“করোনার জন্য গতবছর থেকেই পুজোর আয়োজন কমিয়ে দিয়েছি”

শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী :  বাবার গানের স্কুল ছিল ‘সুরমন্দির সঙ্গীত ভবন’ আমার জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই সেখানে বিরাট করে সরস্বতী পুজো হত। বাবার ছাত্রছাত্রীরা আয়োজন করত সবটা । আমার মা রান্না করতেন। হাঁড়ি-হাঁড়ি খিচুড়ি, আলুরদম, লাবড়া, পায়েস অনেক পদ রান্না হত। তখনকার দিনে  মায়েরা কত অনায়াসে এত-এত রান্না করে ফেলতেন তা ভাবতেও অবাক লাগে। বাবার ছাত্ররা বাজারে যেত। তখন সরস্বতী পুজোর বাজার করতে যাবার প্রধান মজা ছিল ফল চুরি করা। এটা কিন্তু সবাই করত। এখনও সেটা হয় কি না জানি না। সরস্বতী পুজোর এটাই মজা। বাবার ছাত্ররাও যখন বাজার করতে যেত তখন একটা আলাদা ব্যাগ যেত সঙ্গে সেই ব্যাগে করে আসত চুরি-করা ফল। আর একটা ব্যাগে থাকত কেনা ফল। পুজোর দিন আমাদের বাড়িতে যেন এক মহোৎসব। অনেক লোকজন আত্মীয় বন্ধু আসত। তাঁদের বসিয়ে খাওয়ানো হত। সন্ধের দিকে গানবাজনার আসরও বসত। চিন্ময় লাহিড়ী, তারাপদ চক্রবর্তী, কৃষ্ণা গাঙ্গুলি এঁরা আসতেন ক্লাসিকাল সংগীত পরিবেশন করতেন। আমি তখন খুব ছোট । সবে গান গাইতে শিখেছি। বাবা একটা সরস্বতী স্তোত্র  শিখিয়েছিলেন ওটাই গাইতাম। এরপর বাবা-মা চলে গেলেন। তখন ১৯৮২  সালে আমি গল্ফগ্রিনের বাড়িতে চলে আসি। আগে আমরা থাকতাম শোভাবাজারে। তখন ভাই-বোনেরা সকলে মিলে বাবার স্কুল সুরমন্দির সঙ্গীত ভবনের সরস্বতী পুজোটা নিয়ে চলে এলাম গ্লফগ্রিনে। বিরাট করে করতাম সেই পুজো। সেখানেও অনেক লোকজন আসত। এটাই আমাদের পরিবারের একমাত্র সবচেয়ে বড় উৎসব ঠিক দুর্গোৎসবের মতো। খুব বড় মাটির ঠাকুরের মূর্তি আসত তখন। এরপর একবার পার্ক স্ট্রিটের একটা অ্যান্টিক শপে কিছু জিনিস কিনতে গেছি ওখানে একটি অষ্টধাতুর সরস্বতী দেখে এত ভাল লাগল যে মনে হল এই মাকেই প্রতিষ্ঠা করব আমার বাড়িতে। ওই মা সরস্বতীর ছিল চারহাত। বাবা বলতেন সবসময় চারহাতের সরস্বতী কিনবি। ওরা অনেক দাম হাঁকছিল। কিন্তু দোকানের মালিক আমাকে দেখে চিনতে পেরেছিল। তো ওঁর জন্য ঠিক দামে সরস্বতীমূর্তি পেয়ে গেলাম। এখন আমার গানের ঘরে সেই অষ্টধাতুর দেবী প্রতিষ্ঠিত। তারপর থেকে সেই মূর্তিই প্রতিবছর পুজো হয়। এই পুজোরও মহা আয়োজন। খিচুড়ি, লাবড়া, অসময়ের এঁচোড় থেকে শুরু করে পটলের ডালনা কী না থাকে। সবাই পাতপেড়ে খায়। কিন্তু  করোনার জন্য গতবছর থেকে কমিয়ে দিয়েছি আয়োজন। এ-বছরও খুব বেশি বড় করব না পুজো এমনটাই ভেবেছি। কিন্তু না করলে কী হবে সবাই চলে আসবে আমার বাড়ি পুজোর দিন। কাউকে বলতে হয় না।

Previous articleRoad Accident: কাঁকুড়গাছিতে বাইকে ধাক্কা ম্যাটাডোরের, মৃত্যু এক মহিলার
Next articleSushil Kumar: সুশীল কুমারের জামিনের আবেদন নিয়ে পুলিশের কী অবস্থান, জানতে চাইল দিল্লি হাইকোর্ট