় বেশি বেশি করে থাকার জন্যই ডাক্তার সুলভভাবে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। আসলে তিনিও একজন ব্যবসায়ী। সবমিলিয়ে শহরের এই দুই নামি চিকিৎসককে নিয়ে এখন উত্তাল নেটদুনিয়া।
এদিকে ঘোষিত বামপন্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের পুত্র ফুয়াদ হালিম সিপিএমের প্রতীকে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। যদিও প্রতিবারই “গো-হারা” সঙ্গী হয়েছে ফুয়াদের। তবে ফুয়াদ হালিমের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সমর্থকরা বলছেন, রাজনৈতিক পরাজয় মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমকে দূরে সরিয়ে দেয়নি। বরং গরিবের জন্যে ভাবনা বেড়েছে তাঁর। এই বাম নেতা এবং চিকিৎসক বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে নিজের কিড স্ট্রিটের বাড়ির পাশেই হাসপাতাল গড়েছেন। হ্যাঁ, এটি মূলত গরিবের হাসপাতাল। ২০০৮ সালে এই হাসপাতালের পথ চলা শুরু। লকডাউনের আগে পর্যন্ত মাত্র ৩৫০ টাকায় ডায়ালিসিস হত এই হাসপাতালে। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হতেই তিনি ভাবেন, যাতায়াতের তেমন সুযোগ কোথায় এখন? আসতে-যেতেই যে অনেক টাকা বেরিয়ে যাবে মানুষগুলোর! সিদ্ধান্ত নেন কমানো হবে ডায়ালিসিসের খরচ। এবং ফুয়াদের হাসপাতালে ডায়ালিসিস করা হয়েছে মাত্র ৫০ টাকায়।
অন্যদিকে কুনাল সরকার বাইপাস সংলগ্ন যে ঝাঁ-চকচকে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, সেই হাসপাতালের একটা বড় অংশ করোনা আক্রান্তদের জন্য বরাদ্দ। অনেক কোভিড আক্রান্ত মানুষ কুনাল সরকার যে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বটে, কিন্তু বিলের বহরে তাঁদের চোখ কপালে উঠেছে। ঠিক এই বিষয়টি তুলে ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ফুয়াদ হালিমের সমর্থকরা কুণাল সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।