থানায় গিয়ে ভুয়ো ডাকাতির গল্প, চাপে পড়ে সোনা লুঠের কথা স্বীকার অভিযোগকারীর

গিরীশ পার্কে সোনার দোকানে নাটকীয় চুরি। লুঠের তদন্ত করতে নেমে রীতিমত হতবাক পুলিশ। সোনা হাতিয়ে নিজেকে জখম করে সটান থানায় পৌঁছল দোকানেরই কর্মচারী। গল্প ফেঁদে হাতাতে চেয়েছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সোনার গহনা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তদন্তে নেমে রহস্যের কিনারা করে পুলিশ। মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার হয় বিপুল অঙ্কের সোনার গহনা। ইতিমধ্যেই ঘটনার মূল চক্রী ও তাঁর ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ছুটছে কলকাতা-ঢাকা রুটের বাস পরিষেবা ‘সৌহার্দ্য’

সোমবার রাতে গিরীশ পার্ক থানায় মাথায় আঘাত নিয়ে পৌঁছন নীতীশ রায় নামের ওই অভিযুক্ত। পুলিশকে তিনি জানান, ট্যাক্সি করে দুই দুষ্কৃতী এসে সিংহীবাগানের অফিস থেকে সোনা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। লুঠ হওয়া সোনার পরিমাণ প্রচুর। ১১৬ গ্রাম সোনার ৭টি বাট, ৭৪৩গ্রাম সোনার একটি বাট চুরি গিয়েছে বলে জানান। পুলিশকে নীতীশ জানান, দুষ্কৃতীদের বাধা দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সজোরে তাঁর মাথায় আঘাত করে দুষ্কৃতীরা।

অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ। সিংহীবাগানের অফিসে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের আধিকারিকরা। স্থানীয়রা জানান, কোনওরকম চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পাননি। তারপর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ট্যাক্সি করে দুজন ওই অফিসে ঢোকে। কিছুক্ষণ পর ওই অভিযুক্ত সহ আরও একজন ট্যাক্সিতে উঠে আবার চলে যায়। কিন্তু সেখানে কোনও ধ্বস্তাধ্বস্তি-মারামারির ঘটনা ঘটেনি।পুলিশের দাবি, নীতিশের বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। মিথ্যে ডাকাতির গল্প ফাঁদছেন তিনি, তা জেরাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়। এর পর ম্যারাথন জেরা শুরু হলে ভেঙে পড়েন নীতীশ। স্বীকার করেন, লুঠের গল্প সবটাই ভুয়ো। আসলে সোনা লুঠ করেছেন তিনি নিজেই। সেই লুঠ হওয়া সোনা লুকোতে সাহায্য করেছেন তার ভাই নিতিন।


জানা গেছে, সোনার দোকানের মালিক থাকেন ওড়িশায়। এখানে তাঁর সোনার ব্যবসা দেখভাল করেন নীতিশ। মূলত বাংলাদেশ সোনা আমদানি করা সোনা গলিয়ে ওড়িশাতে মালিকের কাছে পাঠানোর কাজ ছিল নীতিশের। বছর দেড়েক ধরে কাজ করছেন। রবিবার রাতে আসে দেড় কেজি সোনা। সেটাকে হাতানোর পরিকল্পনা করেন নীতিশ, সঙ্গত দেয় ভাই। সে রাতেই ভাইয়ের কাছে পুরো সোনা দিয়ে দেন নীতিশ। এরপর শুরু করে সোনা লুঠের ভুয়ো ‘প্লট’।ভাইকে বলেন, একজনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর অফিসে আসতে। নীতিশ ভাইকে বলে দেন সিসিটিভির সামনেই ট্যাক্সি দাঁড় করাতে। সাজানো ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী, এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে দাদার অফিসের আসেন ভাই। কিছুক্ষণ পরে একটি ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে ট্যাক্সি করে বেরিয়ে যান তারা। এরপর নিজেই নিজের মাথা ফাটিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।


এরপর রাতেই তল্লাশি চালায় পুলিশ। উল্টোডাঙা রেল আবাসনের কাছে একটি ক্লাব লাগোয়া পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হয় ওই বিপুল পরিমাণ সোনা। নীতীশ এবং নিতিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


Previous articleপ্রয়াত প্রাক্তন কিংবদন্তি হকি খেলোয়ড় বরিন্দর সিং
Next articleBisakh Mondal: গুগল,অ্যামাজন নয়, ফেসবুককেই বাছলেন যাদবপুরের পড়ুয়া !