লোহার রড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকেছিলেন যুবক, বাবার দাবি ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন !

মুখ্যমন্ত্রীর জ়েড প্লাস নিরাপত্তাকে কার্যত প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে শনিবার গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়া ওই আগন্তুককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি নয়, কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজার ভেবেই নাকি পাঁচিল টপকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল সে৷ পুলিশি জেরায় এমনই দাবি করেছে গত শনিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়া যুবক হাফিজুল মোল্লা৷ এমনকী, তাঁর সঙ্গে ছিল একটি লোহার রড! সেই রড নিয়েই ঘণ্টা সাতেক কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থাকার ঘরের উল্টো দিকে বসেছিলেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর জ়েড প্লাস নিরাপত্তাকে কার্যত প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে শনিবার গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়া ওই আগন্তুককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, প্রায় এক ফুট লম্বা লোহার রড জামার ভিতরে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কনফারেন্স হলের পিছনে ডান দিকে সাত ঘণ্টা চুপচাপ বসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ থানার নারায়ণপুর গ্রামের হাফিজুল।

প্রাথমিক জেরায় হাফিজুল পুলিশের কাছে দাবি করেছে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িকে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর বলে ভেবেছিল সে৷ তাই ভেবেই সেখানে ঢোকার চেষ্টা করে সে।কিন্তু গভীর রাতে ঠিক কোন প্রয়োজনে তার লালবাজারে যাওয়ার প্রয়োজন, তার যথাযথ ব্যাখ্যা হাফিজুল দিতে পারেনি ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীদের ‘শিফ্ট’ বদলের পরে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ টহলদারির সময়ে হাফিজুলকে বসে থাকতে দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে পুলিশকে দেখে পালানোর চেষ্টারও। তখনই তল্লাশির সময়ে জামার ভিতর থেকে লোহার রড বেরিয়ে আসে। যদিও কী কারণে তা সঙ্গে ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।ওই যুবক প্রথমে দাবি করে, সে ফল বিক্রি করে৷ আবার পরে সে নিজেকে পণ্যবাহী গাড়ির চালক বলে দাবি করে৷ পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই যুবক মানসিক ভাবে স্থিতিশীল নয়৷ শনিবার রাতে কালীঘাটে পৌঁছনোর আগে সে কোথায় কোথায় গিয়েছিল, সেই সমস্ত তথ্যও খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘আমরা ওর দাবি খতিয়ে দেখছি৷ শনিবার এখানে আসার আগে ও সারাদিন কী করেছে, কীভাবে কালীঘাটে পৌঁছল, সে সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তাছাড়া ধৃত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে একাই ছিল, নাকি ওর সঙ্গে অন্য কেউ ছিল, তাও আমরা খতিয়ে দেখছি৷ পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে ও কীভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকল, তাও জানার চেষ্টা চলছে৷’

ধৃত হাফিজুলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৫৮ নম্বর ধারায় ক্ষতিকারক উদ্দেশ্য নিয়ে কারও বাড়িতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে৷বিষয়টি নিয়ে নবান্নেও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে৷ হাফিজুলের বাবা দাবি করেছেন, ছেলের মাথা খারাপ। রাত হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। আগে এক বার হাসনাবাদ থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। এক বার নবান্নে ঢুকে পড়ায় পুলিশ ধরেছিল। এ বার শুনছি দিদির বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। ‘দিদি’কে ভালবাসেন বলেই ছেলে কখনও নবান্ন, কখনও বাড়িতে চলে যায় বলে বাবার দাবি। হাফিজুলের স্ত্রীর জানিয়েছেন, আগে ভালই ছিল। পাঁচ-সাত মাস হল মাথা খারাপ হয়েছে। কাউকে কখনও মারে, কখনও গলায় দড়ি দিতে যায়। গরম উনুনের মধ্যে হাত দিয়েছিল। আমরা গরীব। চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নেই।

এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, কী উদ্দেশ্য নিয়ে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ভিতরে উনি ঢুকেছিলেন, তা জানা দরকার। কোনও নাশকতার জন্য ‘রেইকি’ করতে আসা কি না, তাও জানা দরকার। ধৃতকে নিয়ে পুরো ঘটনার পুনর্গঠন করা হবে বলে জানা গিয়েছে। একাধিক প্রাক্তন পুলিশ কর্তার বক্তব্য , গাফিলতি না থাকলে, এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। লালবাজারেরও উচিত কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখা। নিশ্চয়ই কোনও গাফিলতি ছিল। মুখ্যমন্ত্রী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকেন। তাই এই সব ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল পুলিশের।

তদন্তকারীদের একটি দল হাসনাবাদ পৌঁছে এলাকায় খোঁজখবর করছে বলেও লালবাজার সূত্রে খবর। হাফিজুলকে সোমবার আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে তোলা হলে, বিচারক সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

 

 

 

Previous articleভিভো সহ একাধিক চিনা মোবাইল সংস্থার উপর ED-র নজর, চলল অভিযান
Next articleনূপুরকে নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের মন্তব্যের বিরোধিতা করে পাল্টা বয়ান প্রাক্তনীদের