লক্ষ্য প্লাস্টিক মুক্ত সিবি কমিউনিটি মার্কেট, বিলি হল বিকল্প ব্যাগ

রাজ্য সরকার পয়লা জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের (Micron) নীচে প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ (Bag) নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ধরনের ক্যারি ব্যাগ উৎপাদন ও রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনও দোকানদারকে এই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে পণ্য হস্তান্তর করতে দেখা গেলে তাঁকে জরিমানা করা হবে। সঙ্গে ক্রেতাকেও জরিমানা করা হবে। অতীতে এ ধরনের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে জনগণকে প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এ বার রাজ্য সরকার প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে সস্তা এবং সহজলভ্য একক ব্যবহারের প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ নিষিদ্ধ করার আগে বিকল্প খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একই সময়ে, এই ধরনের পদক্ষেপে নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা দেখা অপরিহার্য ছিল বলা চলে। কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ, নিউটাউনের সিবি ব্লকের সহযোগিতায় নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে সিবি ব্লক কমিউনিটি মার্কেটকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। যার মূল লক্ষ্য, ২৪ মাসের মধ্যে এটিকে প্লাস্টিক মুক্ত বাজারে পরিণত করা। প্রথমে সমস্ত দোকানদার, রাস্তার বিক্রেতা, গ্রাহক এবং সংলগ্ন ব্লকের বাসিন্দাদের সংবেদনশীল করা হয়েছিল। দোকানদার ও রাস্তার বিক্রেতাদের জন্য আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নগরবাসীর জন্য ঘরে ঘরে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়। সিবি মার্কেটের আশেপাশে বসবাসকারী ২৩১৩টি পরিবারকে বিনামূল্যে কাপড়ের ব্যাগ প্রদান করা হয়েছে। সবজির মাড় দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের বিকল্প- ক্যারি ব্যাগ বাজারে আনা হয়েছে। এই ক্যারি ব্যাগ ৯০ দিনে নষ্ট হয়ে যায়। পরিবেশ বান্ধব ক্যারি ব্যাগের পাশাপাশি বাদামী কাগজের প্যাকেট এবং মাটির পাত্র- মুদি দোকান ও মিষ্টির দোকানে ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। প্রকল্পটি শুরু হওয়ার আগে সিবি কমিউনিটি মার্কেট প্রতি মাসে ১৬৮ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করত। এখন একক ব্যবহারের প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগের মাসিক ব্যবহার মাত্র ২ থেকে ৩ কেজিতে নেমে এসেছে। প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত ১৬৬০ কেজি প্লাস্টিককে রোধ করে পরিবেশ দূষিত করা বন্ধ করেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ দোকানদার এবং সচেতন বাসিন্দাদের সহায়তায়, প্রকল্পটি চালু হওয়ার দিন থেকে তিন মাসের মধ্যে সফল হয়েছিল।

প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগ ও প্যাকেটগুলির অতিরিক্ত খরচ এনকেডিএ -র পক্ষ থেকেভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভর্তুকিটি ১১ মাসের নির্দিষ্ট সময়ের পর পর্যায়ক্রম ভাবে বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে এই ভর্তুকি দোকানদারদের কাঁধে রয়েছে, যারা এর জন্য গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করতে পারে। এই প্রকল্পটি আটটি ভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্যও বিকল্প আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। এসএইচজি সদস্যরা ব্রাউন পেপারের প্যাকেট তৈরি করে সরাসরি দোকানদারদের কাছে বিক্রি করছে। এইভাবে, সরাসরি বাজার সংযোগ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সুবিধা হয়েছে। আগে তাঁদের গড় মাসিক আয় ছিল ২১৫৯ টাকা। এখন এই প্রকল্পে জড়িত হওয়ার পর তাঁদের মাসিক আয় বেড়ে ১২০০০ টাকার কাছাকাছি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যারা বাজারে সমস্ত জিনিসপত্র প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগে পাওয়ার আশায় আসতেন, তারা এখন কন্টেইনার বা ডালা এবং কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে কেনাকাটা করতে আসেন। পাইলট প্রকল্পের সাফল্য নিঃসন্দেহে “তিলোত্তমা”কে প্লাস্টিকমুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যা প্রশাসনের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রমাণিত হবে।

আরও পড়ুন:লাগাতার প্রতারণা PMO কর্তাদের নাম করে, CBI দ্বারস্থ প্রধানমন্ত্রীর দফতর

 

 

Previous articleলাগাতার প্রতারণা PMO কর্তাদের নাম করে, CBI দ্বারস্থ প্রধানমন্ত্রীর দফতর
Next articleRupankar Bagchi: ফের বিপাকে রূপঙ্কর , এবার গান চুরির অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে