চাকরিপ্রার্থীদের আবেগ নিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরছে বিরোধীরা: তীব্র আক্রমণ বুদ্ধিজীবীদের

জয়িতা মৌলিক

আইনের পথে হেঁটেই সুষ্ঠুভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সরকার। কিন্তু এর মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়ে সরাসরি চাকরির দাবিতে ধর্নায় বসেন ২০১৪-র চাকরিপ্রার্থীরা। ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও তাঁরা স্থান দখল করে বসেছিলেন। বহু আবেদনের পরে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আইন মেনে বিক্ষোভকারীদের তুলে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এরপরেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েন কেউ কেউ। কেন বিক্ষোভকারীদের তুলে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অপর্ণা সেন (Aparna Sen), ঋদ্ধি সেন (Riddhi Sen), শ্রীলেখা মিত্ররা (Shrilekha Mitra)। পাল্টা তোপ দাগেন শুভাপ্রসন্ন, অভিরূপ সরকার-সহ অনেকে।

আন্দোলনরত টেট উত্তীর্ণদের পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর শুক্রবার সকালে অপর্ণা সেন টুইটে লেখেন, “তৃণমূল সরকার অনশনকারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। অহিংস আন্দোলনে ১৪৪ ধারা জারি হল কেন? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই অগণতান্ত্রিক এবং অনৈতিক কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।“ অভিনেতা ঋদ্ধি সেন ফেসবুকে লেখেন, “এই জঘন্য কাজের মাশুল গুনতে হবে রাষ্ট্রকে।“ বামপন্থী অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের বক্তব্য, ‘‘সবাই এখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বলছে। কিন্তু এই মানুষগুলোর কথা কারা বলছে? সৌরভের মতো মানুষরা কেন এদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন না? কেন ওদের হয়ে দু’টো কথা বলছেন না। অপর্ণা সেন তো বললেন! আর কোথায় লোকজন!’’

বুদ্ধিজীবী নির্বেদ রায়ের (Nirbed Ray) মতে, যে কোনও তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের প্রতি তাঁর সহানুভূতি আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম ঘটেছে। সল্টলেকের যে চাকরিপ্রার্থীরা আনন্দলোক হাসপাতালের রাস্তার সামনে ধর্নায় বসেছিলেন। একটা হাসপাতালের রাস্তা গার্ড করার অনুমতি কোনও সরকার দিতে পারে না। যখন চাকরিপ্রার্থীরা গান্ধী মূর্তিতে সামনে বসেছিলেন, তখন সবাই সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখেছেন। সাধ্য মতো তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছন। কিন্তু এখন কিছু মানুষ ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন। এখনও পর্যন্ত ৭৫ হাজার নিয়োগ হয়েছে। এখন যাঁরা টুইট করছেন, তাঁরা কি বলতে চাইছেন সবাই অন্যায় ভাবে নিয়োগ হয়েছে? তাঁরা কি ওই ৭৫ হাজারকে অপমান করছেন? নির্বেদ রায় বলেন, “আমি অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছি, নিয়েছি। ইন্টারভিউ দেওয়া মানেই চাকরি পাওয়া নয়।“ যেহেতু রেজাল্ট বেরোয়নি, সুতরাং তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে। আর তার কারণ এঁদের মধ্যেই কেউ কেউ একের পর মামলা করেছেন। ফলে পর্ষদ রেজাল্ট বের করতে পারেনি। যাঁরা আজ বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরাই অতীতে বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। এখন বিরোধীরা এমনভাব দেখাচ্ছে যে তারা কেলেঙ্কারির সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত ছিল না। অন্যায়টা কীভাবে হয়েছে সেটাই বড় কথা। এদের মধ্যে কেউ কেউ মদত দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী দলনেত্রী থাকার সময় ২৬ দিন অনশন করেছিলেন ধর্মতলার মোড়ে। কারও কোনও বাধা সৃষ্টি হয়নি। সিঙ্গুরের আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) চুল ধরে টেনে সরিয়ে ছিল সিপিএম সরকার। সেই সিপিএম এখন ভদ্র সাজছে! অথচ বাম আমলে ৫৭ হাজার মানুষ খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন নির্বেদ রায়। জানান, এটা সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের তথ্য। একথা বুদ্ধবাবুর (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) মুখ দিয়েই বেরিয়েছিল। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ কথা বলছেন বিরোধীরা। সল্টেলেকে কিচ্ছু করা হয়নি। ১৪৪ ধারা ভাঙায় ধরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেই কেঁদে ভাসাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। এঁরা করবেন অহিংস আন্দোলন! অতো সোজা নয়। এই সব ‘ফিল্মস্টাররা’ গান্ধী হবেন! দেশের বরেণ্য নেতা যে অহিংস আন্দোলন করেছিলেন, তা করা অতো সোজা নয়। সবাই গান্ধী হতে পারে না।

চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নর (Shubhaprasanna) মতে, এঁদের এই আন্দোলেন অযৌক্তিক এবং অহেতুক। যেখানে আদালতে ১৪৪ ধারা জারি করে এদের সরে যেতে বলছে সেখানে এই রাজনৈতিক দলগুলি উস্কানির রাজনীতির করছে। অনেকেই টুইট করছেন সাময়িক জনপ্রিয়তার জন্য। কিন্তু এঁরা জানেন না এটা কয়েকদিনের। মানুষ এঁদের পাশে নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দয়াশীল, সচেতন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরও আইনের কারণে হাত-পা বাঁধা। আন্দোলনকারীদের সেটা বোঝা উচিত।

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার (Abhirup Sarkar) বলেন, যেখানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে সেখানে এইভাবে আন্দোলন হয় না। ভুল পথে লড়াই করছেন চাকরি প্রার্থীরা। এঁদের উস্কে দিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে বিরোধীরা। অনশন মানে প্রেশার ট্যাকটিস! টেট পাশ করলেই তো চাকরি হয় না। এঁরা ভালো করতেন যদি আবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সম্মানজনকভাবে চাকরি করতেন। মনে রাখবেন, ২০১৪-র চাকরিপ্রার্থীদের বিরোধিতা করছেন ২০১৭-র চাকরিপ্রার্থীরা। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যেই স্ববিরোধিতা রয়েছে।

আরও পড়ুন- বিক্ষোভ-আন্দোলনের আবর্তেই প্রাইমারি টেটে অনলাইনে আবেদন শুরু

সাহিত্যিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী (Nrishinhaprasad Bhaduri) জানান, সেলেব্রিটিরা সমালোচনা করছেন, করুন। তাঁরা এটা জানেন না যে ৩৪ বছরের বাম আমলে আন্দোলনকারীদের কী হাল হত! তখন তাদের মত নেওয়া না হলে, কীভাবে কণ্ঠরোধের চেষ্টা হয়েছে, সেটা তাঁরা জানান না। কারণ এঁরা অন্য জগতের মানুষ। যেখানে ১৪৪ ধারা রয়েছে, সেখানে কেন বসবেন? আন্দোলন অনেক ভাবেই করা যায় না। এঁরা এখন সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হতে চাইছেন। সেটা হওয়া অত সহজ নয়। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা আদালতে যান। এখন যা করার তা তো আদালত করছে। এইসব আগে জ্যোতি বসুর জমানায় হত। এখন ওই সব দিন নেই।

 

 

 

Previous articleবিক্ষোভ-আন্দোলনের আবর্তেই প্রাইমারি টেটে অনলাইনে আবেদন শুরু
Next article#জমি চোর বুদ্ধ: সিঙ্গুর নিয়ে বিগত বাম সরকারকে আক্রমণে টুইটার ট্রেডিংয়ের আর্জি দেবাংশুর