ম্যাজিক আর মিরাকেলের গল্প ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’

দূর্বা সেন বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতিকার

জীবনে বাঁচাটাই একটা পাগলামি। কিন্তু সেই পাগলামির বীজটা ঠিক কোথায়? এমনও তো হতে পারে খুব বেশি হিসেবি হয়ে যাওয়াটাই পাগলামি। যাঁদেরকে অতিমাত্রায় স্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছে হয়তো দেখা যাবে পাগলামির বীজটা তাঁদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি।

আর সবচেয়ে বড় পাগলামি হলেও জীবন যেমনটা হতে পারে তাঁকে সেভাবে না দেখে, জীবন যেমন তাকে সেভাবেই দেখা।

তাই আমার মনে হয় এই পাগলামো এই নস্টালজিয়া কুয়াশার ভেতর থেকে হেঁটে আসা লাল জ্যাকেট পরা নেপালি ছেলেটা হট চকলেট আর সাদা রংয়ের পুরনো কাপটা, আফটার শেভ, বিস্কুট, পেস্ট্রি আর কফি মেশানো একটা অদ্ভুত গন্ধ ভরা গ্লিনারিস, সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘা- এইসব নিয়ে রাজর্ষি দে নতুন বাংলা ছবি ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ (Abar Kanchenjunga)।

টলিউডের ১৭ জন প্রথমসারির অভিনেতা একসঙ্গে এক সিনেমাতে অভিনয় করলেন। ছোটবেলায় শুনেছি যে আমার শহর অবসর সময় ফুটবল খেলে, আর দার্জিলিং অবসর সময় গান গায় সেরকমই অনুভুতি হল পুরো ছবিটা দেখে। সম্পর্কের পরিণতি সম্পর্কে অন্তর্নিহিত ম্যাজিক আর মিরাকেলের গল্প হল ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’।

আরও পড়ুন: রাজার আসনে রাজামৌলি

এখানে আমি নিজে গান লিখেছি আমার অভিমানের গান আমার কুয়াশার গান। আমার মেঘলা হয়ে আসা আকাশের গান আর সেটি গেয়েছেন উজ্জয়িনী। গান গেয়েছেন অনুপম, এই প্রথম কোনও বাংলা ছবিতে ‘দেখো সখা’ রবীন্দ্র সংগীতটি ব্যবহার করা হয়েছে শিল্পী জয়তী চক্রবর্তীর কণ্ঠে। শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী গিয়েছেন ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’। ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আশু চক্রবর্তী।

ছবির দৃশ্যাবলি চোখকে অসম্ভব আরাম দেয়। এতটাই যে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, যে কানের পাশ দিয়ে একটা ঠান্ডা হাওয়া আমাকে ছুঁয়ে সোজা কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে চলে যাচ্ছে। ছবির চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন গোপী ভগৎ।

অভিনয়ই এই ছবির সম্পদ। কিন্তু আলাদা করে উল্লেখ করতে হয় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রাহুল, গৌরব চক্রবর্তী আর রনিতা দাসের কথা। তাঁরা যেন একেবারেই প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে আরও প্রাণ দিয়েছেন ছবিতে।

গল্প লিখেছেন পরিচালক ডিজে এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। ছবিটির অতিরিক্ত সংলাপ লেখার দায়িত্বে পরিচালক রাজর্ষি যেখানে লেখার মধ্যেই যেন জীবনানন্দের ছটা খুঁজে পান দর্শকরা।

১৭ জন অভিনেতাকে এরকম অভিনয় করার স্পেস দেওয়ার মধ্যে যে দারুণ এক মুন্সিয়ানা আছে সেটা পুরো মাত্রায় তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন ছবিতে।

সবশেষে কুর্নিশ পরিচালক রাজর্ষিকে, যিনি বুঝিয়েছেন ভালবাসার দিকে বেশিক্ষণ পিঠ ফিরিয়ে থাকা যায়না, ভালবাসার উপর অভিমান করা যায় না, ভালবাসাকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায় না – এটা নিজে বুঝে তিনি ছবি বানিয়েছেন, যেখানে তুমি থেকে তুই হয়ে যাওয়াটা পরিষ্কার, অনেকটা ওই কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো।

বাঙালির এই ছবির করে দেখা উচিত কারণ, আমাদের জীবনের ছোট ছোট ম্যাজিক আর মিরাকেলগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কে বলতে পারে যে আপনি নতুন একটা ম্যাজিক আর মিরাকেল খুঁজে পাবেন কি না? দেখে নিন চটপট “আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা” (Abar Kanchenjunga)।



Previous articleMarrige at old age: বৃদ্ধাশ্রম প্রেম, ৬০ পেরিয়ে নতুন পথ চলা শুরু বৃদ্ধ বৃদ্ধার
Next articleSingur: রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রেন, ভেতরে পড়াশোনা করছে কচিকাঁচারা !