পুজোর (durga puja) আগে রাজনীতি (politics)থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কোনও এক অজানা কারণে অভিমানী ছিলেন। হতাশাও ব্যক্ত হয়েছে তাঁর চোখেমুখে। আর পুজো শেষ হতেই কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায় (Tapas Roy)। গতকাল, মঙ্গলবার বরানগরের বিধায়ক সরাসরি বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sudip Banerjee) বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। শুধু ক্ষোভ প্রকাশ নয়, আকারে-ইঙ্গিতে তিনি বলতে চেয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের Mamata Banerjee) মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। চক্রান্ত করছে দলেরই কিছু লোক। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি সেই চক্রান্তকারীদের চিনতে পেরেছেন, চিহ্নিতও করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সতর্ক হওয়া উচিত।
সাংসদের বিরুদ্ধে দলের অন্যতম বর্ষীয়ান বিধায়ক বিস্ফোরক মন্তব্য করায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে তৃণমূল। উত্তর কলকাতায় দলের দুই বর্ষীয়ান নেতার বিরোধ মেটাতে তড়িঘড়ি উদ্যোগী হয়েছে ঘাসফুল শিবির৷ ইতিমধ্যেই তাপস রায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের সিনিয়র নেতারা৷
একইসঙ্গে তাপস রায়ের অভিমান ভাঙাতে আজ, বুধবার সকালেই বিধায়েকর বাড়িতে যান দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal ghosh)৷ দলের শৃঙ্খলা মেনে চলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক তাপস রায় ঠিক কী বিষয়ে ক্ষোভ তা জানতে উদ্যোগী হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে ঠিক কী বলেছিলেন তাপস রায়?তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। চক্রান্ত করছে দলেরই কেউ কেউ। তাঁদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে দলের মধ্যে থেকেই অনেকে দলের ক্ষতি করেছে। তাঁর কথায়, “এই মুহূর্তে আমাদের দলের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত চলছে। একটা কঠিন সময় চলছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে অনেকে দলে থেকে দলেরই ক্ষতি করেছে। আমাদের দলে ডিভাইডেড লয়ালিস্ট আর ডেডিকেটেড লয়ালিস্ট আছে। ডেডিকেটেড লয়ালিস্টদের সামনে আনা প্রয়োজন। তাদের সিক্রেট কথাবার্তায় রাখতে হবে। না হলে দল নানা অসুবিধা ফেস করবে।”
তাপস রায় আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করে জানান, এই সময়কার রাজনৈতিক মহল দেখে তাঁর মনে হয়েছে, অনেকেই একাধিক জনের বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। যা অবিলম্বে দলের খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা উচিৎ। তৃণমূলের কোটি কোটি সমর্থক। তারাই দলের প্রকৃত সম্পদ। কিন্তু কয়েকজন স্বার্থপর দলকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এদের নাম প্রয়োজনে সামনে আসবে। এরা দলের বোঝা, এরা সম্পদ নয়। দলের পক্ষে ক্ষতিকর। কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে নেতারাও সেটা জানেন।
তমোঘ্ন ঘোষ ইস্যুতে তাপস রায় খুব তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, “ছাত্র পরিষদের জন্য তমোঘ্নকে দিদিমণির সামনে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওর বাবা তপন ঘোষ সাংসদের সচিব। কে যে কার ব্যক্তি স্বার্থে কী করেন সেটা দেখার। সকলেই সব জানে। তমোঘ্নদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়, সেখানে শুভেন্দু-সুদীপ-কল্যাণ চৌবে গিয়েছিলেন। সবাই সব খোঁজ রাখেন। দলকে এখন দেখতে হবে, কাদের কাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমি ৫১ বছর ধরে রাজনীতি করছি। অনেক কিছু দেখেছি। অনেক কিছুই জানি। আমি কিন্তু চিনতে পেরেছি, চিহ্নিতও করেছি।”
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের প্রাক্তন ছাত্র নেতা তমোঘ্ন ঘোষকে সম্প্রতি উত্তর কলকাতার সাংগঠনিক সভাপতি করে বিজেপি৷ এর পরেই তমোঘ্ন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই বিতর্ক শুরু হয়৷ তা নিয়েই সাংসদের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খোলেন বরানগরের বিধায়ক।