গেরুয়া সন্ত্রাসের আবহেই আজ ত্রিপুরায় অভিষেক, করবেন ঐতিহাসিক রোড-শো

গেরুয়া সন্ত্রাসের আবহে ত্রিপুরার মানুষ অভিষেকের আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আজ, ঐতিহাসিক রোড-শো'তে পা মেলাতে তৈরি ত্রিপুরাবাসী

তেইশে ত্রিপুরায় হাইভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচন। তার মাত্র কয়েক মাস আগেই রাজ্যের চার কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়চড় করে বাড়ছে। বিধানসভা ভোটের আগে এই উপনির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া পুরভোটের ফল বলছে, ত্রিপুরার নতুন রাজনৈতিক বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাম-কংগ্রেস যেখানে কার্যত নিষ্ক্রিয়, সেখানে জোড়াফুল মানুষের মনে দাগ কেটেছে। পুরভোটে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস, ছাপ্পা, ভোট লুঠ, অবাধ অশান্তির পরও গড়ে ২০ শতাংশের উপরে ভোট পেয়েছে তৃণমূল। অর্থাৎ, গেরুয়া চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে মানুষ যদি নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে ত্রিপুরার অনেক অঙ্ক ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে।

আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। এরই মাঝে ত্রিপুরা উপনির্বাচনের প্রচারে আসছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ঐতিহাসিক রোড-শো এবং জনসভা রয়েছে অভিষেকের।
৬-আগরতলা ও ৮-টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে অংশ নেবেন তিনি।

বরদোয়ালি কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পান্না দেবের সমর্থনে এদিন বেলা ১২টা নাগাদ মেলার মাঠ সংলগ্ন গান্ধি ঘাট থেকে আগরতলা জিবি বাজার পর্যন্ত অভিষেক একটি বর্ণাঢ্য মিছিল করবেন। মিছিল শেষে আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রে একটি সভা করবেন তিনি। বাকি দুই কেন্দ্র সুরমা ও যুবরাজ নগরেও আগামী ২০ জুন প্রচার করার কথা আছে তাঁর।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনকে অ্যাসিড টেস্ট হিসাবে দেখছে ঘাসফুল শিবির। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিপ্লব দেব ইস্তফা দেওয়ার পর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মানিক সাহা। তিনি এবার উপনির্বাচনে বড়দোয়ালি কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ছেন। আবার বিজেপি থেকে সুদীপ রায় বর্মন ইস্তফা দেওয়ায় অকাল ভোট হচ্ছে আগরতলা কেন্দ্রে। এই দুই কেন্দ্রেই মঙ্গলবার রোড-শো করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর অভিষেকের আগমন নিয়ে গোটা ত্রিপুরাবাসীর মধ্যে তুমুল উন্মাদনা তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে, অভিষেক আসার আগেই ত্রিপুরা জুড়ে তাণ্ডব শুরু করেছে গেরুয়া শিবিরের হার্মাদরা। তৃণমূলের প্রচারে ব্যবহৃত সমস্ত ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন, পোস্টার ছিড়ে দিয়েছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব। কার্যত ভয় পেয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় পৌঁছনোর আগেই টাউন বরদোয়ালি কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমুল কংগ্রেস প্রার্থী সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে। কিন্তু নির্বিকার জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

এখানেই শেষ নয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পা রাখার চব্বিশ ঘণ্টা আগে গতকাল, সোমবার রাতে ধুন্ধুমার ত্রিপুরার আগরতলায়। পুরভোটের মতো উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে গেরুয়া সন্ত্রাস অব্যাহত। অভিষেকের আগমনে কার্যত ভয় পেয়ে বিজেপির হার্মাদরা দাপিয়ে বেড়ালো রাজধানী আগরতলা জুড়ে। ৬, আগরতলা বিধানসভা উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পান্না দেবের সমর্থনে একটি পথসভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে ব্যাপক জমায়েত হয়েছিল। অন্যতম বক্তা ছিলেন তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কিন্তু এই পথসভার ভণ্ডুল করতে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। পুলিশ থাকলেও তাঁরা কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেন।

ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব-সহ আক্রান্ত হয়েছেন কুনাল ঘোষ নিজেও। বিজেপির সন্ত্রাসে ছাড় পাননি আগরতলা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পান্না দেব-সহ মহিলাকর্মী-সমর্থকরাও। তৃণমূলের অভিযোগ, নিজেদের পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়েছে বুঝতে পেরে ভোট যত এগিয়ে ততই অশান্তি পাকাচ্ছে বিজেপি। যদিও গেরুয়া সন্ত্রাসের আবহে ত্রিপুরার মানুষ অভিষেকের আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আজ, ঐতিহাসিক রোড-শো’তে পা মেলাতে তৈরি ত্রিপুরাবাসী।

আরও পড়ুন- অভিষেক আসার আগেই গেরুয়া সন্ত্রাস ত্রিপুরায়, আক্রান্ত তৃণমূল, নীরব দর্শক পুলিশ

Previous articleহোম স্টে’তে রাজ্যকে এক নম্বর করতে পদক্ষেপ শুরু মুখ্যসচিবের
Next articleআজ মঙ্গলবারই কাজে ফিরতে চান জখম প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম